এমন কিছু মুহূর্ত কী, যা আপনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না?
এমন কিছু মুহূর্ত কী, যা আপনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না?
Add Comment
অনেক অনেক আনন্দের মুহূর্ত আছে, দুঃখের মুহূর্ত আছে যেগুলো কোনোদিন ভোলা যায় না কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব ?
কয়েকটা বলছি…
- আমি যখন বাবার ঠান্ডা হাতটা ধরলাম। বাবা যে নেই তখনও আমি জানিনা, ঠাহর করতে পারিনি। আমি অনেক ছোটো। আমার জীবনের প্রথম মৃত্যু সামনে থেকে দেখা। সেই ঠান্ডা অনুভূতিটা এখনও আমাকে হন্ট করে। অদ্ভুত একটা ঠান্ডা যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। এরপর আরো দু একজনের মৃত্যু দেখেছি । কৌতুহলী হয়ে ছুঁয়েও দেখেছি কিন্তু না…বাবার ঠান্ডাটা একদম আলাদা। আমার ভীষণ আদরের বাবা বলেই বোধহয়।
- বিয়ের পর দুবছর আমি গৌহাটি হোস্টেলে ছিলাম। তাই টানা দুবছর কেমন যেন নতুন বৌ নতুন বৌই লাগতো নিজেকে। ফরাক্কা থেকে স্বামী মাঝেমাঝে আসতো কিন্তু সেটা যেন কেমন একটা….মনে হতো নতুন প্রেম করছি টাইপ। খুব একটা মন খুলে কথা বলতে পারতাম না ..লজ্জা লাগতো। ইসসস এখন ভাবলে হাসি পায়। যাইহোক, ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে মায়ের কাছে কিছুদিন কাটিয়ে আমার প্রথমবার স্বামীগৃহে যাত্রা । স্বামী আবার এটাতে টুইস্ট আনলো। বললো “ তুমি গৌহাটি থেকে তিনসুকিয়া মেলে উঠে পড় , আমি ফরাক্কাতে তোমাকে জয়েন করব…আমরা সোজা দিল্লি যাবো ..তোমায় নিয়ে তাজমহল যাবো । “ সেই মতো দুজনে দিল্লি গিয়ে পৌঁছালাম। গেস্টহাউসে ঢুকেই সে বাড়ীতে পৌঁছা সংবাদ দিতে ফোন করাতে জানা গেল আমার রেজাল্ট আউট হয়ে গেছে আর আমি ফেল করেছি , আমার নাম লিস্টে নেই। শুনে তো আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। “ হে ভগ্গবান , নতুন বরের সামনে আমায় এমন অপদস্থ করলে ? ঠাকুর তুমি এতো নিষ্ঠুর কি করে হলে ? এখন এই মুখ আমি কি করে দেখাবো ? “ খুব কান্নাকাটি করলাম আর ওকে বললাম ..” তুমি আরেকটা বিয়ে কর, এটাই আমার ফেল মারার শাস্তি হবে। “ স্বামী তো তখন বৌয়ের প্রেমে অন্ধ । বললো.. “ অ্যাকচুয়েলি আমার ফেল করা মেয়েই বেশী পছন্দ ।” তাজমহল টহল ক্যানসেল করলাম। মুখখানা তোলা হাঁড়ি বানিয়ে রাত কাটালাম। পরের দিন সন্ধ্যার দিকে বাড়ী থেকে খবর এলো যে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড পজিশনটা উইথহেল্ড । কিছু প্রবলেমের জন্য রেজাল্ট দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরের দিন খবর এলো আমি এডমিট কার্ডের নাম্বারটা খাতায় ভুল লিখেছি বলে রেজাল্ট উইথহেল্ড আছে। গৌহাটি গিয়ে কিসব সাইন টাইন করলে আমার নাম লিস্টে উঠবে। সেই সময়টাতে আমার স্বামীর সেই উজ্জল হাসিটা আমি আজও ভুলতে পারিনা। তার চোখে সেই মারকাটারি প্রেম আর বত্রিশপাটি বের করা হাসি আর দেখেছি বলে সন্দেহ ।
- ছোটবালায় ট্রেন জার্নির সময় মা প্ল্যাটফর্ম থেকে জল আনতে গিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল। আমি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি মা ট্রেনের সাথে সাথে দৌড়োচ্ছেন …তারপর দেখলাম মা থেমে গেলেন ..মাকে দেখতে না পেয়ে আমি আর বোন পরিত্রাহি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। ঐটুকু বয়সেই চিন্তা চলে এলো..আমাদের বাবা নেই , মাও হারিয়ে গেলেন …এবার আমার আর বোনের কি হবে ? আমাদের কাছে তো টাকা পয়সা নেই… বাড়ী ফেরার টিকিট কি করে কাটবো আর টিকিট কাটেই বা কোথা থেকে ? আমরা কি তাহলে সারাজীবন ভিক্ষে করে খেতে হবে ? ঐ ছোট্ট মগজে সেই যে ভয় আর দুশ্চিন্তা ঢুকেছিল সেই ভয় অনেকদিন ছিল। ঘুমের মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠতাম। যাইহোক, পরের স্টেশনে মা এলেন। অন্য কামরার লোকজন মাকে চলন্ত ট্রেনে টেনে তুলে নিয়েছিল।