ক্রিকেটে ব্যবহৃত হটস্পট সিস্টেম সম্পর্কে জানাতে চাই।
ক্রিকেটে ব্যবহৃত হটস্পট সিস্টেম সম্পর্কে জানাতে চাই।
ক্রিকেটে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী প্রযুক্তি হল হটস্পট। হটস্পট জিনিসটা আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত ব্যবহার না হলেও বলা চলে এখন বেশ কমন একটা প্রযুক্তি। আবার সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রযুক্তিও বলতে পারেন। হটস্পট মূলত এসেছে স্নিকোমিটাররের পরিপূরক হয়ে, স্নিকোমিটার ব্যবহারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে হটস্পট প্রযুক্তি। আপনার যদি পদার্থবিদ্যায় ভালো জ্ঞান থাকে তাহলে আপনার ওসিলোস্কোপ নামের যন্ত্রটির নাম শোনার কথা। এটির মূল কাজ হলো বিভিন্নরকম ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের গঠনপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে একটা গ্রাফিকাল শেপ দেখানো। স্নিকোমিটার ব্যবহারের জন্য একটা হাইলি সেনসিটিভ মাইক্রোফোন লাগে যেটা স্ট্যাম্পের মধ্যে বা গোড়ায় লাগানো থাকে। এই মাইক্রোফোনযুক্ত থাকে ওসিলোস্কোপের সাথে। এই মাইক্রোফোন তার গৃহিত শব্দতরংগকে ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালে রূপ দেয় এবং ওসিলোস্কোপে পাঠায়। তখন ওসিলোস্কোপ সিগন্যালটাকে গ্রাফের মাধ্যমে প্রকাশ করে। খেলা শুরু হবার সাথে সাথে ওসিলোস্কোপ চালানো হয় এবং, বল বাই বল রেকর্ড করা হয়।
এই গ্রাফের শেপটা হয় বিভিন্ন শব্দের জন্য বিভিন্নরকম। আমরা অবশ্য যে বলে আপিল হয় সেইটাই দেখি। ধরুন বল যদি প্যাডে লাগে তাহলে শব্দ বেশি হবে এবং ওসিলোস্কোপ যে সিগন্যালটা বা গ্রাফটা দেখাবে সেটা অনেকটা ফ্ল্যাট বা চ্যাপটা ধরনের হবে। আর যদি ব্যাটের সূক্ষ্ম কিনারা ছুঁয়ে যায় তাহলে খুব চিকন বা শার্প একটা শেপের গ্রাফ দেখা যাবে। এই পদ্ধতির সমস্যা হল, এটা খুব বেশি শব্দ ধরতে পারে না, আর একইসাথে বল ব্যাটের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময়ে যদি হেলমেট বা গ্লাভস নড়ে উঠে তাহলে কনফিউজিং রেজাল্ট আসে এজন্য স্নিকোমিটার কখনোই নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি ছিল না।
আর এজন্যই ক্রিকেটের আঙিনায় পা রেখেছে হটস্পট প্রযুক্তি। আগে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো সেনাবাহিনীতে ট্যাঙ্ক এবং জেট ফাইটারের অবস্থান নির্দেশ করার জন্য। এই প্রযুক্তির আবিষ্কারক ফরাসি বিজ্ঞানী নিকোলাস বিয়ন। অস্ট্রেলিয়ার বিবিজি (B. B. G) স্পোর্টস সর্বপ্রথম টিভিতে ব্যাবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলে, পরে নাইন নেটওয়ার্ক এর স্বত্ব কিনে নেয়। এই বিবিজি স্পোর্টসই স্নিকোমিটারও প্রথম প্রবর্তন করে টিভির জন্য। ক্রিকেটের মাঠে হটস্পট প্রথম প্রবেশ করে ২০০৭ সালের অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার গ্যাবাতে। ২০০৯ সাল থেকে আইসিসি পরীক্ষামূলকভাবে টিভি আম্পায়ারকে হটস্পট ব্যবহারের অনুমতি দেয় এবং পরে রেফারেল সিস্টেমে এর শর্তসাপেক্ষ ব্যাবহার অনুমোদন করে।
হটস্পট সিস্টেমে যে ক্যামেরাগুলো লাগে সেগুলো হলো থার্মাল ক্যামেরা বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা। এই ক্যামেরাগুলো মাঠের যেকোন দুই পাশে বসানো হয়। এই ক্যামেরাগুলো অবিরত ছবি ধারণ করতে থাকে আর আমরা শুধু আপিল করা বলটাই দেখি। আমরা জানি ঘর্ষণের ফলে তাপের উদ্ভব ঘটে, তা ঘর্ষণ যতই ছোট হোক না কেন। সেই তাপটা একটা নির্ধারিত তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুযায়ী বিকিরিত হয়। সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর চেয়ে অনেক কম তাই তা সাধারণ টিভি ক্যামেরা দিয়ে দেখা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে ইনফ্রারেড বা থার্মাল ক্যামেরা উপযোগী কারন তারা ওই বিকিরিত তাপের অংশটাকে দেখাতে পারে। বল যখন ব্যাট বা প্যাডে আঘাত করে তখন তাপের উদ্ভব হয়। আর ক্যামেরায় সেই তাপ সৃষ্টির অংশটাই সাদা হয়ে দেখা যায় থার্মাল বা ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে। এই পদ্ধতি প্রায় শতভাগ নিখুঁত যদি না ব্যাটে ভেসলিন বা লুব্রিকেন্ট (পিচ্ছিলকারক) কিংবা সিলিকন টেপ জাতীয় কিছু ব্যবহার না করা হয়।
চার ক্যামেরার হটস্পট প্যাকেজের প্রতিদিনের খরচ প্রায় ১০,০০০ ডলার। আর দুই ক্যামেরার খরচ ৬,০০০ ডলার। অবশ্য খরচ কমানোর গবেষণা চলছে। এর সুফল খুব দ্রুতই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।