কি করলে জীবনে আফসোস থাকবে না।?

    কি করলে জীবনে আফসোস থাকবে না।?

    Add Comment
    1 Answer(s)

      এটার উত্তর আসলে এককথায় দোবার মতো না। একটু গুছিয়ে ভেঙেচুরে লিখলে আমাদের সকলের জন্যই বুঝতে সুবিধা হবে।

      প্রথমত, আফসোস আসলে কি?

      আফসোস হচ্ছে, কোনো মানুষ যখন তার প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষার কোনো জিনিস পাওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ কোনো একটা কারণে সেটা পাওয়া থেকে ব্যর্থ হয় ঠিক এমন মুহুর্তের অনুভূতি বা বা এই ব্যাপারটা নিয়ে তার পীড়াদায়ক চিন্তাভাবনা।

      আরো সহজ করে বললে, আফসোস হচ্ছে একজন মানুষের নিজস্ব চিন্তা, যেটা তাকে পীড়া দেয়। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে সবসময় মানুষটা ইচ্ছে করে এমন পীড়াদায়ক চিন্তাভাবনা করে। বেশিরভাগ সময়ই অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এমন চিন্তাভাবনা তার মস্তিষ্ক থেকে আপনা-আপনিই উদ্ভূত হয়।

      দ্বিতীয় যে ব্যাপারটা আসবে সেটা হলো, আফসোস আসলে কেন হয়?

      আফসোস হবার সবচেয়ে স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে মানুষের আবেগ। ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে, আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই আবেগ ব্যাপারকে মোটাদাগে নেগেটিভভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। তবে তাদের সাথে আমার কিছুটা দ্বিমত আছে। আসলে এই আবেগ ব্যাপারটা আছে দেখেই আমরা মানুষেরা আসলে এখনো এতো সুন্দর সাবলীল জীবনযাপন করতে পারছি। আবেগ আছে এজন্যই আমরা এখনো কুটিলতা মুক্ত নির্ভেজাল জীবনযাপন কিছুটা হলেও করতে পারি। অথচ এই আবেগ না থাকলে মানুষ আসলে যন্ত্রের মতো হয়ে যেত। যার আসলে কোনো সুখ-দুঃখের অনুভূতি বলতে কিছু থাকতো না। এজন্যই আবেগ ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষের জন্য। আবেগ আছে এজন্যই আমরা ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব করতে পারি। তবে একথা অবশ্যই সত্য যে, আবেগের অনেক ক্ষতিকর দিক আছে এবং আমরা মানুষেরা স্বাভাবিক ভাবেই সেই ক্ষতিকর দিকগুলো দিয়েই বেশি আক্রান্ত হই। এজন্যই আসলে আমাদের মাঝে আবেগকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়। এজন্যই আমাদের উচিত আবেগকে কিছুটা হলেও বাস্তবতার নিরিখে নিয়ন্ত্রণের সীমারেখায় আবদ্ধ রাখা।

      তো মানুষের আফসোসের ব্যাপারটাও শুরু হয় এই আবেগ থেকে। ধরুন, আপনি বহুদিন ধরে একটি বিড়াল পালন করেন। তো খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেই বিড়ালের সাথে আপনার সুন্দর ভালোবাসাময় একটা স্নিগ্ধ সম্পর্ক হয়ে যাবে। আপনি তাকে খাবার দিবেন, আপনি তার খোঁজখবর রাখবেন। এভাবেই একে একে বিড়ালটার সাথে আপনার খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। কিন্তু একদিন হুট করে দেখলেন আপনার বিড়ালটা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মারা গিয়েছে। তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই আপনি আবেগাপ্লুত হয়ে যাবে আপনার অতীতের বিড়ালের সাথে কাটানো সেই কথাগুলো মনে করে। কেননা আপনি জানেন, এই বিড়ালটার সাথে আপনি আর কখনোই এমন মুহুর্ত কাটাতে পারবেন না। তো এইযে আপনার এই চিন্তাটাই আসলে আপনাকে পীড়া দিচ্ছে, আর এজন্যই আপনি আফসোসের আগুনে দাহ হচ্ছেন।

      এবার ব্যাপারটা আরেক ভাবে ব্যাখ্যা করি, ধরুন আপনি আপনার স্বপ্নের কোনো জিনিসের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনার প্রত্যাশা হচ্ছে আপনি হয়তো আর অল্প কিছুদিনের ভেতরেই আপনার স্বপ্নের জিনিসটার মুখোমুখি হতে চলেছেন। তো ব্যাপারটা যখন এমন হয় তখন আসলে আমাদের মস্তিষ্ক আসলে আমাদের সাথে একটা মজার খেলা খেলে, সে তখন আমাদেরকে নিয়ে কল্পনার মেঘে ভেসে ভবিষ্যতে পাড়ি জমায়। মস্তিষ্ক তখন আমাদের সুখানুভূতি দেভার জন্য আমাদের দিয়ে সব অদ্ভুত সুন্দর সুন্দর কল্পনার উদ্ভব ঘটায়। যেগুলোর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসরণ হয় এবং আমরা আনন্দ অনুভব করি। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত মস্তিষ্ক আসলে এভাবে আমাদের নিয়ে খেলতে থাকে। এজন্য দেখবেন কোনো মানুষের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরের সময়ের চেয়ে সেটার জন্য অপেক্ষার সময়টা বেশি সুখকর হয়, যদি সে জানে তার স্বপ্নটা পূরণ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং অপেক্ষার সময়টাও বেশি বড় নয়। অন্যদিকে স্বপ্ন পূরণ হবার পর হয়তো হাতগোনা কয়েকদিন আনন্দ হয়, কেননা মস্তিষ্ক তখন এই নির্দিষ্ট ব্যাপার নিয়ে আপনাকে আর কল্পনার সাগরে ভাসিয়ে ডোপামিন নিঃসরণ করতে পারেনা ফলে এই ব্যাপারে আপনার আনন্দও কমে আসে দিনদিন, তবে আক্ষেপ বা আফসোস কোনোটাই আসলে থাকেনা স্বপ পূরণ হলে। (যদিনা সেই স্বপ্ন পূরণের পরে আবার সেটা তার জন্য কোনো দুর্দশা বয়ে আনে) কিন্তু ব্যাপারটা যদি এতো সুন্দর ভাবে না ঘটে? আদতে তো মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয়না, না হওয়ার একটা সম্ভাবনা সবসময়ই থেকে যায়। কেননা আমরা কেউই আসলে ভবিষ্যৎ জানিনা। তো ব্যাপারটা যদি এমন ঘটে যে, আপনি ভাবলেন আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে, সে অনুযায়ী আপনার মস্তিষ্কও সুন্দর মতো ডোপামিন নিঃসরণ করে আপনাকে আনন্দিত করতে লাগলো প্রতিনিয়ত। কিন্তু হুট করে আপনি দেখলেন আপনার এতো শখের স্বপ্নটা আর পূরণ হচ্ছে না। তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই মস্তিষ্কও আর এই ব্যাপারে আপনাকে আনন্দ দেবার জন্য ডোপামিন নিঃসরণ করবে না। তখন আসলে আপনার শুরু হবে না পাবার আক্ষেপ। যেগুলো এতোদিন আপনি কল্পনা করেছেন সেগুলো আর পূরণ করতে পারবেন না এই যাত্রায় এটা ভেবে আফসোস।

      তো সত্য বলতে আফসোস আসলে এভাবেই আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকালাপের ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় বা বলতে পারেন আমরাই তৈরি করি অদ্ভুত সব চিন্তার মাধ্যমে।

      এতোক্ষণে হয়তো আপনি বলতেই পারেন, এখানে আফসোস থাকা না থাকার আলোচনা কোথায়? আসছি আপনার উত্তরে, আসলে একটা বিষয় সম্পর্কে আমাদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকলে বা আমরা যদি সমস্যাই খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে আসলে সমাধান পাওয়াটা খুবই দুষ্কর। এজন্যই আসলে সমস্যাটা বোঝার জন্য এটুকু আলোচনা।

      তৃতীয়ত, কিভাবে আফসোসহীন জীবন কাটাবো?

      সত্য কথা বলতে এখানে হাতে-কলমে শিখিয়ে দেবার মতো কোনো সমাধান আসলে নেই। এখানে যেটা আছে সেটা আসলে কিছু বিষয়ের সমন্বয়ঃ- বিশ্বাস, মস্তিষ্কের বাজিমাত, আশা।

      ★বিশ্বাসঃ এই ব্যাপারটাকেই আমি সবার ওপরে রাখতে চাই। সত্য বলতে এই পৃথিবীতে আপনাকে সুখী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাসী মানুষ হতে হবে। আপনাকে অবশ্যই মহান সৃষ্টিকর্তার ওপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তাঁর ক্ষমতার ওপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দয়া এবং সর্বোপরি তাঁর পরিকল্পনার প্রতি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আপনি যখন আপনার সৃষ্টিকর্তাকে এসকল ক্ষমতাসহ তাঁর আরো যত ক্ষমতা আছে সকল কিছুর সহিত পূর্ণাঙ্গরুপে বিশ্বাস করবেন তখন আপনার কাজ আসলে হয়েই গেছে। কেননা যে আসলে এ-ব্যাপারে বিশ্বাস করে যে, তার সৃষ্টিকর্তা সকল কিছু করতে সক্ষম এবং তাঁর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম তখন আসলে সে ব্যক্তির আফসোস করবার কিছু থাকেনা বা থাকবার কথাও নয়। আমরা আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ হলো খুশি আর পূরণ না হলে আফসোস করি বা কষ্ট পাই। কিন্তু একথা বেমালুম ভুলে যাই যে, স্বপ্ন পূরণ হওয়াটা ছিল আমাদের নিজেদের ইচ্ছে আর পূরণ না হওয়াটা স্বয়ং আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিনি সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপতি তার ইচ্ছে। অবশ্যই আমাদের চেয়ে তাঁর ইচ্ছাই আমাদের জন্য বেশি কার্যকর এবং উপযোগী। এতোটুকু বিশ্বাস যার থাকবে তার আসলে জীবনে আফসোস করবার মতো আসলে কিছু আছে বলে আমার মনে হয়না।

      ★মস্তিষ্কের বাজিমাতঃ মানুষের মস্তিষ্ক আসলে এক অদ্ভুত জিনিস, হয় আপনাকে এটার চালকের আসনে বসতে হবে নয়তো সে আপনার চালকের আসনে বসবে। তে এ-পর্যায়ে এসে যেহেতু আপনি আফসোসহীন জীবন চাচ্ছেন এজন্য আপনাকেই আসলে আপনার মস্তিষ্কের চালকের আসনে বসতে হবে। তো এক্ষেত্রে আসলে কাজটা কি? কাজটা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক আসলে অসংখ্য চিন্তা করে সারাদিন এবং আমরা এগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণও করতে পারিনা। কারণ আমরা কেউই সুপার হিউম্যান নয়। তো এক্ষেত্রে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, আপনাকে ওই অসংখ্য চিন্তার মাঝখান থেকে যেসকল জিনিস নিয়ে চিন্তা করলে আপনি পীড়ার সম্মুখীন হয় সেগুলোর জায়গায় এমনকিছু নিছু চিন্তা করতে হবে যেগুলো আপনাকে সুন্দর অনুভূতি দিবে, আশা দিবে।

      ★আশাঃ আমাদের এই আশা বা হোপ ব্যাপারটা ভীষণ দরকার আফসোসহীন জীবনের জন্য। কেননা আপনি যখনই পুরাতন স্বপ্নভঙ্গের পীড়াদায়ক চিন্তাকে এই সুন্দর সাবলীল আশাবাদী চিন্তা দিয়ে বদল করবেন তখনই আপনার মস্তিষ্ক আবার আপনাকে সেই সুন্দর কল্পনার উদ্ভব ঘটিয়ে ডোপামিন নিঃসরণ করে আনন্দের অনুভূতি দিবে। আর আমাদের তো দরকার এটাই। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ রাখা দরকার, আমাদের চিন্তাভাবনা গুলো বাস্তব সম্মত হয় একেবারে অতিরঞ্জিত চিন্তা করাটা আসলে ঠিক নয়। নতুনা আবারো এই স্বপ্ন ভঙ্গের সম্ভাবনা প্রবলভাবে আঘাত হানবে।

      তো সবশেষে থাকবে আবারো শুরুর কথাটা, বিশ্বাস। সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ বিশ্বাস। যেটা আমাদের নির্বিঘ্ন জীবন কাটানোর সবচেয়ে সুন্দর এবং কার্যকারী টোটকা।

      চতুর্থতঃ আফসোস ছাড়া জীবন কি খুব সুন্দর?

      এককথায় উত্তর হচ্ছে, না। আপনার জীবনে যদি কোনো আফসোস না থাকে তাহলে আপনি বেঁচে থাকার আনন্দটা হারিয়ে ফেলবেন। তখন জীবনটা অর্থহীন মনে হবে অনেকদিক দিয়েই। আসলে আফসোস থেকে মানুষ আবার নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নগুলো নিয়েই আশায় বুক বাঁধে, এই স্বপ্নগুলোই মানুষকে বড় করে তোলে আর এভাবেই মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায়। আসলে আফসোস আছে বিধায় মানুষ বড় হতে চায়, বড় হতে পারে। এজন্য জীবনে আসলে অর্থপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য হলেও কিছুটা আফসোস দরকার।

      Professor Answered 6 days ago.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.