ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মৃত সাগরের সৃষ্টির রহস্য কি?

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মৃত সাগরের সৃষ্টির রহস্য কি?

Vice Professor Asked on September 22, 2015 in ইসলাম ধর্ম.
Add Comment
1 Answer(s)

    সেটা অনেকদিন আগের কথা। বর্তমান ইরাকের এক বিশাল রাজ্য ছিল ব্যবিলন। আর এ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দেবতার নগরী। এ রাজ্যের রাজা ছিলেন সারগন। সে খুব আত্মগর্বী, মতাদর্পী ছিল। সে আল্লাহকে ভুলে নিজেকে খোদা হিসেবে ঘোষণা দিল। আর তার রাজ্যের প্রজারা সারগণের মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করতে লাগল। এই সময়েই এক ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। বড় হয়ে তিনি এই রাজ্যের প্রত্যেককে এই জঘন্যতম কাজ থেকে বিরত থাকতে বললেন। এমনকি রাজা সারগনকেও তিনি বুঝাতে লাগলেন। কিন্তু রাজা এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে ফেলার নির্দেশ দেয়। আর ইব্রাহীমকে আগুনে ফেলার সাথে সাথে আল্লাহুর হুকুমে আগুন নাতিশীতোঞ্চ হয়ে যায়। আর এ বিষ্ময়কর দৃশ্য দেখে তাঁর বয়সী কয়েকজন তরুণ তাঁর অনুসারী হয়ে যায়। এতে রাজা আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে তাঁর অনুসারীসহ ইব্রাহীম (আঃ) কে বেঁধে রাখে উত্তপ্ত মরুভূমিতে। কিন্তু আল্লাহ এবারও তাদের মাথার উপর একখন্ড মেঘ দাঁড় করে দেন। আর তাদের সামনের বালুকণাগুলোকে ক্ষুধার অন্নে পরিণত করে দেন। এ দৃশ্য দেখে রাজা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাদেরকে রাজ্য থেকে বের করে দেয়। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা এ রাজ্য ত্যাগ করে ফিনিশিয়া রাজ্যে আগমন করে। সেখানে ‘সারা’ নামের রাজকন্যা তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করে। আর এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে মেয়েসহ ইব্রাহীম (আঃ) কে রাজ্য থেকে বের করে দেন। ইব্রাহীম (আঃ) সবাইকে নিয়ে জর্ডান নদীর পশ্চিম পাড়ে ‘হেবরন’ নামের এক ক্ষুদ্র পল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুসারীদের মধ্যে তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে লুত (আঃ) ছিলেন। বলাবাহুল্য জর্ডান নদীর পূর্বদিকে বর্তমান যেখানে মৃত সাগর অবস্থিত সেখানে বেশ দূরে দূরে অবস্থিত ছিল পাঁচটি সু-সমৃদ্ধ জনপদ। তারা হচ্ছে- আমোরা, আদমাহ, সেবাইম, সো-আর এবং সাদুম। এই সাদুম জনপদটি ছিল সবার দক্ষিণে। ইব্রাহীম (আঃ) লুত (আঃ) কে এই সাদুম জনপদে পাঠালেন। কেননা এই জনপদের অধিবাসীরা সীমালঙ্ঘন, নির্যাতন এমনকি বিভিন্ন জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত থাকতো। তাই তাদেরকে ন্যায় পথে ফিরিয়ে আনবার জন্য ইব্রাহীম (আঃ) এর নির্দেশে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সাদুমবাসীকে পাপের শাস্তি ও পূণ্যের পুরস্কার সম্পর্কে বিভিন্নভাবে বুঝাতে লাগলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারা উল্টো লুত (আঃ) কে অপমান ও উপহাস করতে লাগলো। এমনকি দৈহিক নির্যাতন চালাতে লাগলো। এতকিছু সহ্য করেও তিনি আল্লাহর রাস্তায় অটল। আর এদিকে তারা আইন করলো বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন নিষেধ। হযরত লুত (আঃ) যেহেতু একজন নবী সেহেতু তাঁর কাছে অতিথি আসাটাই স্বাভাবিক। তাই কোন অতিথি আসলে অতি গোপনে তাঁর সাথে সাক্ষাত করতো। কিন্তু গোপনে সাক্ষাত করতে আসলেও তারা ধরা পড়ে যেতো। কারণ লুত (আঃ) এর স্ত্রী লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিবেশীদের কানে পৌঁছিয়ে দিত। লুত (আঃ) প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ঠিকই স্ত্রীর চালাকি বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি স্ত্রীকে বাইরে যেতে নিষেধ করেন। কিন্তু নিষেধ করলে কি হবে? তাঁর স্ত্রী ছলাকলায় কম নন। সে লবন নেই বলে প্রায় সময় লবণ ধার আনার কথা বলে লুত (আঃ) কে ফাঁকি দিয়ে প্রতিবেশীকে খবর পৌঁছিয়ে দিত। আর খবর পেয়ে তারা অতিথিদের উপর চড়াও হত আর তাদের উপর দৈহিক নির্যাতন চালাতো। আল্লাহ তা’আলা এতে নারাজ হয়ে গেলেন। তাই তিনি কয়েকজন ফেরেশতাকে পাঠালেন। যারা পরমা সুন্দরী তরুনীর বেশে সাদুমে আসলো। তারা যথাসময়ে লুত (আঃ) এর কাছে আগমন করে সব ঘটনা খুলে বলে। আর এদিকে লুত (আঃ)এর স্ত্রী সারা যথারীতি লবণ ধার এর কথা বলে পাশের প্রতিবেশীদেরকে গোপনে খবর দিল। খবর শুনে তারা ছুটে এসে লুত (আঃ) কে বললো অতিথিদেরকে তাদের হাতে তুলে দিতে। কিন্তু এতে তিনি বাধা দিলেও প্রতিবেশী যুবকরা পরমী সুন্দরীদের মোহে মুগ্ধ হয়ে তাঁদের উপর চড়াও হলো। আর তখনই ফেরেশতাগণ তাঁদের আসল রূপ ধারণ করলো। আর দেখতে দেখতে পাঁচটি নগরীকে তুলো ধোলাই করার মতো মর্ত্য পাতাল এক করতে লাগলেন। এর পূর্বে ফেরেশতাগণ লুত (আঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে সাদুম নগরী পরিত্যাগ করতে বললেন। আর সাবধান করে দিয়েছিল কেউ যেন পিছন ফিরে না তাকায়। তারপর পাঁচ নগরী বিশিষ্ট বিশাল অঞ্চলটা একটা বিশাল হৃদে পরিণত হলো। একই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি ধারার মতো আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করলেন আল্লাহ তা’আলা। দেখতে দেখতে সেই বিশাল হৃদটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। আল্লাহর হুকুমে লুত (আঃ) ও তাঁর অনুসারীরা বেঁচে গেলেও লুত (আঃ) এর স্ত্রী কি রা পেয়েছিল? না, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’আলা তাকে বিরাট একটা লবণের স্তুপে পরিণত করলেন এবং তাকে আবহমানকালের মতো সেই হৃদের মাঝখানে রেখেছিলেন। আর সেই কারণেই এই হৃদের পানি এত লোনা যে, তা সাগরের লবনাক্ত পানিকেও হার মানায়।

    পুনশ্চঃ লূত নবীর ঐ জনপদের লোকেরা সমকামী ছিল।। কোরআনে তাদের ঘৃণ্য অভিশপ্ত বলে ধ্বংস হয়ে যাবার ঘটনাটি এসেছে, যার পরিণতি মৃত সাগর।। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঠিক একই ভাবে ফেরআউনের উদাহরণ দিয়েছেন যে তার লাশকে তিনি হাজার হাজার বছর ধরে দৃশ্যমান রাখবেন (মমি আকার যেটা দেখি) মানুষকে তাদের সীমালঙ্ঘনের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দিতে।।

    Professor Answered on September 22, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.