কীভাবে আমি সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারি?
কীভাবে আমি সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারি?
এখানে “সবার” বলতে ধরে নিচ্ছি কোন একটা বিশেষ এলাকা কিংবা সম্প্রদায়ের অভ্যন্তর। আপনি তখনই সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন যখন আপনি এমন কোন কাজ করবেন বা কথা বলবেন যা ব্যক্তি বিশেষ সবার কাজে লাগবে এবং সবাই পছন্দ করবে। মনে করুন আপনি একজন আত্মবিশ্বাসি মানুষ। আত্মবিশ্বাস থেকে আপনি অনেক কিছু অর্জন করেছেন। আপনার এই গুনের জন্য সবাই আকৃষ্ট হয়। কিন্তু এই আকৃষ্টতা আর জনপ্রিয়তা কি এক?? আপনার গুন থেকে আপনি নিজে লাভ পান, তাতে অন্যদের লাভ কি?? আপনি ততক্ষণই জনপ্রিয় যতক্ষণ আপনি অন্যদের কোন কাজে লাগছেন। এখন কথা হলো, এই জনপ্রিয়তা আসলেই কতটুকু “জনপ্রিয়তা” ??
বলা হয়, সবার প্রতি আন্তরিক হলে জনপ্রিয় হওয়া যায়। আসলেও কি তাই?? আপনি যদি একটা গ্রুপের ভেতর সবার সাথে আন্তরিকতা ও নম্র আচরণ দেখান, গ্রুপের কেউ কেউ এটাকে আপনার দুর্বলতা হিসেবে দেখবে, নানাভাবে এর সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে, অতি আন্তরিকতা দেখাতে অনেকভাবেই হয়তো আপনাকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে যার ফলে দিনশেষে আপনার অর্জনের খাতা থাকবে শূণ্য। কিন্তু এই তারাই আবার নানাভাবে আপনাকে ঠিক এভাবেই আন্তরিক থাকার জন্য সুন্দর সুন্দর কথা বলে উৎসাহ দেবে যাকে আপাত দৃষ্টিতে তাদের কাছে আপনার জনপ্রিয়তার লক্ষন বলে মনে হলেও, আদতে তারা আরো দীর্ঘমেয়াদে আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার বন্দোবস্ত করছে। আপনি সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন, মজা করেন, সবাইকে আনন্দে রাখতে চান, তারপরেও অনেকেই দেখবেন এই স্বভাবের জন্যই আপনাকে ব্যক্তিত্বহীন, জোকার এসব বলে ভাববে। আপনি একটু গাম্ভীর্য বজায় রেখে চললেন কারো সাতে পাঁচে থাকলেন না। অনেকেই ভাববে আপনি অহংকারী, অনেক ভাব দেখান। আপনার দক্ষতাবলে আপনি প্রমোশন পেলেন, ভাবছেন এতে জনপ্রিয় হলেন। মোটেই না। আপনার চারপাশের মানুষ আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে আপনার অর্জনের জন্য ভদ্রতা স্বরূপ। কিন্তু তা আপনাকে জনপ্রিয় করছেনা, কারন প্রমোশন পেয়েছেন তা আপনার লাভ, তাতে তাদের কি। বরং অনেকে ঈর্ষান্বিত হবে। আবার, বিশেষ কোন বিষয় নিয়ে আপনার মতামত সিংহভাগ লোকের পক্ষে গেল যার ফলে তারা আপনাকে নিয়ে খুব খুশি হয়ে কাঁধে তুলে নেবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যখনই আপনি এমন কোন মন্তব্য করবেন যা তাদের পছন্দসই হয়নি কিন্তু আপনার নিজের জন্য তা প্রয়োজন, এক মুহুর্তে তারাই আপনাকে আবার ছূঁড়ে ফেলে দেবে। আপনি দেশের একজন খুব জনপ্রিয় খেলোয়ার। দেশভর্তি আপনার ভক্ত সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেই আপনি হঠাৎ রাজনীতি তে যোগ দিলেন আপনার পছন্দের কোন দলে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার পছন্দের দল থাকতেই পারে এবং আর সব সাধারণ মানুষের মত আপনারো অধিকার আছে রাজনীতি করার। কিন্তু এই সাধারণ বিষয়টাই তখন অনেকেই মেনে নেবেনা। মুহূর্তে আপনার জনপ্রিয়তা অর্ধেক হয়ে যাবে, তখন বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের কাছে আপনি আর খেলোয়ার থাকবেন না। আপনার প্রতিটা কাজকর্মে তারা আপনাকে আপনার রাজনৈতিক দল দিয়ে বিচার করবে, গালি দেবে। আপনি যদি রাজনীতিতে না এসে শুধু খেলোয়ার হিসেবেই থেকে যেতেন তবে আগের মতই জনপ্রিয় থাকতেন, তবে কবর দিতে হতো নিজের মনের একটা নির্দোষ ইচ্ছা। এবার বলুন, চান এমন “জনপ্রিয়তা”?!!
নাতিদীর্ঘ এই লেখাটি পড়ে থাকলে একটা বিষয় আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাওয়ার কথা, নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা বলে কিছু হয়না। মূলত জনপ্রিয়তা এক মরিচীকার নাম। যারা এর পিছনে হন্যে হয়ে ছোটে, তাদের কপালে ঐ তথাকথিত জনপ্রিয়তাই জোটে, অন্য সব দিক থেকেই তাদের ঝুলি থাকে শূন্য। সবাইকে খুশি করার নেশা থেকে মূলত আপনি একটা ফাঁদে আটকে গেলেন। শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার কথা ভেবে চলতে গেলে অনেক সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এটা মনে রাখা জরুরি, সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে গেলে কখনোই সবাইকে সবসময় খুশি রাখা সম্ভব না। সেই চেষ্টা করাও উচিত না। ড্যাম কেয়ার ভাবে চলুন। নিজের জন্য যেভাবে বাঁচলে ভাল হয় সেভাবে চলুন। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে হবে সেটা যাই হোক না কেন এমন মানসিকতা নিয়ে চলুন। মনে রাখুন, যে আপনাকে গ্রহন করবে তাকে আপনার পুরো সত্তা সহ গ্রহন করতে হবে। যার পছন্দ করার সে এমনিই করবে, যে করবেনা সে আপনার জন্য না।