গর্ভাবস্থায় ত্বক কীভাবে সুন্দর রাখা যায়?
আমি ৪ মাসের গর্ভবতী। গর্ভধারণের পর থেকে আমার ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি জানতে চাই গর্ভাবস্থায় ত্বক কীভাবে সুন্দর রাখা যায়?
প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। গর্ভধারণের ন্যায় জটিল শারীরিক ও মানসিক পর্যায় কেবল মাত্র একজন নারীই অনুভব করতে পারে। একজন নারী যখন গর্ভাবস্থায় থাকেন তিনি শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তনের মাঝে দিয়ে তার মাতৃত্ব কালীন সময় অতিবাহিত করেন।
গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি ত্বকেও অনেক সমস্যার দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী মা শারীরিক অসুস্থতার কারনে তাঁর ত্বকের তেমন একটা যত্ন নেন না। এ কারণে ত্বকের উজ্জ্বলতা স্বাভাবিক ভাবে নষ্ট হয় তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় মুখের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, ফলে মুখে ব্রণ হয়, ত্বকে টান পড়ায় পেট, পায়ের অনেক অংশ ফেটে যায়। মুখে গলায় ও ঘাড়ে কালো দাগ হতে পারে। তাই প্রয়োজন হয় ত্বকের বিশেষ যত্ন।
গর্ভাবস্থায় ত্বক সমস্যার বেশিরভাগ মায়েরই দেখা যায় সারা শরীরে বিশেষ করে পেট ও হাতের চুলকানি এবং লাল হয়ে যাওয়া একে পলিসরফিক ইরাপশন অব প্রেগনেন্সি বা পিউপিপি বলে। এরকম চুলকানির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, গর্ভবতীর জন্ডিস আছে কিনা দেখে নেয়া উচিত। তবে সাধারণত ক্যালামাইন যুক্ত লোশন ব্যবহার করলে চুলকানির হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যায়। প্রসবের পর এটি আপনা থেকেই মিলিয়ে যায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ভাগে পানি নিয়ে ফুলে উঠে হারপিস ইনফেকশনের মত দেখতে চুলকানি থাকে এরকম ইনফেকশনকে ‘হারপিস জেসটেশন’ বলে। এ রোগের সঙ্গে হারপিস ভাইরাস ইনফেকশনের কোন সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। আবার অনেক সময় গর্ভবস্থা ৪-৫ মাস থাকাকালীন তলপেট, থাই ও বুকে ফাটা এবং লম্বা কুচকানো দাগ দেখা যায় একে স্ট্রেচ মার্ক বা স্ট্রোয় বলে। এই রকম দাগ হঠাৎ মোটা হলেও হতে পারে আবার বয়ঃসন্ধিতেও দেখা দিতে পারে। ত্বকে টান পড়ার জন্য এরকম ফাটা দাগের সৃষ্টি হয়। এটি কোনো অসুখ নয়। এটি হল একটি কসমেটিক সমস্যা। ভিটামিন-ই, অ্যালোভেরা, ট্রেটিনাইসযুক্ত মলমের সাহায্যে এর উপশম হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মুখের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়, ফলে মুখে ব্রণ হয়, ত্বকে টান পড়ায় পেট, পায়ের অনেক অংশ ফেটে যায়। মুখে গলায় ও ঘাড়ে কালো দাগ হতে পারে। অনেক সময় গর্ভবতী থাকাকালীন ত্বকের মধ্যে কালো ছাপ তৈরি হয়। আবার কারও ত্বকের মধ্যে এক অদ্ভুত চমক আসে। তাই এ সময় প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্ন। যেহেতু শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হয় আর চেহারায়ও তার ছাপ পড়ে, এজন্য এসময় থাকতে হবে পরিপাটি, একটু গোছালোভাবে এবং অবশ্যই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ত্বক পরিস্কার রাখতে প্রতিদিন ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
তাছারা গর্ভাবস্থায় ত্বকের যত্নে যা করতে হবেঃ
• গর্ভধারণের প্রথম থেকেই নিয়মিত অলিভ ওয়েল ব্যবহার করুন।
• এ সময় ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়, তাই বাইরে গেলে অথবা রান্না করার সময় সানস্কিন লোশন ব্যবহার করুন।
• পানি শরীরের দূষিত পদার্থকে বাইরে বের করে দেয়, ত্বককে পরিস্কার রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান কর।
• ত্বক মসৃণ রাখতে ময়শ্চারাইজার ক্রিম লাগান।
• শরীর এবং মন ভাল রাখতে বাইরে ঘুরতে যান।
• স্ক্রাবার দিয়েও নিয়মিতভাবে ত্বক পরিস্কার করুন
• হালকা কিছু ব্যায়াম করুন।
• নিয়মিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মত চলতে হবে।