কাউকে বিয়ে করার আগে কী কী বিষয়ে জানা উচিত?
কাউকে বিয়ে করার আগে কী কী বিষয়ে জানা উচিত?
প্রশ্নটা হাতে পেয়ে নিজেকে চুপ রাখতে পারলাম না।
একটা গল্প বলতে চাই আপনাদের।
আমার ইউনিভার্সিটি বন্ধু। পরিচয় মাত্র তিন বছরের। একটি মেয়েকে সে ভালোবেসে ফেলে। কখনো এ বিষয় নিয়ে তাকে প্রশ্ন করিনি তবে আমিও বুঝতে পেরেছি। মেয়েটার সঙ্গে পার্কে ঘোড়া আড্ডা দেওয়া যত্ন নেওয়া । প্রত্যেকদিন সময় কাটাচ্ছে।
অফিস শেষ করে বাজারে গেলাম,বাজার করতে। ঠিক সে সময় সে ফোন দিল বলল তাৎক্ষণিক আসতে হবে কারণ তার নাকি বিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে।
আমার ব্যক্তিগত একটা স্বভাব আপনাদেরকে বলতেছি। বিয়েতে সাধারণত আমরা যাই আনন্দ করতে, ভালো খেতে মানুষের সাথে পরিচয় হতে।
আর আমি যাই, পরিবেশটা দেখতে। যেমন, ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষ মানুষ গুলো কেমন। বিয়েটা কিভাবে সমাপ্তি হচ্ছে। সাধারণত আমি এসব চুপচাপ বসে দেখতে থাকি।
ছেলের বাবা এসেছে ঢাকায়। কারণ মেয়ের ফ্যামিলি ঢাকায় থাকে। তাদের মাঝে টুকিটাকি বিয়ের বিষয়ে কিছু কথা হয়েছে।
বিয়ে বলতে সাধারণত আমরা কি বুঝি। একদম সহজ কথায় ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী দুই ফ্যামিলির ঐকতায় সামাজিক চুক্তিকে বিবাহ বলা হয়।
আশা করি আজকেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরা বসে নাস্তা করে বিয়ের আলোচনা শুরু করলাম। আমি ছেলে এবং মেয়ের উভয় পক্ষকে প্রশ্ন করলাম। যে আপনাদের ছেলে মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা আর আপনাদের এই বিয়েতে সম্মতি আছে কিনা। উভয় পক্ষ বললো আমাদের সম্মতি আছে।
আমার বন্ধু কে প্রশ্ন করলাম, তোর কোনোকিছু চাওয়া পাওয়া আছে কিনা। এক কথায় জবাব দিল ,আমি শুধু মেয়েটা কে চাই। আর এ বিষয়ে ছেলের বাবা ও একমত।
এবার কাবিন নামা নিয়ে আলোচনা শুরু। মেয়ের পক্ষ থেকে কাবিন এর দাবি করল ৫ লক্ষ টাকা।
ছেলের পক্ষ থেকে আমি বললাম ,যে বিষয়টা নিয়ে একটু ভেবে দেখেন। সাধারণত মোহরানাটা ছেলের সক্ষমতার উপর নির্ভর করে। তাই ছেলের সক্ষমতা অনুযায়ী আপনারা একটু মোহরানা ধার্য করেন।
কিন্তু তারা কোনভাবেই তাদের দাবি থেকে একটুও কমতি করতে ইচ্ছুক হলো না।
আমি বললাম তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে । যদি আজ যুগ হিসেবে পালিয়ে বিয়ে করত হয় তো বা তারা দুজন মিলে অল্প টাকা মোহরানা করতো। কিন্তু তারা তা না করে আপনাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিয়েটা করতে চাই। তাই এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে সমতা থাকা উচিত। বারবার রিকুয়েস্ট করার পরও মেয়ের পক্ষ থেকে একটু সেক্রিফাইস কর্পোরাইজ করলো না। প্রায় দুই ঘন্টা আলোচনা করলাম। তারা নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিল।
আমি অবাক হলাম। শেষে ৫ লক্ষ টাকা মোহরানা করল।
তাতে আমার দুঃখ নাই। কিন্তু আমার দুঃখ একটাই কাদের সাথে আত্মীয়তা করতেছি। আর এসব মানুষের সাথে কিভাবে আত্মীয়তা করে দীর্ঘদিন টিকে থাকবো। তারা কিভাবে আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠবে।
সেদিন আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। সত্যি কথা বলতে যদি ওই বিয়েটা আমার পরিবারের কারো হত আমি বিয়েটা প্রতি দিতাম না।
বাড়ি ফেরার সময় ছোট্ট একটি মেসেজ আমার বন্ধুর কাছে সেন্ড করলাম। তাতে লেখা ছিল, প্রিয় বন্ধু তোর হয়তো ভাগ্য ভালো বউ ছিল। কিন্তু ভালো শশুর শাশুড়ি ছিল না। কিভাবে তারা তোকে পাইরোটি দিবে তা আমার মাথায় আসতেছে না।
সাধারণ তো আমি খুব কম কথা বলি যেকোনো মানুষের সঙ্গে। আরেকটা স্বভাব আমার মাঝে আছে। আমি নিজে নিজের প্রতি কঠোর, কিন্তু অন্যের প্রতি কমল। যার মাঝে সমতা সহমর্মিতা মনুষ্যত্ব আর ভালোবাসা নাই। তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি না।
আমিও এক বছর আগে বিয়ে করেছি। মেয়ে পক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা মোহরানা দাবি করেছিল। আমার শ্বশুরকে বাজার এ ডাকলাম চা দোকানে বসে গল্প করলাম। আমি আমার শ্বশুরকে বললাম, যে আপনার মেয়েকে আমার পছন্দ। আর আপনার ফ্যামিলি যদি আমাকে পছন্দ করে থাকে। আর যদি আত্মীয় করতে চান। তবে আমি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী মোহরানা দিব। সংকোচ না করে বলে দিলাম ২ লক্ষ টাকা মোহরানা দিব। সালাম দিয়ে বিদায় নিলাম।
ঠিক ২ ঘণ্টা পর আমাকে ফোন দিয়ে সম্মতি জানালো। অর্থাৎ একমত হয়েছে।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই। নিজে অথবা নিজের ভাই বোনকে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন। যে যাদের সাথে আত্মীয়তা করতেছেন তারা মানুষগুলো কেমন। তারা কতটুকু সামাজিকতা বোঝে। যাদের মাঝে মনুষ্যত্ব নাই। তাদের সাথে সম্পর্ক না গড়াই ভালো। গরিব কিনবা মূর্খ হোক। তাদের সাথেই আত্মীয় করুন। যাদের মাঝে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি সুন্দর হৃদয় আছে। চোখ বন্ধ করে বলতে পারি আপনার প্রতি তাদের কখনোই সম্মাজনা কমতি থাকবে না।
ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকাবেন।
ধন্যবাদ