কিস্তিতে মোহরানার টাকা পরিশোধ করে কীভাবে ডিভোর্স দেয়া যায়, বলবেন প্লিজ?
আমি প্রবাসী একজন। আমার বিয়েটা অনেকাংশে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে হয়েছিল। এর মোহরানা করা হয়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। আমি এই বিষয়ে খুব বিপদে আছি। আমাকে কি জানাতে পারেন যে কিস্তিতে কীভাবে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে আমার স্ত্রীকে কীভাবে ডিভোর্স দেয়া যায়?
দেনমোহরের পরিমাণ সাধারণত পাত্রের আয় ও পাত্রীর পারিবারিক অবস্থার উপরে নির্ধারিত হয়ে থাকে। আপনি বলছেন যে অনেকটা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে আপনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু ব্ল্যাকমেইল কে বা কীভাবে করেছে তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেন নি। তবে বাংলাদেশের আইনে দেনমোহরের টাকা কিস্তিতে দেয়ার কোনো নিয়মই নেই। এটি একবারে পরিশোধের কথা বলা আছে আইনে। তাই আপনাকে ডিভোর্স দিতে হলে সম্পূর্ন টাকা একবারেই পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া দেনমোহর সম্পর্কে আরও বিশদ ব্যাখ্যা জেনে নিন।
দেনমোহর :
দেনমোহর স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারিত হয়। মুসলিম বিয়েতে এটি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত। দেনমোহর হিসেবে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়। দেনমোহর নির্ধারণের সময় সামাজিক মর্যাদা এবং বাবার পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যের দেনমোহরের পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ করা যায় কিংবা স্বামী কর্তৃক যেকোনো সময় দেনমোহরের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। মুসলিম বিয়েতে বিয়ের পর অবশ্যই স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে।
স্ত্রী আগে তালাক দিলে কি দেনমোহর দিতে হয়?
অনেক সময় দেনমোহর নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। অনেক ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা হয় না। স্ত্রী যেহেতু নিজ ইচ্ছা থেকে এবং নিজে উদ্যোগী হয়ে তালাক দিচ্ছেন, তাই তাঁর দেনমোহরের টাকা না দিলেও চলবে—এটি ভুল ধারণা। মনে রাখতে হবে, স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। তবে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য জীবনযাপন না হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করা যাবে।
দেনমোহর আদায়ের পদ্ধতি
দেনমোহর দুই প্রকার। একটি তাৎক্ষণিক দেনমোহর, যা স্ত্রীর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু করতে অস্বীকার করতে পারেন।
আরেকটি হচ্ছে বিলম্বিত দেনমোহর। বিলম্বিত দেনমোহর বিবাহবিচ্ছেদ অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া স্বামী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রীকে বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত দেনমোহরের কিছু পরিমাণ বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক দেনমোহর হিসেবে দেওয়া হয় এবং তা কাবিননামায় লিখিত থাকে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়।
আইন অনুযায়ী দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কারণ, দেনমোহর সব সময়ই স্বামীর ঋণ। স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারবেন। দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী ওই দাবি পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থায় স্বামী অবশ্যই তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন।
এছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলে বা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী তাঁর দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে অবশ্যই তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বামীর মৃত্যু হলেও বকেয়া দেনমোহর একটি ঋণের মতো। এটি শোধ করতেই হয়। স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আদায় করা যায়।
স্ত্রী আগে মারা গেলেও দেনমোহর মাফ হয় না। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহরের হকদার। তারাও মামলা করার অধিকার রাখে।
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সূত্র : প্রথমআলো