আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন এরকম সবচেয়ে অদ্ভুত জায়গা কোনটি?
আপনি ঘুমিয়ে পড়েছেন এরকম সবচেয়ে অদ্ভুত জায়গা কোনটি?
১। একটা মেয়ের সাথে প্রেম করি। মেয়েটার নাম নীলা। সহজ সরল সুন্দর মেয়ে নীলা। একদিন নীলাকে অবাক করে দিয়ে দুপুরবেলা তার বাসায় চলে গেলাম। আমি জানি, দুপুরবেলা নীলার বাসায় কেউ থাকে না। নীলা বলল, এসেছো যখন দুপুরে খেয়ে যাও। টেবিলে নানান রকম খাবার সাজানো। আমি ইচ্ছা মতো খেলাম। খুব বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। হাঁসফাঁস লাগছিলো। দশ মিনিট ভাতঘুম দিতে পারলে ভালো লাগতো। আমি নীলাকে বললাম, দশ মিনিট বিশ্রাম নিয়েই চলে যাবো। নীলা বলল, আল্লাহর দোহাই লাগে তুমি যাও। কেউ চলে আসবে। আমি বললাম, এত ভয় পেও না। কেউ আসবে না। আমি বিছানায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এবং অনুভব করলাম কেউ একজন আমার পাছায় লাথথি দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখি নীলার বড় ভাই। শুনেছি সে অনেক রাগী। ভয়ে আমার কলিজা উড়ে গেলো।
২। ট্রেনে করে চিটাগাং যাচ্ছি। তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস। ট্রেন যথাসময়ে ছাড়েনি। এক ঘণ্টা দেরী করেছে। যাইহোক, ট্রেন চলছে তুফানের গতিতে। সিটে বসে আরাম পাচ্ছি না। খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কারন মায়ের বয়সী একজন মহিলা আমার সামনে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। উনি শেষ সময়ে ট্রেনে উঠেছেন। টিকিট পাননি। সারারাত মহিলাকে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কোনো কোনো ষ্টেশনে ট্রেন থামলে তিন জন নামলে ত্রিশ জন উঠে। ট্রেনে গজব অবস্থা। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। রাত দুটায় আমি মহিলাকে বললাম, আপনি অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, আমার সিটে বসুন। মহিলা বসলেন। আমি ছেলে মানুষ দাঁড়িয়ে চলে যাবো। ব্যাপার না। ট্রেনে প্রচুর ভিড়। আরাম করে কোথাও দাড়াতে পারছি না। এদিকে পেলেও ঘুম। ওরে ঘুম। কিছুতেই তাকিয়ে থাকতে পারছি না। ভিড়ের কারনে আমি আশ্রয় নিয়েছি ট্রেনের ইঞ্জিন ঘরে। বিকট শব্দ। আর অনেক গরম। সেই গরম আর বিকট শব্দে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
৩। অফিসের কাজে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছি হেলিকাপ্টারে করে। আমার সাথে বস আছেন। সব অফিসেই বসকে সবাই ভয় পায়। সমীহ করে। হেলিকাপ্টার আকাশে উড়তেই হঠাত আমার ঘুম এলো। আমি কিছুতেই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে পারছি না। পাশে বস বসা। এদিকে ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসছে। অথচ বাসায় ঘুম আসে না। বলতে গেলে প্রায় সারারাত জেগেই থাকি। সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়লাম হেলিকাপ্টারে। ২০/২৫ মিনিটের ঘুম। ঘুম ভাঙ্গল বসের ডাকে। দেখি বসের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছি আমার মুখের লালা কিছুটা বসের কোটে লেগে আছে। অথচ আমার চিরকালের ঘুমের সমস্যা। বিছানায় শুয়ে ছটফট করি ঘুম আসে না। ১০০ থেকে ১ পর্যন্ত গুনি তবু ঘুম আসে না। মৃত্যু যেমন বলে কয়ে আসে না। ঘুমও বলে কয়ে আসে না।
৪। গাজীপুরের শিমুলতলী এলাকাতে এক বাসায় দাওয়াতে গিয়েছি। ঠিক দাওয়াত নয়। আমার এক বন্ধু সৌদি থাকে। ফোনে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। বন্ধু ,মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইছে। আমি খোজ খবর নিতে এসেছি। সুন্দর গ্রাম। বাড়ির পিছনে বিশাল ধানক্ষেত। কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। ধানগাছ গুলো বৃষ্টির পানি পেয়ে সতেজ হয়ে উঠেছে। যাইহোক, মেয়েটা এসে বলল, বৃষ্টির জন্য রান্না করতে দেরী হয়ে গেছে। আপনাকে এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। আমি বললাম, সমস্যা নেই। আচ্ছা, কি রান্না হচ্ছে? মেয়েটা বলল, দেশী মূরগীর ঝোল, গরুর মাংস আর পোলাউ। আমি বললাম, গ্রেট। মেয়েটা আমাকে চা দিলো। আমি চা খেয়ে বিছানায় বসলাম। এবং কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম। সেই ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যায়। মেয়েটা বলল, আপনি আরাম করে ঘুমাচ্ছিলেন, দেখে মায়া লাগলো। তাই ডাক দেইনি।
৫। অফিসে মিটিং। মিটিংটা গুরুত্বপূর্ন ছিলো। দুজন বিদেশী লোক ছিলেন। আমরা বিদেশীর সাথে বুদ্ধিতে না পারতে পারি, তাই নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে একজন প্রফেসরকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলাম। মিটিং এ আমাদের বস উপস্থিত ছিলেন। বাইরে প্রচুর গরম। কিন্তু কনফারেন্স রুমে ঠান্ডা। দুটা এসি চলছে। হঠাত আমার ঘুম পেলো। প্রচুর ঘুম। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না। অথচ একটু আগে কফি খেয়েছি। ঘুমের চোটে আমি গাঁড় হেলিয়ে বারবার পড়ে যাচ্ছি। খুব চেষ্টা করছি জেগে থাকতে। পারলাম না। ঘুম জয়ী হলো। আমি ঘুমিয়ে গেলাম। মিটিং শেষ তখন আমার ঘুম ভাঙ্গল।
আমার আরো কিছু ঘুমের ঘটনা আছে। সেগুলো অন্য কোনো সময়ে বলব।