কোন মানত আদায় করা যাবে না?
কোন মানত আদায় করা যাবে না?
এক. মানত দুই প্রকার।
(ক) মানতের বিষয় হবে শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কাজ। যেমন কেউ বলল, যদি আমি সুস্থ হই তাহলে তিনটি রোজা রাখব। এখানে মানতের বিষয়টি শরিয়ত অনুমোদিত একটি ইবাদত ও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়। শর্ত পূরণ হলে এ মানত আদায় করতে হবে।
(খ) শরিয়ত নিষিদ্ধ-মন্দ ও আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজ করার মানত। যেমন কেউ বলল, আজ যদি অমুক দল খেলায় জিতে যায় তাহলে আমি তোমাদেরকে মদ পান করাব। এ মানত পূরণ করা মোটেই জায়েয নয়। মানতের শর্ত পূরণ হোক বা না হোক। কারণ এতে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা বিদ্যমান।
এ ছাড়াও আরেক প্রকার মানত আছে যা অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটাও পালন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন কেউ বলল, আমি যদি রোগমুক্ত হই। তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পায়ে হেটে টঙ্গীর ইজতেমায় যোগ দেব। এ মানত একটি অনর্থক। ময়মনসিং থেকে টঙ্গী পর্যন্ত হেটে যাওয়ার মধ্যে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। কাজেই এ ধরনের মানত পূরণ করা হবে অর্থহীন কাজ তাই তা পূরণ করা হবে না।
যেমন হাদীসে এসেছে :
عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَىَ شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ ” مَا بَالُ هَذَا ” . قَالُوا نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ . قَالَ ” إِنَّ اللَّهَ عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفْسَهُ لَغَنِيٌّ ” . وَأَمَرَهُ أَنْ يَرْكَبَ .
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এর কি হয়েছে? তারা উত্তরে বলল, তিনি পায়ে হেঁটে চলার মানত করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ ব্যক্তি নিজেকে কষ্ট দেয়ায় আল্লাহর কোনো লাভ নেই। এবং তাকে বাহনে চড়ার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম হাদীস নং ৪৩৩৬)
হাদীসে আমরা দেখতে পেলাম, লোকটি এমন একটি কাজের মানত করেছিল, যা আদায়ে তার কোনো লাভ নেই। কিংবা অন্য কারোও কোনো উপকার নেই। এটি একটি অনর্থক কাজ। যা করে নিজেকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ মানত পালন থেকে নিষেধ করেছেন। অতএব এ ধরনের মানত কেউ করলে তা পূরণ করা যাবে না।
আরেকটি হাদীস দেখুন :
عن ابن عباس رضي اللَّه عنهما قال : بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ ، ويصومَ ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ » رواه البخاري .
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খোতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবিগণ বললেন, আবু ইসরাইল। মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না। ছায়ায় (বিশ্রামে) যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে আদেশ দাও যেন কথা বলে, ছায়াতে যা এবং রোজা পূর্ণ করে। (বুখারি)
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম
এক.নিজ সত্তা বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর এমন মানত করলে তা আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। পাশাপাশি রোজা রাখারও মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা রাখতে বললেন আর অন্যগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোনো বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তদ্রুপ অবৈধ কোনো কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।
দুই. কৃত মানত যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোনো বিষয় হয় তবে আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
من نذر أن يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه
যে আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানি করার মানত করেছে সে যেন তাঁর নাফরমানি না করে।
তিন. কোনো বিষয়েই মানত করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। কারণ এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
চার. ইবাদত-বন্দেগি ও মানতের নামে নিজের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবু ইসরাইল ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা ছিল মধ্যপন্থার বিপরীত । তাই তা পরিত্যাগের নির্দেশ দেয়া হল।
পাঁচ. খোতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাইতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
ছয়. খুতবার সময় খতীব প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো কিছুর আদেশ বা নিষেধ করতে পারেন।