ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি?

ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি?

Add Comment
1 Answer(s)
    ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু বিনষ্টের কারণ হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা করবঃ  ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ

    প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া। চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা মযী বা অন্য কিছু হোক- বের হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা যে, তখন গোসল ওয়াজিব হবে। কিন্তু মযী বের হলে অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে।

    দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে, তবে তা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এ অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলে সাধারণতঃ অনুভব করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে নিদ্রা যাক বা হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রা যাক। মোট কথা অন্তরের অনুভুতি উপস্থিত থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন কিছু বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয়; বরং এ সময় ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব অনুভুতি থাকাবস্থায় যেহেতু ওযু ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা যে মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গ হত, তবে নিদ্রা অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে।

    তৃতীয়তঃ উটের মাংস ভক্ষণ করা। উটের গোস্ত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের মাংস খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন, যদি চাও তো করতে পার। বলা হল, আমরা উটের মাংস খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ছগালের মাংস খেয়ে ওযু করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন, তখন বুঝা যায় উটের গোস্ত খেয়ে ওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে। অতএব উটের গোস্ত কাঁচা হোক বা পাকানো হোক কোন পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য বর্ণ খেলেই ওযু ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি, কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা উটের যে কোন অংশ ভক্ষণ করলে ওযু ভঙ্গ হবে। কেননা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য বর্ণনা করেননি। অথচ তিনি জানতেন মানুষ উটের সব অংশ থেকেই খেয়ে থাকে। উটের কোন অংশ থেকে অপর অংশের বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা অবশ্যই বর্ণনা করে দিতেন। যাতে করে মানুষ ধর্মের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তাছাড়া ইসলামী শরীয়তে আমরা এমন কোন প্রাণীর বিধান সম্পর্কে অবগত নই যে, উহার মধ্যে বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদ কোন বিধান আছে। কেননা প্রাণীকুল কোনটা হয় হালাল আবার কোনটা হয় হারাম। কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে না। কিন্তু একটি প্রাণীর মধ্যে এক অংশের এই বিধান আর অন্য অংশের এই বিধান, এরকম পার্থক্য ইসলামী শরীয়তে নেই। যদিও ইহুদীদের শরীয়তে এ রকম পার্থক্য পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ্‌ বলেন,

    ]وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنْ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوْ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ[

    “ইহুদীদের জন্য প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগল থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের জন্য হারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বি, যা পৃষ্ঠে কিম্বা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে, (তা বৈধ ছিল)।” (সূরা আনআম- ১৪৬) এ জন্য বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, শুকরের মাংস যেমন হারাম তেমনি শুকরের চর্বিও হারাম। অথচ আল্লাহ্‌ তা’আলা শুকরের ব্যাপারে তার মংশ হারাম হওয়ার কথাই শুধু উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ

    ]حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ[

    “তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস এবং গাইরুল্লাহর জন্যে যবেহকৃত প্রাণী।” (সূরা মায়েদা- ৩) আমি জানিনা শুকরের চর্বি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতভেদ আছে। তাই উটের মাংস খেলে ওযু ভঙ্গ হবে সেই সাথে উটের চর্বি, নাড়ী-ভুঁড়ি প্রভৃতি খেলেও ওযু ভঙ্গ হবে।

    বিষয়/প্রশ্নঃ                (১৫৪)
    গ্রন্থের নামঃ              ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
    বিভাগের নামঃ          ঈমান
    লেখকের নামঃ          শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
    অনুবাদ করেছেনঃ     আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি – আবদুল্লাহ আল কাফী


    Professor Answered on April 11, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.