এমন একটা উপদেশ দেবেন কি, যা জীবন বদলে দিতে পারে?
এমন একটা উপদেশ দেবেন কি, যা জীবন বদলে দিতে পারে?
সম্মানিত ভাই বলা হয়ে থাকে যে, “পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হল অন্যকে উপদেশ দেওয়া”। তাহলে আপনার জন্য এ সহজ কাজটুকু কেন করব না? আপনি তো একটা উপদেশই চেয়েছেন যা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। জীবন বদলে দিতে পারে এমন একটি উপদেশ হলঃ-
“নিজেকে নিয়ে ভাবুন”।
প্রিয় ভাই আপনি হয়তোবা ভাবছেন এটাতো কপি করা উপদেশ। হ্যা ঠিক তাই, কাউকে উপদেশ দেওয়ার মত যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারিনি, তাই অন্যের কাছ থেকে শুনা জীবনের সবচেয়ে সেরা উপদেশটা (যা আমি মেনে চলতে চেষ্টা করি) আপনার সাথে শেয়ার করলাম। বলতে পারেন, না হয় বুঝলাম নিজেকে নিয়ে ভাবব। কিন্তু প্রশ্ন হল, কি ভাবব?
👉 চলুন সেটা জেনে নিই, এই উপদেশের জনক ড.খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রঃ) এর আলোচনার আলোকে……
👉 ড.খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব বলেনঃ-
“আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় যেটা বুঝি সেটা হল যে, আমরা ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া, পরের দোষ ধরা, পরের ভুল প্রমান করার জন্য প্রশ্ন করা এগুলোই বেশি করি। কথাটা হল ভাই, এই যে দুনিয়াতে আমরা বাস করছি, এই যে দেশের সমস্যা, দশের সমস্যা, ঝগড়াঝাটি, পরিবারের সমস্যা, ছেলেমেয়ের সমস্যা, ব্যবসায়ের সমস্যা, সব থেকে যাবে, এগুলো সব যথাযথ রেখে আমরা একেকজনেই একেক সময় চলে যাব। ঠিক না? এটাই তো বাস্তব, ঠিক না? দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করছি, বিশ্ব নিয়ে চিন্তা ভাবছি, দেশ নিয়ে ভাবছি, পরিবার নিয়ে ভাবছি, সব ভাবাভাবি থেকে যাবে শুধু আমিই থাকবনা, ঠিক না ভাই? তো দূর্ভাগ্য ভাইয়েরা দুনিয়ায় অনেক মানুষ গতানুগতিক চলে, কিছুই চিন্তা করেনা, গরু-ছাগলের মতই চলে। আর যারা একটু চিন্তা করে, তারা পরকে নিয়ে চিন্তা করে, নিজেকে নিয়ে ভাবে না। তো ভাইয়েরা এক সময় যখন আমরা কবরে চলে যাব, ফেরেশতারা এসে আমাদেরকে কে রফাদাইন করত? কে মিলাদ করত? কে কোথায় গেল? কার বউ পর্দা করতনা? কেন করতনা? এগুলোই আমাকে জিজ্ঞেস করবে? ঠিক না? নিশ্চয়ই করবেনা। তো ভাইয়েরা বড় কষ্ট লাগে, আপনাদের বলি, দুনিয়ায় অধিকাংশ মানুষ গতানুগতিক চলে, ভেড়ার মত চলে, সকালে উঠে-রাত্রে ঘুমায়, খায়-দায়, বাজার করে। কেন বেঁচে আছি তাও বুঝেনা, কেন মরে গেল তাও বুঝেনা। গরুর বাচ্চা জন্মায় জোয়াল কাঁধে নেয়, কসাই জবাই করে, শেষ। ওর ক্ষিদে লাগে খায়, পায়খানা চাপে হাগে, কিন্তু ওর জীবন কি ও বুঝেনা। আমরা মানুষের বাচ্চারাও অনেকেই এ রকম! ছোট বেলায় বড় হয়েছি, বিয়ে-শাদি করেছি, বাজারে যাই, কেনই বা টাকা কামাই করি? এ টাকা রেখে যেয়ে কী হবে? কেনই বা বাজার করি? কেনইবা এলাম? কেনইবা মরে গেলাম কিছুই চিন্তা করে না। এরকম মানুষ বেশি। যারা একটু চিন্তা করার তৌফিক আল্লাহ দিয়েছেন, তারা শুধু পরের ভুলগুলো চিন্তা করি ভাই। কি নিয়ে আমি আল্লাহর কাছে যাচ্ছি? আমি কি করলাম? আমি কতটুকু নেক আমল করেছি? আল্লাহর সামনে কি দেব? আমার রবের সাথে, আমার মালিকের সাথে আমার সম্পর্ক কতখানি গভীর? আমার কি আল্লাহর দরবারে হাত তুললে চোঁখের পানি আসে কিনা? আমি কয় রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তে পেরেছি? কয়টা আল্লাহর কাজ করতে পেরেছি? কয়জন মানুষকে আল্লাহর কথা বলতে পেরেছি? এ চিন্তা আমরা করিনা ভাই। তা আমার কথা হল, ভাইয়েরা এইভাবে শয়তানের পিছনে না চলে আসেননা সবাই নিজের চিন্তা করি। যদি সময় পাই, সারাদিন তো দোকানের চিন্তা করি, বাজারের চিন্তা করি, নিজের চিন্তা তো আর করা হল না। এই ছেলে-মেয়ের চিন্তা করতে করতে, বৌয়ের চিন্তা করতে করতে জীবন শেষ হয়ে গেল! মরার পরে বৌ আর রাখবে না, রাখবে ভাই? রাখবেনা, এক বেলা না খেয়েও থাকবেনা, আমার লাশ পড়ে থাকবে তারা খাবে! নিজের জন্য চিন্তা করা হলনা, একটু সময় পেলে পরের দোষ চিন্তা না করে নিজেরটা চিন্তা করি ভাই, যে কি করলাম? কতটুকু নেক আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছি? কয় রাকাআত নামাজ বুঝে পড়েছি? কয়টা দোয়া আল্লাহর কাছে চোঁখের পানি দিয়ে করতে পেরেছি? কয়জন মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতে পেরেছি? এটা চিন্তা করি।”
আসুন না ভাইয়েরা আমরা সকলেই অন্যের কথা না ভেবে, অন্যের পিছনে না লেগে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবি, নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে নিজেকে নিয়ে ভাবার, নিজেকে সংশোধন করার তৌফিক দান করুক, আমিন।