কিভাবে আমলকি ও জলপাই চাষ করা যায়?

    কিভাবে আমলকি ও জলপাই চাষ করা যায়?

    Doctor Asked on June 17, 2019 in কৃষি.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      আপনি এই পদ্ধতিতে আমলকী জলপাইসহ সকল ফল চাষ করতে পারবেন:

      প্রজাতি ও জাত নির্বাচন : বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের ক্ষেত্রে ফসলের প্রজাতি ও জাত নির্বাচন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ড  নিয়ে বাংলাদেশ গঠিত হলেও, অঞ্চল ভিত্তিক মাটি ও জলবায়ুর বৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের সম্ভাবনা ব্যাপক। যে এলাকায় বাগান স্থাপন করা হবে সেই এলাকার উপযোগী ফলের প্রজাতি ও জাত বেছে নিতে হবে। প্রজাতি/জাত নির্বাচন সঠিক না হলে কাক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না।

      জমি নির্বাচন : অধিকাংশ ফলগাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। ফলে বন্যা বা বৃষ্টির পানি দাঁড়ায় না এমন জমি ফল বাগান স্থাপনের জন্য নির্বাচন করতে হবে। তবে কিছু কিছু ফলগাছ যেমন- আম, পেয়ারা, নারিকেল, কুল স¦ল্পকালীন জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। এসব ফল মাঝারি উঁচু জমিতে রোপণ করা যেতে পারে। ফলগাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে না পারলেও তাদের বৃদ্ধি ও কাক্সিক্ষত ফলনের জন্য নিয়মিত সেচ প্রদান অত্যন্ত জরুরি। তাই জমি নির্বাচনের পূর্বে সেচের সুবিধা সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে। ফল চাষের ক্ষেত্রে মাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাগানের মাটি অবশ্যই ফল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত হতে হবে এবং মাটির ঢ়ঐ অবশ্যই সর্বাপেক্ষা নিরপেক্ষ অবস্থায় (৬.৮ থেকে ৮.৫) থাকতে হবে। উর্বর বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের জন্য জন্য উপযোগী।

      জমি তৈরি : গভীরভাবে চাষ ও মই দিয়ে উত্তমরূপে জমি তৈরি করতে হবে। আগাছা বিশেষ করে বহুবর্ষজীবী আগাছার মধ্যে উলু ও দুর্বা গোড়া ও শেকড়সহ অপসারণ এবং জমি সমান করতে হবে।

      চারা-কলম নির্বাচন : পরীক্ষামূলক বাগান স্থাপনের ক্ষেত্রে সঠিক চারা-কলম নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারা নির্বাচন সঠিক না হলে বাগান থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না। চারার বয়স, রোগ বালাইয়ের আক্রমণ, সতেজতা প্রভৃতি বিষয়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ এগুলো গাছের ফলন ক্ষমতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ভালো চারা-কলমের নিম্নল্লিখিত গুণাগুণ থাকবে-

      * চারা-কলমটি হবে ভালো জাত ও অনুমোদিত উৎসের সায়ন বা বীজ থেকে উৎপন্ন

      * চারা-কলমটির কা-ের দৈর্ঘ্য শিকড়ের দৈর্ঘ্যরে ৪ গুণের বেশি হবে না

      * চারা-কলমের বয়স এক বা দেড় বছরের বেশি হবে না

      * চারা-কলমে ফুল-মুকুল বা ফল থাকবে না

      * চারাটি রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ মুক্ত হবে

      * কলমের চারাটি হবে ২-৩টি সুস্থ-সবল শাখাযুক্ত

      * জোড় কলমের চারার আদিজোড় এবং উপজোড়ের মধ্যে সংগতি থাকতে হবে এবং সঠিকভাবে জোড়া লাগতে হবে।

      ফিল্ড লে-আউট : ফলদ বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী এবং বৃহদাকার হওয়ায় ফিল্ড লে-আউট ও চারা রোপণে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। প্রথমে রেজিস্টারে চারা রোপণের নকশা তৈরি করতে হবে। সাধারণত সমভূমিতে বর্গাকার, আয়তকার, তারকাকৃতি, ত্রিকোণী অথবা ষড়ভূজী পদ্ধতি এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

      বর্গাকার পদ্ধতি (Square system) : এ পদ্ধতিতে রোপিত গাছ থেকে গাছ ও সারি থেকে সারির দূরত্ব সমান থাকে এবং দুই সারির পাশাপাশি চারটি গাছ মিলে একটি বর্গক্ষেত্র তৈরি করে এবং প্রতিটি বর্গক্ষেত্রের কোণায় একটি করে গাছ লাগানো হয়। এ পদ্ধতিতে রোপিত প্রতিটি গাছের পাশে সমান জায়গা থাকায় গাছগুলো সুষমভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং বাগান দেখতেও সুন্দর হয়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত আম, লিচু, নারিকেল,আমলকী, জলপাই ইত্যাদি লাগানো হয়ে থাকে।

      চারা রোপণের সময় : মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আষাঢ় এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস বেশির ভাগ ফলদ বৃক্ষ রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে সেচ সুবিধা থাকলে টবে বা পলিব্যাগে উৎপাদিত চারা-কলম বছরের যে কোনো সময় রোপণ করা চলে। শীতকাল বা খরার সময় গাছ লাগালে এর প্রতি অধিক যত্নশীল হতে হবে। নতুবা রোপিত চারা-কলমের মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।৭*৭ দূরত্ব নিয়ে চারা রোপন করবেন।চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে গর্ত চিহ্নিতকরণ খুঁটিকে কেন্দ্র করে মাদা তৈরি করতে হবে। বড় ও মাঝারি বৃক্ষের জন্য ১ মি.x ১ মি.x ১ মি. এবং ছোট বৃক্ষের জন্য ৬০ সেমি.x ৬০ সেমি.x ৬০ সেমি. আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটির সঙ্গে অনুমোদিত হারে জৈব ও অজৈব সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে পানি সেচ দিতে হবে।

      চারা রোপণ ও পরিচর্যা : মাদা তৈরির ১০-১৫ দিন পর মাদার মাটি কুপিয়ে আলগা করে লে-আউট করার সময় দু’প্রান্তে পুঁতে রাখা খুঁটি বরাবর ফিতা ধরে ১ মিটার অভ্যন্তরে ১ম চারা এবং নির্ধারিত দূরত্বে অন্যান্য চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর সময় খুব সাবধানে এর গোড়ার টব-পলিব্যাগ-খড় অপসারণ করতে হবে যাতে মাটির বলটি ভেঙে না যায়। চারা এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে এর গোড়া একদম সোজা থাকে এবং মাটির বলটি মাদার উপরের পৃষ্ঠ থেকে সামান্য নিচে থাকে। এর পর হাত দ্বারা আলতোভাবে মাটি পিষে দিতে হবে। চারাটি যাতে হেলে না যায় এবং এর গোড়া যাতে বাতাসে নড়াচড়া করতে না পারে সেজন্য চারা লাগানোর পরপরই খুঁটি দিতে হবে। খুঁটিটি সোজা করে পুঁতে এর সঙ্গে শক্ত করে পাটের সুতলি বেঁধে চারাটি এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে চারা এবং খুঁটির মাঝে সামান্য দূরত্ব থাকে। গরু ছাগলের উপদ্রবের আশংকা থাকলে, সম্পূর্ণ বাগানে অথবা প্রত্যেক গাছে বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। লাগানোর পরপরই প্রতিটি চারায় পানি সেচ দিতে হবে। চারা রোপণের পর এক সপ্তাহ প্রতিদিন এবং এর পরবর্তী এক মাস ২-৩ দিন পরপর সেচ দিতে হবে।   ফল বাগান সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষার শুরুতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাসে বাগানে চাষ দিয়ে আগাছা দমন করা যায়। গাছের কাছাকাছি যেখানে চাষ দেয়া সম্ভব হয়না সেখানে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা দমন করতে হবে। এরপরও আগাছার উপদ্রব পরিলক্ষিত হলে বর্ষা মৌসুমে হাসুয়া বা বুশ কাটার দ্বারা কেটে এবং শীত মৌসুমে চাষ ও কোদাল দ্বারা পুনরায় আগাছা দমন করতে হবে। আগাছানাশক যেমন রাউন্ড-আপ, পির্লাক্ষন প্রয়োগ করেও বাণিজ্যক বাগানে আগাছা দমন করা যায়।

      সার প্রয়োগ : বাড়ন্ত গাছের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুই মাস অন্তর সমান কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত মাত্রায় গাছের গোড়া থেকে সামান্য দূরে সার ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ফলন্ত গাছে সাধারণত বছরে দুইবার সার প্রয়োগ করতে হয়। বর্ষার শুরুতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে দু’এক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পর মাটিতে রস এলে ১ম কিস্তি এবং বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাসে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলে ২য় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হয়। দুপুর বেলায় যে পর্যন্ত ছায়া পড়ে তার থেকে সামান্য ভেতরে নালা তৈরি করে নালায় সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা গাছের গোড়ার ১.০-১.৫ মিটার বাদ দিয়ে দুপুর বেলায় যে পর্যন্ত ছায়া পড়ে সেই এলাকায় সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। সারের অপচয় রোধ রকার জন্য বর্ষা মৌসুমে ডিবলিং পদ্ধতি অনুসরণ করা উত্তম। পেয়ারা, কুল, লেবু জাতীয় ফল প্রভৃতি গাছের নতুন ডালে ফুল ও ফল হয়। এসব ক্ষেত্রে শীতের শেষে মাঘ-ফাগুন মাসে আরও এক কিস্তি সার প্রয়োগ করা উত্তম।

      পানি সেচ ও নিষ্কাশন : শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিশেষ করে ফল ধারনের পর এবং ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় ২-৩টি সেচ প্রয়োগ করা আবশ্যক। প্লাবন সেচ না দিয়ে রিং বা বেসিন পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে পানি সাশ্রয় হবে। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা অতীব জরুরি। এজন্য বর্ষার শুরুতেই বিভিন্নমুখী নিষ্কাশন নালা তৈরি করতে হবে।রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন

      ফলদ গাছের প্রতিষ্ঠাকালে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এজন্য নিয়মিত বাগান পরিদর্শন এবং প্রতিটি গাছ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা নিলে বাণিজ্যিকভাবে বাগান স্থাপন লাভজনক হবে।

      Professor Answered on June 17, 2019.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.