আপনি নিজে মেনে চলেন এমন কিছু উপদেশ দেবেন কি?
আপনি নিজে মেনে চলেন এমন কিছু উপদেশ দেবেন কি?
জানতে চেয়েছেন,
এস. এ. সৌরভ।
অন্যকে উপদেশ বা পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে পারতপক্ষে, বিরত রাখার চেষ্টা করি।
যেহেতু, আমার কাছ থেকে উত্তর আশা করা হয়েছে, সেহেতু, যেসব বিষয় নিজে মেনে চলার চেষ্টা করি, সেসব সম্পর্কে কিছু, কিছু, বলতে পারবো,
১। কথা, বলি কম, শুনি বেশী।
কেউ কথা বলতে শুরু করলে, তিনি শেষ না করা পর্যন্ত, শুনতেই থাকি,
২। কোনো বিষয়ে ভালো করে না জেনে, মন্তব্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি,
৩। কোনো বিষয়ে মতানৈক্যের ক্ষেত্রে আলোচনায় আগ্রহী থাকি, কিন্তু, যেখানে সেটা তর্কের মাত্রায় পৌঁছে যায়, সেখানে যথাসম্ভব দ্রুত, ইতি টানার চেষ্টা করি,
যদি, বুঝে যাই কুতর্ককারীর সামনে পড়ে গেছি, কালবিলম্ব না করে, তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করি।
কারণ, আমি জানি, তিনি তর্কে জিততে চাইছেন না, চাইছেন, তাঁর কাছে আমার আত্মসমর্পণ।
৪। যদি, আত্মপ্রচারে সততই বিভোর হয়ে থাকেন, এমন কারো সাথে দেখা হয়ে যায়, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর প্রচার শুনি এবং তাঁর উল্লাস দেখে, আমি উল্লসিত বোধ করি
৫। ভালো, মন্দের আলোচনায় উৎসাহী থাকি, কিন্তু, যখন সেটা আলোচনা থেকে কোনো ব্যক্তিবিশেষের সমালোচনার দিকে এগোয়, তখন কোনো কাজের বাহানা দেখিয়ে কেটে পড়ি।
৬। ভুল করে যখন কেউ আমার ফোনে ফোন করে, বিব্রত বোধ করেন, সহজ করেই বলি যে, এরকম আমার ও হতেই পারে।
চেষ্টা করি, তাঁর বিব্রতভাবটা কাটিয়ে দিতে।
৭। নিজের সন্তানের উপর, কোনোভাবেই চাপ সৃষ্টি করি না।
সন্তানের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে একদমই উৎসাহ বোধ করি না।
সন্তানের চোখের সামনে, স্বপ্নের জাল বুনি না, জীবনে এই হতেই হবে, ওই হতেই হবে।
শুধু বলে দিই, জীবনে খুব বড় কিছু না হলেও, একজন ভালো মানুষ হওয়া খুবই দরকার।
বলে দিই, কোনটা ভালো, আর কোনটা খারাপ।
সাথে, এটাও বলে দিই, যদি ভালো ছেড়ে, খারাপ কে জীবনে জায়গা দেয়া হয়, তাহলে, যখন সেটা মনে হবে যে ভুল হয়ে গেছে, তখন আর চাইলেও সে ভুল সংশোধন করার সুযোগ থাকবে না, সারাজীবনই এই ভুল কে বয়ে বেড়াতে হবে।
আর একটা ব্যাপার আমি একদমই লাইক করি না, সেটা হচ্ছে, সন্তানের সাথে শর্ত আরোপ করা,
“যদি, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারো, ওটা দেবো,”
“যদি এটা করতে পারো, তবে তোমার জন্য ওটা করবো,”
এটা একদমই আমার যে ভালো লাগেই না।
সন্তান কিছু চাইলে, সামর্থ্যের মাঝে হলে দিয়ে দিই, যদি সম্ভব না হয়, বুঝিয়ে বলি।
বুঝিয়ে বললে যাতে বুঝে, মন খারাপ না করে, আমার অক্ষমতাকে শেয়ার করে, সে শিক্ষা, আমি ওকে শৈশব থেকেই বুঝিয়েছি, শিখিয়েছি,
কাজেই, কোনো সমস্যাই হয় না।
৮। স্ত্রী কে কথাবার্তায় ও আহত করি না, মতানৈক্য হলে, বুঝানোর চেষ্টা করি। কারণ, আমার কাছে ভালো থাকবে, নিরাপদ থাকবে, শান্তিতে থাকবে, এই বিশ্বাস নিয়েই তো সে এসেছিলো। সেই বিশ্বাস কে, কিছুতেই, কোনো শর্তেই টুটতে দিই না।
৯। কেউ যদি আমাকে কটু কথা বলেন, অপমান করেন, সেটা নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিই না, শুধু বলে দিই, যা বলা হলো আমাকে, সেটা বলার কী একান্ত প্রয়োজন ছিলো।
১০। পোষাক, আশাক, রুপ দেখে কাউকে মূল্যায়ণ করি না।
১১। শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে ও কাউকে মূল্যায়ণ করি না।
কারণ, উচ্চশিক্ষিত হয়ে ও চুড়ান্ত নোংরা মানসিকতার লোককে দেখেছি, আবার, একদমই পুঁথিগত শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও, মানসিক উৎকর্ষতার শীর্ষ বিন্দুতে অবস্থান করেন, এমন লোক ও দেখেছি।
জীবনে, বারবারই তাঁদের সাথে আমার দেখা হয়েছে, উন্মীলিত হয়েছে, আমার জ্ঞানচক্ষু।
আর,
১২। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি।
সম্পর্কটি, ঘনিষ্ট হবে কী না, সেটা আমি ঠিক করি, কিন্তু, সম্পর্কে তিক্ততা যাতে কোনোভাবেই সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সজাগ থাকি।
কারণ, আমি দেখেছি, তিক্ত সম্পর্ক আমাকে ভীষন,
ভীষনভাবেই ভীত করে,
অশান্ত করে তুলে।
ধন্যবাদ।