কিছু অদ্ভুদ ও অজানা তথ্য জানাবেন কি?

    Add Comment
    1 Answer(s)

      সময়টা আঠার দশকের শেষের দিককার। ফরাসী বিপ্লব তখন পুরোদমে চলছে। ঠিক সেই সময়টাতে ফ্রান্সের লিঁওতে জন্ম নেয় এক আজব শিশু। তারারে নামের সেই ছেলেটি কুকুর থেকে শুরু করে বিড়াল কিংবা যেকোনো প্রাণী জীবন্ত গিলে ফেলতে পারতো। এরকম অপ্রত্যাশিত ক্ষমতার এই মানুষ মাত্র ২৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তবে ক্ষুদ্র এই জীবনেই অনেক চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছিলো তাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক পশুপাখি ও মৃত মানুষখেকো এই যুবকের গল্প।

      ছবিতে : তারারে

      ১৭৭২ সালে ফ্রান্সের লিঁওর একটি মফস্বল এলাকায় জন্ম হয় তারারের। ছোটবেলা থেকেই তার অতিরিক্ত খাওয়া মানুষকে বিস্মিত করেছিলো। শুনতে আজগুবি ঠেকলেও সত্য যে, কিশোর বয়সেই প্রতিদিন প্রায় একটি ষাঁড়ের চারভাগের একভাগ খেয়ে ফেলতো তারারে, যা ছিলো প্রায় তার ওজনের সমান। তার এরকম অতিমানবীয় খাওয়ার যোগান দেওয়া তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিলোনা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘর ছাড়েন তারারে। কয়েক বছর এদিক সেদিক ঘুরার পর এই বালক যোগ দেন একটি সার্কাস পার্টিতে। যদিও সার্কাস পার্টিটি ছিলো মূলত পকেটমারদের। সার্কাসের ছলনায় দর্শকদের পকেট মারতো তারা।

      অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই দলের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেন তারারে। মঞ্চে এসে যেকোনো কিছু খেয়ে দেখাতো সে। পাথর থেকে শুরু করে কর্ক কিংবা এক ডজন আপেলও গিলে ফেলতো পারতো দর্শকদের সামনে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনানুযায়ী, তারারে দাঁত দিয়ে জীবিত বিড়াল ছিড়ে তার রক্ত পান করতো। তারপর শুধু কঙ্কাল বাদে পুরো বিড়ালটাই গলধকরণ করে ফেলতো।

      একইভাবে সে কুকুরও খেয়ে ফেলতো পারতো। একটি সার্কাসে তারারে জীবন্ত ইল না চিবিয়ে গিলে ফেলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। খাওয়ার আগে শুধুমাত্র ইলের মাথাটা ছেঁচে নিয়েছিলো। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পরিপাকতন্ত্রে ঝামেলা দেখা দেয় তারারের, যার দরুন ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। শেষপর্যন্ত সার্কাসের কাজ ছেড়ে দেয় সে। অবাক করা বিষয় হলো, এত খাওয়া দাওয়া সত্ত্বেও তারারের ওজন ছিলো সাধারণ মানুষের মতোই। ১৭ বছর বয়সে তারারের ওজন ছিলো মাত্র ১০০ পাউন্ড, যা প্রায় ৪৬ কিলোগ্রামের সমান। তার পুরো শরীর জুড়ে ছিলো ঝুলে পড়া চামড়া। যখন সে খেতো, তখন পেটের সেই চামড়া বেলুনের মতো টানটান হয়ে যেত। তার মুখ অস্বাভাবিক রকমের বড় ছিলো। তারারে একসাথে প্রায় এক ডজন আপেল কিংবা ডিম মুখে নিয়ে রাখতে পারতো। তবে তার শরীর থেকে সবসময় দুর্গন্ধ বের হতো। তাই পারতপক্ষে কেউ তার আশেপাশে ঘেষতো না। খাবারের পর এই দুর্গন্ধ বেড়ে যেত কয়েকগুন। সেই সময় প্রচন্ড ঘামার সাথে তার চোখগুলোও হয়ে যেত রক্তাভ। অনেকের মতে, খাওয়ার সময় শরীর থেকে দৃশ্যমান বাষ্পও নির্গত হতো। এতকিছুর পরও আশ্চর্যের বিষয় ছিলো, তারারে কখনোই তার শরীরের ওজন বাড়াতে পারেনি। এমনকি খাবারের পর তাকে কখনো বমিও করতে দেখা যায়নি। তবে ছোটবেলা থেকেই তার ডায়রিয়ার সমস্যা ছিলো প্রকট। সার্কাসের কাজ ছেড়ে ১৭৮৮ সালে তারারে ফ্রেঞ্চ আর্মিতে যোগদান করেন। তার খাওয়ার এই বিস্ময় প্রতিভাকেই কাজে লাগায় ফ্রেঞ্চ আর্মি। বর্ডারে যাওয়া প্রুসিয়ানদের কাগজপত্র কিংবা দরকারি জিনিসপত্র গিলে ফেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। তবে আর্মিতে যোগদানের পর তারারে সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েন খাবার নিয়ে। প্রত্যেক সৈন্যের জন্য ছিলো নির্দিষ্ট পরিমাণ রেশন। অথচ তারারের খাওয়ার সামর্থ্যের তুলনায় তা ছিলো অনেক নগণ্য। তাই তিনি খাবারের বিনিময়ে অন্য সৈনিকদের কাজ করে দিতে লাগলেন। পেটের চাহিদা পূরণ করতে ভেজা ঘাস, টিকটিকি, সাপ কিংবা পোকামাকড় খাওয়া শুরু করেন তিনি। খাবারের সমস্যা দূর করতে শুধুমাত্র তারারের ক্ষেত্রে রেশনের পরিমাণ চারগুণ করে দেয় ফ্রেঞ্চ আর্মি। মাঝে খাওয়ার অভাবে মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তার দায়িত্বে ছিলেন ব্যারন পার্সি নামের এক ডাক্তার। তার এই অতিমানবীয় কর্মকান্ডে তিনি যারপরনাই বিস্মিত হন। তিনি তারারেকে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যারন পার্সি হাসপাতালে ১৫ জন মানুষের জন্য রান্না করা খাবার খেতে দেন তারারেকে। প্রায় দুটি ষাঁড়ের মাংস দিয়ে বানানো বড় বড় পাই ও চার গ্যালন দুধ একাই খেয়ে শেষ করেন তিনি। খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পড়েন তারারে। সেই সময় পার্সি তার বেলুনের মতো ফুলে যাওয়া পাকস্থলির রহস্যের কূলকিনারা করতে পারেননি। আর্মিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই রাইন নদীর তীরে ফরাসি বিদ্রোহের জন্য গড়ে ওঠা আর্মি অফ রাইন থেকে ডাক পড়ে তারারের। সেই মিটিংয়ে তিনি আস্ত একটি বাক্স গিলে ফেলেন। তার এই প্রতিভার জন্য সেনাবাহিনী তাকে সেখানকার গোয়েন্দা হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং পুরষ্কার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় ষাঁড়ের ১৪ কেজি কাঁচা ফুসফুস। তৎক্ষনাৎ সবার সামনে তা খেয়ে শেষ করেন তারারে। পরবর্তীতে সেই আর্মি দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। একবছর সাফল্যের সাথে কাজ করার পর তিনি প্রুসিয়ান বর্ডার লাইনে প্রুসিয়ান আর্মিদের হাতে ধরা পড়েন। প্রুসিয়ানদের হাতে আটকা পড়া ফরাসি কর্নেলের কাছে একটি সংবাদ পাঠাতে গিয়ে প্রুসিয়ান আর্মিরা তাকে চিনে ফেলে। জার্মান ভাষা না জানার কারণে সেখানে কিছু বলতেও পারেননি তিনি। প্রুসিয়ান সৈন্যদের দ্বারা মারাত্মকভাবে আহত হন তারারে। পরবর্তীতে ফরাসি আর্মিতে ফিরে আসলেও এই ঘটনার জেরে আর্মিতে কাজ করার ইচ্ছা হারান তিনি। এই ঘটনার পর তিনি আবারো সেই মিলিটারি হাসপাতালে ফিরে যান। ডাক্তার পার্সিকে অনুরোধ করেন, যেকোনো মূল্যে তাকে সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক করে দিতে। পার্সি প্রথম প্রথম তাকে ক্ষুধা নিবৃত্তিকারক লুডেনাম খেতে দিতেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় ওয়াইন, ভিনেগার, সিদ্ধ ডিম খেতে দেন। কিন্তু তারারের ক্ষুধার্ত ভাব তাতে এতটুকুও কমেনি। বরং হাসপাতাল থেকে লুকিয়া বাইরে গিয়ে কুকুর আর কসাইয়ের দোকানের পঁচা মাংস খাওয়া শুরু করেন তারারে। কয়েকবার তাকে হাসপাতালের রোগীদের থেকে নেওয়া রক্তও খেতে দেখা গিয়েছে। অন্য ডাক্তাররা তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ আখ্যা দিয়ে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর বুদ্ধি দেন। কিন্তু ডাক্তার পার্সি তারারের উপর পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর সেই হাসপাতাল থেকে ১৪ মাস বয়সী একটি শিশু উধাও হয়ে যাওয়ার পর সন্দেহের তীর যায় এই তারারের উপরই। সেই ঘটনায় পার্সি আর তারারেকে রক্ষা করতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় তাকে বের করে দেওয়ার। চার বছর পর ১৭৯৮ সালে ভার্সাই হাসপাতাল থেকে ডাক্তার পার্সির সাথে যোগাযোগ করে বলা হয়, তার প্রাক্তন এক রোগী তার সাথে দেখা করতে চায়। তিনি ভার্সাই হাসপাতালে গিয়ে দুর্বল ও ভেঙে পড়া তারারের সাথে দেখা করেন। তারারে জানান, প্রায় দুই বছর আগে তিনি একটি সোনালী কাঁটা চামচ গিলে ফেলেন। তার ধারণা, সেই চামচের জন্য তার এই দুর্বল অবস্থা। পরবর্তীতে পার্সি পরীক্ষা করে দেখেন, তারারের শরীরে মারাত্মকভাবে যক্ষ্মা বাসা বেঁধেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ডায়রিয়া ও যক্ষ্মার দরুন প্রাণ হারান তারারে। মৃত্যুর পর তারারের শরীর অন্য মানুষের তুলনায় দ্রুতই পঁচতে শুরু করে। প্রথমে তার শরীর কেউই ব্যবচ্ছেদ করতে চায়নি। পরবর্তীতে টেসিয়ার নামের এক লোক এ কাজটি করেন। ব্যবচ্ছেদের পর দেখা যায়, তারারের পাকস্থলি, খাদ্যনালী, যকৃত ও পিত্তকোষ অস্বাভাবিক রকমের বড়। আলসারে পরিপূর্ণ পাকস্থলীর সাথে পুরো শরীরের ভেতর পুঁজে ভরা ছিলো। তবে অবাক করা বিষয় হলো, তার পেটের ভেতরে থাকা সেই সোনালী কাঁটা চামচটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতিমানবীয় খাওয়ার রহস্যের কূলকিনারা করার আগেই মাত্র ২৬ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান তারারে।

      #Collected from FACEBOOK. (ROAR বাংলা)

      Professor Answered on September 17, 2023.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.