কুরআন নিয়ে শপথ করার হুকুম কি?

কুরআন নিয়ে শপথ করার হুকুম কি?

Add Comment
1 Answer(s)

    এই প্রশ্নের উত্তর একটু বিস্তারিতভাবে দেয়া প্রয়োজন। যখন একজন ব্যক্তি কোন বস্তর নামে শপথ করে, তখন উক্ত বস্তকে সম্মানিত মনে করেই করে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ বা তাঁর অন্য কোন নাম অথবা কোন সিফাত (গুণাবলী) ব্যতীত অন্য বস্তর নামে শপথ করা জায়েয নেই। যেমন কেউ বলল, আল্লাহর শপথ! আমি একাজটি অবশ্যই করব অথবা বলল কাবা ঘরের প্রভুর শপথ! আল্লাহর বড়ত্বের শপথ! ইত্যাদি।

    কুরআন মাজীদ আল্লাহর কালাম (কথা)। আল্লাহর কথা তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত। কথা বলা আল্লাহর সত্বাগত সিফাত। তিনি সদাসর্বদা এ গুণে গুণান্বিত। যখন ইচ্ছা, তখনই তিনি কথা বলেন। কথা বলার শক্তি থাকা বা বাকশক্তি থাকা একটি পূর্ণতার গুণ। আল্লাহ তাআ’লা সকল দিক থেকে পরিপূর্ণ। তাই কথা বলা আল্লাহর একটি সত্বাগত গুণ। যখন ইচ্ছা, তখনই তিনি কথা বলেন, এই দৃষ্টি কোন থেকে কথা বলা একটি কর্মগত গুণ। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ

    )إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ(

    “তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন ওকে বলেনঃ হয়ে যাও, ফলে তা হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২) এখানে কথা বলাকে ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ যখন ইচ্ছা কথা বলেন। এব্যাপারে আরো অনেক দলীল রয়েছে। যারা বলে আল্লাহ সদাসর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত, কিন্তু আল্লাহর কথা তাঁর সত্বার সাথে সম্পৃক্ত, বাইরে এর কোন প্রভাব নেই বা কেউ তাঁর কথা শ্রবণ করতে পারে না, তাদের মতবাদ সম্পূর্ণ ভুল। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাদের মাযহাব বাতিল হওয়ার ব্যাপারে ৯০টি যুক্তি বর্ণনা করেছেন।

    যেহেতু কুরআন মাজীদে আল্লাহর কালাম রয়েছে, আর আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত, তাই কুরআনের শপথ করা জায়েয আছে। হান্বলী মাযহাবের ফকীহগণ এটাকে বৈধ বলেছেন। শ্রোতাদের বুঝতে অসুবিধা হয় এমন শব্দ উচ্চারণ করে শপথ করা ঠিক নয়। সাধারণ লোকেরা যাতে বুঝতে পারে, এমন শব্দ দ্বারা শপথ করা উচিৎ। কেননা মানুষ বুঝতে পারে এবং তাদের অন্তরে স্বসি- অর্জিত হয়, এমন বক্তব্য মানুষের কাছে পেশ করাই উত্তম। শপথ যেহেতু আল্লাহ, তাঁর নাম এবং সিফাতের মাধ্যমেই করতে হবে, তাই গাইরুল্লাহর নামে, নবীর নামে, জিবরীল ফেরেশতার নামে, কাবার নামে বা অন্য কোন মাখলুকের নামে শপথ করা জায়েয নয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

    مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ لِيَصْمُتْ

    “যে ব্যক্তি শপথ করতে চায় সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা যেন চুপ থাকে।” নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

    مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ

    “যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করল, সে কুফরী বা শির্‌ক করল।” কেউ যদি কোন মানুষকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর হায়াত কিংবা অন্য ব্যক্তির নামে শপথ করতে দেখে, তা হলে সে যেন তাকে নিষেধ করে এবং বলে দেয় যে, এটা হারাম। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, আদেশ বা নিষেধ যাতে নম্র ভাষায় হয়। যাতে করে সে সহজেই নসীহত কবূল করতে পারে। কেননা অনেক মানুষ রয়েছে, যারা রাগাম্বিত হয়ে মানুষকে আদেশ-নিষেধ করে থাকে। অনেক সময় তাদের চেহারা রক্তিম হয়ে যায়। মনে হয় সে যেন নিজের প্রতিশোধ নিচ্ছে। এতে করে শয়তান সুযোগ পেয়ে যায়। মানুষ যদি পরস্পরকে সম্মান করতো, হিকমত এবং নম্রতার সাথে তাকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিতো, তা হলে তাদের কথা অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

    إِنَّ اللَّهَ يُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ

    “নিশ্চয় আল্লাহ নম্রতার মাধ্যমে যা দান করেন, কঠোরতার মাধ্যমে তা দান করেন না।”

    একদা জনৈক গ্রাম্যলোক মসজিদে নববীতে এসে পেশাব করে দিল। লোকেরা তাকে ধমকাতে শুরু করল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ধমকাতে নিষেধ করলেন। লোকটি যখন পেশাব শেষ করল, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাছে ডেকে এনে বললেন, এ সকল মসজিদ আল্লাহর ঘর, পেশাব বা ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান নয়। তা কেবলমাত্র আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করা, তাসবীহ পাঠ করা এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জন্যই নির্দিষ্ট। অতঃপর তিনি ছাহাবীদেরকে পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দেয়ার আদেশ দিলেন। এতেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল এবং মসজিদ পবিত্র হয়ে গেল। সাথে সাথেগ্রাম্য লোকটিকে উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যও সফল হয়ে গেল। আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকেও এরূপ হওয়া উচিৎ। আমরা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য পন্থায় সত্যকে তুলে ধরব। আল্লাহ সবাইকে তাওফীক দিন।

    Professor Answered on April 7, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.