আপনার সম্পর্কে দশটি মজার/চমকপ্রদ তথ্য কী?
আপনার সম্পর্কে দশটি মজার/চমকপ্রদ তথ্য কী?
Add Comment
আমার জীবনে যা কিছু মজার বা চমকপ্রদ তথ্য সবই প্রায় তোমাদের বলে দিয়েছি। দেখি আর কিছু মনে পড়ে কিনা ?
- আমার স্বভাবটা অদ্ভুত। এমনিতে আমি ভীষণ হাসিখুশি মানুষ। অতিরিক্ত হাসির জন্য বিয়ের আগে, বিয়ের পরে অনেক বকা খেয়েছি কিন্তু চট করে মনও খারাপ হয়ে যায়। অনেক বড় বড় কথা আমি মনে লাগাইনা কিন্তু হঠাত করে সামান্য একটা ব্যাপারে আমার চোখে জল এসে যায়। কি অদ্ভুত মাইরি। লোকজন বুঝবে কি করে কোন কথায় আমার দুঃখ হবে ?
- আমি পড়াশোনায় মোটামুটি ছিলাম। সব পরীক্ষাতে ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছি ঠিকই কিন্তু কেমন যেন টায়ে টায়ে। আর দু মার্কস কম পেলেই যেমন সেকেন্ড ডিভিশন হয়ে যেতো। কোন সাবজেক্টে হাইয়েস্ট মার্কস পেলাম হয়ত কিন্তু সেকেন্ড হাইয়েস্ট মার্কস যেন আমার ঠিক ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে। এক নম্বর কম নয়তো পয়েন্টের ফারাক। কোথাও একটু শান্তি নেই…ধুউউর । একটু ভাল করে যে বেশী নাম্বার পেয়ে হাইয়েস্ট মার্কস পাবো বা ফার্স্ট হবো তার সাধ্যি নেই।
- আমি একটু ইয়ে ধরণের মেয়ে মানে মানুষের পেছনে লাগতে ভালবাসি। বন্ধুবান্ধব, স্বামী, মেয়েকে অপ্রস্তুত করতে ভাল লাগে। রাস্তায় স্বামীকে দেখিয়ে কাউকে বলে দেওয়া যে ঐ ভদ্রলোক তখন থেকে আমাকে পিছা করছে অথবা ভীড় বাসে স্বামীকে ধমক দিয়ে বলা..এই যে দাদা, তখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন কেন বলুন তো ? বাড়ীতে বৌ নেই ? নয়তো অফিস যাওয়ার সময় প্যান্টের পেছনে দুটো পালং পাতা ঝুলিয়ে দেওয়া। স্বামী প্রথম প্রথম অপ্রস্তুত হলেও পরের দিকে ব্যাপারগুলো এনজয় করতো এবং এখনও করে। বন্ধুবান্ধবকে হেসে হেসে আবার এসব গল্পও করে।
- বিয়ের ঠিক পরদিন থেকে আমি আমার স্বামীকে একটু এড়িয়ে চলতাম। মানে ভয় পেতাম। বিয়ের আগে শুনেছিলাম সে প্রচন্ড ভাল পড়াশোনায়। আমাকে চিঠিতেও লিখেছিল আমার পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতে ভাল লাগে। আর এদিকে আমার এসব আলোচনা একদমই ভাল লাগেনা। এই সিনেমা টিনেমা নিয়ে আমি খুব উৎসাহী ছিলাম। অমিতাভ রেখা কি সত্যি প্রেম করে ? মিঠুন কি করে কিশোর কুমারের বৌকে ভাগিয়ে নিল ? সঞ্জয় দত্ত মাধুরী দীক্ষিতকে কতটা ভালবাসতো ? আমার ইন্টারেস্ট এগুলোতে আর বিয়ে হলো এমন একজনের সাথে যে শুধু ট্যাক্স ফ্রি সিনেমাই দেখে এসেছে। তাই সবসময় ভয় হতো যদি পড়াশোনা বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে ফেলে ? যদি জিজ্ঞাসা করে… বলো তো অমুক দেশের রাজধানীর নাম কি ? কার্ল মার্ক্সের অমুক নীতিটা নিয়ে তোমার মতামত কি ? শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবৈষম্য নিয়ে তুমি কি আলাদাভাবে চিন্তা করেছ ? এসব নানান টেনশনে আমি ওর ধারেকাছে থাকতে চাইতাম না। অনেক পরে বুঝলাম মানুষটা স্কুলের জেনারেল নলেজের খতরনাক কোন মাস্টার নয়..নিপাট এক ভালো মানুষ।
- আমার মারধোরের হাত ছিল…অনেকদিন হলো কাউকে পিটাইনি যদিও। কিন্তু রাস্তাঘাটে, বাসে দু চারজনকে চড় থাপ্পড় মেরেছি। আমার সবচেয়ে সাহসী মার ছিল অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানায়। একটা পাঞ্জাবী লোক সেই ভীড়ের লাইনে আমার বোনের সাথে বেত্তমিজি করছিল। আমি দেখতে পেয়ে ওর দাড়ি ধরে টেনে গোল গোল ঘুরিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ব্যাটা ছিটকে দুরে পড়ে গেছিল। আরেকটা চমকপ্রদ তথ্য হলো বেশী রেগে গেলে আমি ইংলিশে কথা বলি।
- এই তথ্যটি এখানে অনেকেই জানে হয়ত বা। মা খুব মারতেন আমাকে…যাকে বলে রাম পিটুনি তাই আমি তিন তিনবার দুঃখে বাড়ী ছেড়ে চলে গেছিলাম। গেছিলাম মানে হিমালয়ের গুহায় চলে যাইনি…মাসীর বাড়ী চলে গেছিলাম আর বলেছিলাম…আমাকে তোমাদের বাড়ীর একটা কোনায় থাকতে দাও…আমি দাসীবৃত্তি করে বাকী জীবনটা এখানেই কাটিয়ে দেবো।
- আমার আর স্বামীর একবছরের কোর্টশিপ ছিল। তখন সে আমাকে রোজ একটা চিঠি লিখে পোস্ট করতো। রোওওওজ । ক্লাস থেকে এসে দেখতাম টেবিলে ওর চিঠি। আমি সপ্তাহে একটা উত্তর দিতাম। প্রতিটি বিবাহ বার্ষিকীতে আমরা এই চিঠিগুলো যত কটা পারি পড়ে ফেলি আর হাসি আর একজন আরেজনের পেছনে লাগি। এতে কি হয়েছে…আমরা সেই পিরিওডের কোন কথা এখনও ভুলিনি।
- আমরা বাইকে করে হানিমুন করতে গেছি। দুদিন পর বাইক নষ্ট হওয়ায় ট্রাকে করে একটা পুরোদিন ট্রেভেল করেছি।
- ঝগড়া হলে আমি কথা বন্ধ করে দিই। যা দরকার সেটা একটা খাতায় লিখে আমি ফ্রিজের ওপর রেখে দিই। স্বামী সেটা পড়ে আবার উত্তর লিখে রেখে যায়। ঝগড়া মিটলে আমরা দুজনে সেগুলো পড়ি আর হেসে মরি। যত বেশী রাগ তত বড় বড় করে বিচ্ছিরি হাতের লেখা আর রাগ কমতে থাকলে হাতের লেখা স্বাভাবিক হতে থাকে। হাতের লেখা দেখেই অপরপক্ষ রাগের মাত্রা বুঝে ফেলি। এই খাতাটা আমাদের কাছে একটা অমূল্য সম্পদ । ঝগড়ার সময় এই খাতাটা বের করা মানেই স্বামী বুঝে ফেলে….সেরেছে…আবার কিছুদিনের জন্য লেখালেখির ঝামেলা শুরু হলো।
- এবার তোমাদের একটা নতুন তথ্য দিচ্ছি। স্বামী যখন কালকে Quora তে ঢুকে আমার এই লেখাটা পড়বে আর দেখবে তার সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছি তখন হয়তো ঝগড়ার খাতাখানা এবার সে ই বের করে ঘসঘস করে লিখে ফ্রিজের ওপর রাখবে।
তোমাদের জ্বালায় দেখছি আমার গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।