আপনি দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

    আপনি দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

    Doctor Asked on July 9, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      আমার বন্ধু শাহেদ জামাল চায় সিলেটে তার একটা বাড়ি থাকুক। সে একটা টিলা কিনবে। চারপাশে অনেক গাছপালা থাকবে। টিলার ওপর কাঠ দিয়ে একটা কাঠের বাড়ি বানাবে। সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ি। একদম নিরিবিলি। সকালে তার ঘুম ভাঙবে পাখির ডাকে। শহর থেকে অনেক দূরে। সেই বাড়িতে একটা বড় লাইব্রেরী থাকবে। ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট সংযোগ তো অবশ্যই। কেই তাকে বিরক্ত করবে না। সে বই পড়বে আর মন ভরে লিখবে। চা খাবে। দুধ চা। লাইফ ইজ বিউটিফুল। শাহেদ টিলা কেনার জন্য খোঁজ খবর শুরু করেছে। একটা টিলার দাম এক কোটি টাকা। শাহেদ বলেছে ব্যাপার না। আমি জানি শাহেদ তার ইচ্ছে ঠিকই পূরণ করবে।

      আমার বন্ধু রাব্বি চায়, শহরের সবাই গাড়ি বাদ দিয়ে সাইকেল চালাবে। তাতে দুষন কমবে। বন্ধু রাব্বি নিজেও সাইকেল চালায়। সে সাইকেল চালিয়ে শহরের বাইরে চলে যায়। তার একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সে মানুষকে বলে তোমরা সবাই সাইকেল চালাও। শরীর ভালো থাকবে। মন ভালো থাকবে। তার ইচ্ছে সে দেশের সব স্কুলে যাবে। সাইকেল চালানোর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলবে। রাব্বির কাছ থেকেই শুনেছি আমস্টারডাম শহরে বেশির ভাগ মানুষ সাইকেল চালায়। প্রতিটি রাস্তায় সাইকেল। ছাত্র শিক্ষক, চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী, ছেলে বুড়ো সকলেই সাইকেল চালায়। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একটা সাইকেল কিনে বন্ধু রাব্বির সাথে ঘুরে বেড়াই। অবশ্য একসময় আমার সাইকেল ছিলো। সারা ঢাকা শহর আমি সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি।

      আমার বন্ধু মুনা। মুনা থাকে হালদা নদীর কাছে। তার ইচ্ছে সে সুন্দর সুন্দর জামার ডিজাইন করবে। সেই সাথে সে একজন বিউটিশিয়ান হবে। তার ডিজাইন করা জামা পড়বে দেশ বিদেশের আধুনিক নারী পুরুষ। মুনার ধারণা আগামী দশ বছরের মধ্যে তার নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। মুনা আমাকে একটা পাঞ্জাবি দিয়েছে। পাঞ্জাবীর ডিজাইন সে নিজেই করেছে। আমি সাধারণ পাঞ্জাবী পরি না। সেদিন মুনার বাসায় গেলাম। তার ডিজাইন করা পাঞ্জাবী পরে। মুনা ভীষণ খুশি হয়েছে। বলেছে সে আরেকটা পাঞ্জাবী দিবে। কেউ আগ্রহ নিয়ে কিছু দিলে আমি মানা করি না। পাঞ্জাবীতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। এরচেয়ে মুনার হাতের রান্না আমার বেশি ভালো লাগে। আমি মনে প্রানে চাই মুনার স্বপ্নটা সত্যি হোক। তাহলে আমার খুশি লাগবে। মুনা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক।

      আমার ছোট মামা। বয়সে আমার চেয়ে ৫ বছরের বড়। দেশে তার বিজনেস আছে। তার গাড়ি বাড়ি জমি, ফ্লাট সবই আছে। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। মামা অলরেডি ১৩ টা দেশ ভ্রমণ করেছেন। মামার ইচ্ছে সে তার পরিবার নিয়ে এই দেশ থেকে চলে যাবে। মামা বলেন, এই দেশে ভদ্র মানুষ থাকতে পারে না। এই দেশ ইতর লোকদের দেশ। সুন্দর ভাবে বেচে থাকতে হলে এই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। মামা আপ্রান চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কানাডা চলে যাওয়ার জন্য। কানাডা না হলে অস্ট্রেলিয়া। নিদেনপক্ষে আমেরিকা। আমি জানি মামা, অবশ্যই তার টার্গেট পূরন করবেন। নিজ জন্মভূমি ছেড়ে আরেক দেশে গিয়ে কি যে লাভ আমি বুঝি না। আমার ভাই পরিচিত মানুষ, পরিচিত জায়গা ছাড়া ভালো লাগে না।

      আমার নিজের কথা বলি, আমি ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ। কোনো উচ্চাশা আমার নেই। দিন শেষে স্ত্রী আর কন্যা নিয়ে একসাথে খেতে বসা, গল্প করাতেই আমার আনন্দ। লন্ডন আমেরিকা আমার পোষাবে না। গাড়ি বাড়ি জমি দিয়ে আমি কি করবো? ছোট্ট একটা জীবনে মানুষ অনেক কিছুর প্রয়োজন নেই। লোভ জিনিসটা খুব খারাপ। মানুষ আর কত বছর বাচে? ৫০ বছরের পর থেকে দেখা দেয় নানান রকম অসুখ বিসুখ। ডাক্তার হাসপাতাল করতে হয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এজন্য আমি মনে কোনো উচ্চাশা রাখি না। যতদিন বেচে থাকবো যেন সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকতে পারি আনন্দ নিয়ে। সম্পদ দিয়ে কি আর হবে? সম্পদ মানে অশান্তি, ঝগড়াঝাটি। এক প্লেট ভাত, সাথে লাল শাক ভাজি, ডাল আর একটুকরো মাছ হলেই আমি খুশি। আমি অল্পতেই খুশি। ব্যস।

      Professor Answered on July 9, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.