কুরআন হাদীসের আলোকে মানব সৃষ্টির রহস্য কি?

কুরআন হাদীসের আলোকে মানব সৃষ্টির রহস্য কি?

Add Comment
1 Answer(s)

    আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲْ ﺧَﺎﻟِﻖٌ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِّﻦ
    ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮْﻥٍ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴْﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲْ
    ﻓَﻘَﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳْﻦَ- ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন
    তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি মিশ্রিত পচা
    কাদার শুকনো মাটি দিয়ে ‘মানুষ’ সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি
    তার অবয়ব পূর্ণভাবে তৈরী করে ফেলব ও তাতে আমি
    আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদায় পড়ে
    যাবে’ (হিজর ১৫/২৮-২৯) । অন্যত্র তিনি বলেন, ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ
    ﻳُﺼَﻮِّﺭُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺣَﺎﻡِ ﻛَﻴْﻒَ ﻳَﺸَﺂﺀُ ﻵ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ- ‏( ﺁﻝ
    ﻋﻤﺮﺍﻥ ৬‏)- ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে
    আকার-আকৃতি দান করেছেন যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি
    ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও মহা
    বিজ্ঞানী’ (আলে ইমরান ৩/৬) । তিনি আরও বলেন, ﻱْﻢُﻜُﻘُﻠْﺧَ
    ﻓِﻲْ ﺑُﻄُﻮْﻥِ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗِﻜُﻢْ ﺧَﻠْﻘًﺎ ﻣِّﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﺧَﻠْﻖٍ ﻓِﻲ ﻇُﻠُﻤَﺎﺕٍ ﺛَﻼَﺙٍ- ‏( ﺯﻣﺮ ৬‏)-
    ‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেন
    একের পর এক স্তরে তিনটি অন্ধকারাচ্ছন্ন আবরণের
    মধ্যে’ (যুমার ৩৯/৬) । তিনটি আবরণ হ’ল- পেট, রেহেম বা
    জরায়ু এবং জরায়ুর ফুল বা গর্ভাধার।
    উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আদম সৃষ্টির তিনটি পর্যায় বর্ণনা করা
    হয়েছে। প্রথমে মাটি দ্বারা অবয়ব নির্মাণ, অতঃপর তার আকার-
    আকৃতি গঠন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহে শক্তির আনুপতিক হার
    নির্ধারণ ও পরস্পরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এবং সবশেষে
    তাতে রূহ সঞ্চার করে আদমকে অস্তিত্ব দান। অতঃপর
    আদমের অবয়ব (পাঁজর) থেকে কিছু অংশ নিয়ে তার জোড়া
    বা স্ত্রী সৃষ্টি করা। সৃষ্টির সূচনা পর্বের এই কাজগুলি আল্লাহ
    সরাসরি নিজ হাতে করেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫) । অতঃপর এই
    পুরুষ ও নারী স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে প্রথম যে
    যমজ সন্তান জন্ম দেয়, তারাই হ’ল মানুষের মাধ্যমে সৃষ্ট
    পৃথিবীর প্রথম মানব যুগল। তারপর থেকে এযাবত স্বামী-
    স্ত্রীর মিলনে মানুষের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
    শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদরাজি, জীবজন্তু ও প্রাণীকুলের সৃষ্টি
    হয়েছে মাটি থেকে। আর মাটি সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে।
    পানিই হ’ল সকল জীবন্ত বস্ত্তর মূল (ফুরক্বান ২৫/৫৪) ।
    মৃত্তিকাজাত সকল প্রাণীর জীবনের প্রথম ও মূল একক
    (Unit) হচ্ছে ‘প্রোটোপ্লাজম’ (Protoplasm)। যাকে বলা
    হয় ‘আদি প্রাণসত্তা’। এ থেকেই সকল প্রাণী সৃষ্টি
    হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলী একে Bomb
    shell বলে অভিহিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাটির
    সকল প্রকারের রাসায়নিক উপাদান। মানুষের জীবন বীজে
    প্রচুর পরিমাণে চারটি উপাদান পাওয়া যায়। অক্সিজেন,
    নাইট্রোজেন, কার্বন ও হাইড্রোজেন। আর আটটি পাওয়া
    যায় সাধারণভাবে সমপরিমাণে। সেগুলি হ’ল- ম্যাগনেশিয়াম,
    সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, সালফার ও
    আয়রণ। আরও আটটি পদার্থ পাওয়া যায় স্বল্প পরিমাণে। তাহ’ল:
    সিলিকন, মোলিবডেনাম, ফ্লুরাইন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ,
    আয়োডিন, কপার ও যিংক। কিন্তু এই সব উপাদান সংমিশ্রিত করে
    জীবনের কণা তথা ‘প্রোটোপ্লাজম’ তৈরী করা সম্ভব
    নয়। জনৈক বিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এসব মৌল উপাদান
    সংমিশ্রিত করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন
    এবং তাতে কোন জীবনের ‘কণা’ পরিলক্ষিত হয়নি। এই
    সংমিশ্রণ ও তাতে জীবন সঞ্চার আল্লাহ ব্যতীত কারু পক্ষে
    সম্ভব নয়। বিজ্ঞান এক্ষেত্রে মাথা নত করতে বাধ্য
    হয়েছে।
    প্রথম পর্যায়ে মাটি থেকে সরাসরি আদমকে অতঃপর আদম
    থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করার পরবর্তী পর্যায়ে
    আল্লাহ আদম সন্তানদের মাধ্যমে বনু আদমের বংশ বৃদ্ধির
    ব্যবস্থা করেছেন। এখানেও রয়েছে সাতটি স্তর। যেমন:
    মৃত্তিকার সারাংশ তথা প্রোটোপ্লাজম, বীর্য বা শুক্রকীট,
    জমাট রক্ত, মাংসপিন্ড, অস্থিমজ্জা, অস্থি পরিবেষ্টনকারী মাংস
    এবং সবশেষে রূহ সঞ্চারণ (মুমিনূন ২৩/১২-১৪; মুমিন ৪০/৬৭;
    ফুরক্বান ২৫/৪৪; তারেক্ব ৮৬/৫-৭) । স্বামীর শুক্রকীট
    স্ত্রীর জরায়ুতে রক্ষিত ডিম্বকোষে প্রবেশ করার পর
    উভয়ের সংমিশ্রিত বীর্যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে (দাহর
    ৭৬/২) । উল্লেখ্য যে, পুরুষের একবার নির্গত লম্ফমান
    বীর্যে লক্ষ-কোটি শুক্রাণু থাকে। আল্লাহর হুকুমে
    তন্মধ্যকার একটি মাত্র শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ
    করে। এই শুক্রকীট পুরুষ ক্রোমোজম Y অথবা স্ত্রী
    ক্রোমোজম X হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেটি স্ত্রীর
    ডিম্বের X ক্রোমোজমের সাথে মিলিত হয়, সেভাবেই
    পুত্র বা কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আল্লাহর হুকুমে।
    মাতৃগর্ভের তিন তিনটি গাঢ় অন্ধকার পর্দার অন্তরালে এইভাবে
    দীর্ঘ নয় মাস ধরে বেড়ে ওঠা প্রথমত: একটি পূর্ণ জীবন
    সত্তার সৃষ্টি, অতঃপর একটি জীবন্ত প্রাণবন্ত ও প্রতিভাবান শিশু
    হিসাবে দুনিয়াতে ভূমিষ্ট হওয়া কতই না বিষ্ময়কর ব্যাপার। কোন
    মানুষের পক্ষে এই অনন্য-অকল্পনীয় সৃষ্টিকর্ম আদৌ
    সম্ভব কী? মাতৃগর্ভের ঐ অন্ধকার গৃহে মানবশিশু সৃষ্টির
    সেই মহান কারিগর কে? কে সেই মহান আর্কিটেক্ট, যিনি ঐ
    গোপন কুঠরীতে পিতার ২৩টি ক্রোমোজম ও মাতার ২৩টি
    ক্রোমোজম একত্রিত করে সংমিশ্রিত বীর্য প্রস্ত্তত
    করেন? কে সেই মহান শিল্পী, যিনি রক্তপিন্ড আকারের
    জীবন টুকরাটিকে মাতৃগর্ভে পুষ্ট করেন? অতঃপর ১২০ দিন
    পরে তাতে রূহ সঞ্চার করে তাকে জীবন্ত মানব শিশুতে
    পরিণত করেন এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে
    বাইরে ঠেলে দেন (আবাসা ৮০/১৮-২০ )। বাপ-মায়ের
    স্বপ্নের ফসল হিসাবে নয়নের পুত্তলি হিসাবে? মায়ের
    গর্ভে মানুষ তৈরীর সেই বিষ্ময়কর যন্ত্রের দক্ষ কারিগর ও
    সেই মহান শিল্পী আর কেউ নন, তিনি আল্লাহ! সুবহানাল্লাহি ওয়া
    বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম!!

    Professor Answered on August 18, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.