বিয়ের সময় বর ও কনেকে চাকচিক্যময় পোষাকে সাজানো ও তাদের গায়ে হলুদ মাখানো ইসলামী শরিয়তে সম্পূর্ণ জায়েজ। ইসলামে হলুদ একটি পছন্দনীয় রঙ। বিয়ের সময় গায়ে হলুদ মাখানো, হলুদ রঙের জামা পরা এবং সুগন্ধী দেয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। একদা হযরত আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) রাসুল (সঃ) এর দরবারে এলেন। তখনো তার গায়ে হলুদের চিহ্ন ছিল। রাসুল (সঃ) তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন তিনি এক আনসার মহিলাকে বিয়ে করেছেন। রাসুল (সঃ) এটা অপছন্দ করেন নি।
আমরা ছোটবেলায় এরকম গায়ে হলুদ দেখেছি। বিয়ের আগের দিন বিকালে আত্মীয় এবং প্রতিবেশি মহিলারা হলুদ বাটতেন এবং বিভিন্ন রকমের গীত গাইতেন। সেইসব গীতে বরের নাম হত “মনু মিয়া” আর কনের নাম হত “মলকা বানু”। আমরা ছোটরা একজন আরেকজনের গায়ে হলুদ মেখে মজা করতাম। বিয়ের দিন দুপুরে গোসলের আগে বরকে মাহরাম মহিলারা (মা, দাদী, নানী, ফুফু, খালা প্রমুখ) গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিতেন, এরপর পুরুষরা তাকে গোসল করাতেন। আর কনেকে হলুদ লাগানো এবং গোসল করানো সব মহিলারাই করতেন। তখন এটাই ছিল গায়ে হলুদ।
বিয়ের সময় দফ (বাংলায় বলা হয় খঞ্ছনী/তম্বুরা, ইংরেজীতে বলা হয় tambourine। এটা একধরণের একমুখওয়ালা বাদ্যযন্ত্র) বাজানো এবং নির্দোষ গান-গীত গাওয়া “অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের” জন্য যায়েজ। শুধু যায়েজ বললে কম বলা হবে, এটা সুন্নতও বলা যেতে পারে। অনেক বিশুদ্ধ হাদীসে এর প্রমান রয়েছে। রসুল (সঃ) বলেছেন, “তোমরা বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর, এর অনুষ্ঠান মসজিদে সম্পন্ন কর এবং এসময় দফ বাজাও।” অপর এক বর্ণনায় এসেছে, এক বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে রাসুল (সঃ) কে জানানো হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা সে বিয়েতে কোন মেয়ে পাঠাও নি, যে বাদ্য বাজাবে আর গান গাইবে?” উল্লেখ্য বিয়ের কথা সমাজে প্রচার করা শুদ্ধ বিয়ের অন্যতম শর্ত। গোপন বিয়ে শুদ্ধ হয় না, যদিও শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষী উপস্থিত থাকে। তাই বিয়ের প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদে বিয়ে পড়ানো, দফ বাজানো এবং নির্দোষ গান গাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে দফ বাজানো ও গান গাওয়া শুধু নাবালিকা মেয়েদের জন্য যায়েজ।
কিন্তু বর্তমানে যেভাবে গায়ে হলুদ করা হয়, সেটা সম্পূর্ণ নাযায়েজ। মোমবাতি জালানো, গাইরে মাহরামরা গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়া, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যুবতীদের সাজগোজ় করে সৌন্দর্য প্রদর্শন, নিষিদ্ধ বাদ্য বাজানো, অশ্লীল গান এসবই হারাম।
*সূত্রঃ পরিবার ও পারিবারিক জীবন- মাওলানা আবদুর রহীম