ইসলাম এর দৃষ্টি তে ক্রীতদাসী এর কি ব্যখ্যা?
ইসলাম এর দৃষ্টি তে ক্রীতদাসী এর কি ব্যখ্যা?
আয়াতসূত্র-১: কেবল মুনিবের জন্য নিজ
ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্কের অনুমোদন
তবে তাদের স্ত্রী ও ডান হাতের
মালিকানাভুক্তদের (দাসীদের) ক্ষেত্রে
[যৌনাঙ্গকে] সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
[২৩:৬]
নোট: এই অনুমোদন নি:শর্ত নয়, পুরো
পোস্টটি পড়ার পর এই অনুমোদনের ক্ষেত্র ও
যৌক্তিকতা বুঝা যাবে।
আয়াতসূত্র-২: বিবাহিত যুদ্ধবন্দিনীদের পূর্বেকার
বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ধরা হবে।
এবং [তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ] বিবাহিত নারী তারা
ব্যতিত যারা তোমাদের ডান হাতের মালিকাধীন।
[৪:২৪, প্রাসঙ্গিক অংশ]
নোট: স্বামী ছাড়া যেসব বিবাহিত নারী
যুদ্ধবন্দিনী হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজন্য,
স্বামীসহ ধৃত হলে বিবাহ অক্ষুন্ন থাকে, দ্রষ্টব্য:
সূত্র-৯]
আয়াতসূত্র-৩: অন্যের ক্রীতদাসিকে মুনিবের
অনুমতিক্রমে বিবাহের অনুমোদন
আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন
মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে
তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম
ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ
তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত
রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব,
তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে
কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান
কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-
ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না।
[প্রাসঙ্গিক অংশ, ৪:২৫]
আয়াতসূত্র-৪: দাসীদের বিবাহ প্রদানের নির্দেশ
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ
সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের
মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। [প্রাসঙ্গিক অংশ,
২৪:৩২]
আয়াতসূত্র-৫: দাসীদের পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত
করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা
তোমাদের দাসীরা নিজেদের পবিত্রতা রক্ষা
করতে চাইলে তোমরা পার্থিব জীবনের
সম্পদের লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কারো
না। [প্রাসঙ্গিক অংশ, ২৪:৩৩]
তিন.
সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস, ফাতাওয়া ও আইন
সূত্র-১ (হাদিস)
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা.) আওতাসে ধৃত
যুদ্ধবন্দিদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত এরশাদ বর্ণনা করেন:
গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না যতক্ষণ না
সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী
নয় তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ না তার একটি
ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়। [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস
নং ২১৫৭ ]
সূত্র-২ (হাদিস)
রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি হতে বর্ণিত: আমি
কি তোমাদেরকে বলবো না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হুনাইনের দিনে যা বলতে
শুনেছি: “আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির
জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে পানি দেওয়া (অর্থাৎ
কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং
আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ
নয় কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা
যতক্ষণ না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সে গর্ভবতী
নয়। এবং আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাসী ব্যক্তির
জন্য বৈধ নয় বণ্টন হবার আগে গণিমতের কোন
মাল বিক্রয় করা।” [ সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং
২১৫৮ ]
সূত্র-৩ (হাদিস)
হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন: উমর ইবনুল খাত্তাব
(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ
প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার
ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ
গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি
সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি
আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে
(নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার
সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর
কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ
(রা.)এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ(রা.)
বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর
অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না,
উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে
লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে
হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল
করলেন। খালিদ(রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে
অপমানিত করতে চাননি।” [সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল
কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫ ]
লক্ষ্য করুন:
৩.৩.১ খলিফা বা খলিফা হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি
কর্তৃক বণ্টন হবার আগে যুদ্ধবন্দিনীর সাথে
সহবাস করা যে অবৈধ সেটা সুবিদিত ছিল।
৩.৩.২ উক্ত কর্মটিকে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা
হয়েছে। কেননা, উমর(রা.) এক্ষেত্রে শাস্তি
হিসেবে ব্যভিচারের হদ নির্ধারণ করেছেন।
সূত্র-৪ (হাদিস)
আমর বিন সুহাই’ব তার পিতার বরাতে তার দাদা হতে
বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন: যখন তোমাদের কেউ তার
ক্রীতদাসের সাথে তার ক্রীতদাসির বিবাহ দেয়,
তার (ক্রীতদাসির) গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো
তার (মুনিবের) জন্য উচিত নয়। [ সূত্র: সুনান আবু দাউদ,
হাদিস নং ৪১১৩]
সূত্র-৫ (ফাতাওয়া)
মালিক (রহ.) বলেন যে, যদি কোন পুরুষ তার
মালিকাধিন একজন ক্রীতদাসির সাথে যৌন সম্পর্কে
লিপ্ত থাকে, অতঃপর সে তার (ক্রীতদাসির)
বোনের সাথেও সম্পর্কে জড়িত হতে চায়, উক্ত
বোন পুরুষটির জন্য হালাল নয় যতক্ষণ না
(প্রথমোক্ত) ক্রীতদাসির সাথে তার সহবাস হারাম
হয়ে যায়- বিবাহ, মুক্তকরণ, কিতাবা অথবা অনুরূপ কোন
ঘটনার দ্বারা, যেমন যদি সে যদি তাকে (অর্থাৎ
প্রথমোক্ত ক্রীতদাসিকে) তার ক্রীতদাসের
সাথে বা অন্য কারো সাথে বিবাহ প্রদান করে।
[ সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: বুক ২৮, হাদিস নং- ১১২৯]
সূত্র-৬ (হাদিস/ফাতাওয়া)
ইয়াহইয়া মালিক হতে তিনি ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ হতে
এবং তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হতে বলেন, “কোন
নারীকে তার ফুপু বা খালার সাথে একই সাথে
বিবাহাধীনে রাখা নিষিদ্ধ এবং অন্য পুরুষের সন্তান
গর্ভে ধারণকারি কোন ক্রীতদাসির সাথে সহবাস
করা নিষিদ্ধ। [ সূত্র: মুয়াত্তা মালিক: অধ্যায় ২৮, হাদিস
নং-১১১৫ ]
সূত্র-৭ (ফাতাওয়া)
মালিক (রহ.) বলেন, “মুনিবের জন্য মালিকানা বলে
খ্রিস্টান ও ইহুদি ক্রীতদাসি হালাল, কিন্তু মালিকানা বলে
মাজুসি (magian) ক্রীতদাসির সাথে সহবাস হালাল
নয়।” [ মুয়াত্তা মালিক, ইংরেজি অনুবাদের বুক নং ২৮,
হাদিস নং ৩৮]
সূত্র-৮ (হাদিস)
নুমান ইবনে বশির হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন যে
তার স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করেছিল: যদি
সে (অর্থাৎ স্ত্রী) তাকে (অর্থাৎ
ক্রীতদাসিকে) তার (অর্থাৎ তার স্বামীর) জন্য
হালাল করে থাকে, তাকে (পুরুষটিকে) একশ
বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি সে তাকে তার জন্য
হালাল না করে থাকে, আমি তাকে রজম
(প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব। [সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং
৪৪৫৯]
সূত্র-৯ (আইন গ্রন্থ)
“When the army takes a woman captive followed
by her husband who is also taken captive sooner
or later and either the woman does not have
menses during that period or has had upto three
menses but she is not taken out of the Territory
of War before her husband is taken, their
marriage shall continue. Whosoever of the two is
taken captive and brought to the Territory of
Islam before the other, their marriage shall cease
to exist”
[সূত্র:Chapter II :The Army’s Treatment of the
Disbelievers, passage 45, The Shorter Book on
Muslim International Law, translated by
Mahmood Ahmad Ghazi, মূল: কিতাবুস সিয়ার আস
সাগির, লেখক: মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী ]
সূত্র-১০ (হাদিস)
আবু মুসা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামম বলেন, “যার কোন ক্রীতদাসি আছে এবং
সে তাকে শিক্ষাদীক্ষা দেয়, তার সাথে সদ্ব্যবহার
করে, অতঃপর তাকে মুক্তি প্রদান করে বিবাহ করে,
সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে।” [সূত্র: বুখারি, অধ্যায় ৪৬,
হাদিস নং-৭২০]
সূত্র-১১ (হাদিস)
ইয়াহইয়া মালিক হতে বর্ণনা করেন, তিনি শুনেছেন
যে উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) তাঁর ছেলেকে একজন
ক্রীতদাসি দান করে বলেন, “তাকে স্পর্শ করো
না, যেহেতু আমি তাকে উন্মোচণ
করেছি।” [সূত্র: মুয়াত্তা মালিক, অধ্যায় ২৮, হাদিস নং
১১৩০]
সূত্র-১২
উমর (রা.) বলেন, “তার (ক্রীতদাসির) সন্তান তাকে
মুক্ত করে যদিও তা মৃত হয়” [সূত্র: মুসান্নাফ ইবনে
আবি শাইবা, হাদিস নং ২১৮৯৪]
সূত্র-১৩
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন
কোন ব্যক্তির ক্রীতদাসি তার সন্তান ধারণ করে,
সে তার(মুনিবের) মৃত্যুর পর স্বাধীন হয়ে
যায়।” [সূত্র: তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]
বিস্তারিত জানতে এই লিংকে প্রবেশ করুন