কিভাবে আখ চাষ করা যায়?
আখ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় অর্থকারি ফসল। বলা হয় চিনি উৎপাদনের মূল ফসল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় আখ উৎপাদন অনেক কম। এর কারণ ও অনেক। যেমন-সঠিক পরিচর্যা বা চাষাবাদের অভাব ফসলের বৈচিত্রতা ফলন মেয়াদি সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধি ফলের বাগান তৈরি ইত্যাদি কারনে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রসে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন-প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান। পরিপক্ক আখে শতকরা ৮০ ভাগ পানি, ৮-১৬ ভাগ সুক্রোজ, ০.৫-২ ভাগ রিডিউসিং সুগার এবং ০.৫-১ নন সুগার থাকে।
আখ চাষে মাটি নির্বাচন
প্রায় সব ধরনের জমিতে আখের চাষ করা যায়। তবে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে উঁচু ও মাঝারি উঁচু যেখানে পানি জমে থাকে না। তাছাড়া আমাদের দেশে আখ উৎপাদনের উপযুক্ত পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল, দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি।
আখ চাষে জাত নির্বাচন
আমাদের দেশে আখের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঈশ্বরদী ২/৫৪, ঈশ্বরদী ২০ ঈশ্বরদী ১৬, ঈশ্বরদী ৩২, ঈশ্বরদী ৩৩, ঈশ্বরদী ৩৪, ঈশ্বরদী ৩৫, ঈশ্বরদী ৩৬, ঈশ্বরদী ৩৭, ঈশ্বরদী ৩৮, ঈশ্বরদী ৩৯, ঈশ্বরদী ৪০, বিএসআর আই আখ-৪১, বিএসআরআই খাঁ -৪২, বিএসআর আই আখ-৪৩, বিএসআর আই আখ- ৪৪ অমৃত ইত্যাদি।
আখ চাষে জমি প্রস্তুত
আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি, লম্বা ও ঘন শেকড়বিশিষ্ট ফসল। সে জন্য আখের জমি গভীর করে ৫/৬টি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। এসময় একরপ্রতি ৪ টন গোবর বা আর্বজনা সার দেওয়া ভাল।
আখ চাষে রোপণের সময়
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চারা রোপন করা যায়। তবে চারা রোপণের উত্তম সময় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। ৩০-৩৫ হাজার কাটিং বা সেট/হেক্টর বীজ প্রয়োজন হয়।
আখ চাষে সারের পরিমাণ
প্রতি জমি ইউরিয়া ১২০-১৫০ কেজি, টিএসপি ৮০-১১০ কেজি, এমওপি ১১০-১৪০ কেজি, জিপসাম ৫০-৬০ কেজি, জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি, ডলোচুন ১০০-১৫০ কেজি, জৈব সার ৫-৬ টন প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া অন্যান্য সব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি রোপণ নালায় দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া ও এমওপি চারা রোপণের পর কুঁশি গজানো পর্যায়ে (১২০-১৫০ দিন) উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
আখ চাষে রোপণ পদ্ধতি
আমাদের দেশে সাধরণত দুই ভাবে আখ রোপণ করা হয়।
১। প্রচলিত পদ্ধতিঃ তিন চোখ বিশিষ্ট আখ খন্ড নালার মধ্যে একই লাইনে মাথায় মাথায় স্থাপন করে অথবা দেড়া পদ্ধতি বা দু´সারি পদ্ধতিতে আখ চাষ করা যায়। আখ খন্ড স্থাপনের পর ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি মাটি দিয়ে আখ খন্ড ঢেকে দিতে হবে।
২। এক বা দু চোখ বিশিষ্ট আখ খন্ড পলিব্যাগ বা বীজতলায় চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ। আখ চাষের এ পদ্ধতিটি এখন পর্যন্ত আধুনিক। সাধারণত একমাস বয়সের আখের চারা রোপণ করতে হয়। এক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩ ফুট বা ৯০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ ফুট বা ৬০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
আখ চাষে আন্তঃপরিচর্যা
আখগাছ বড় হলে হেলে যাতে না পড়ে সেজন্য আখ গাছ কয়েটি মিলেয়ে বেঁধে দিতে হবে। আখের শুকনা পাতা ঝরে পড়ে না বলে শুকনা পাতা ছিঁড়ে ফেলতে হবে। মাটিতে বাতাস চলাচলের জন্য মাঝে মাঝে মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং ২/৩ বার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছের বয়স ৭/৮ সপ্তাহ হলে প্রথমবার এবং ১২-১৪ সপ্তাহ হলে কাণ্ডে ২-১টি গিঁট দেওয়ার পর দ্বিতীয়বার মাটি দিতে হবে। প্রয়োজন হলে বাঁশের সাহায্যে আখ গাছ ঠেস দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে প্রতিটি আড় শুকনা পাতা দিয়ে বেঁধে পাশাপাশি দুই সারির ৩-৪ টি ঝাড় একত্রে বেঁধে দিতে হবে।