গিটার আবিষ্কারের ইতিহাস জানতে চাই, জানাবেন কি?
গিটার আবিষ্কারের ইতিহাস জানতে চাই, জানাবেন কি?
গিটারের ইতিহাস :
আমাদের প্রিয় বাদ্যযন্ত্রের তালিকায় খুব সহজেই ছয় তারের গিটারের নাম এসে পরে । গিটার বাদ্যযন্ত্রটি বাজানোর ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই এর ব্যাবহার চলে আসছে । লেখক মরিস জে. সামারফিল্ড এর মতে স্পেনে ৪০০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ” সিথারা ” নামক একটি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসেন, যা থেকেই গিটার বাদ্যযন্ত্রটির উদ্ভব । আরবরা “উদ” নামে একটি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করত। তবে আবার অনেকে ধারণা করেন, চার তার সম্বলিত “তানবুর” নামক বাদ্যযন্ত্র থেকে গিটার বাদ্যযন্ত্রটির উদ্ভব। খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ শতকে বর্তমান সিরিয়ায় “হিটরাহিট” নামক এক জাতি বাস করত, তারা এই “তানবুর” বাজাত। গ্রিকরাও এমন একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছিলেন যা থেকে পরবর্তীতে রোমানরা ” সিথারা ” নামক বাদ্যযন্ত্রটি তৈরি করেন ।
“তানবুর”,”উদ” ও “সিথারা” এর থেকেই মূলত গিটারের উদ্ভব । ১২০০ সালে চার তার বিশিষ্ট গিটারের দুটি রুপ বের হয় ,যার একটি হচ্ছে – “মূরিশ গিটার”। যার পিছনের দিক গোলাকার, একটু কম প্রশস্ত ফ্রেটবোর্ড এবং বেশ কয়েকটি সাউন্ড হোল ছিল। অপরটি হচ্ছে -“ল্যাটিন গিটার”। যার ছিল একটি সাউন্ড হোল ও প্রশস্ত ফ্রেটবোর্ড । ১৭৮৮ সালের দিকে এসে জেকব অটো নামে একজন জার্মান বাদ্যযন্ত্রনির্মাতা পাঁচ তার বিশিষ্ট গিটারে ৬ষ্ঠ তার সংযোজিত করেন যা পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এরপর ১৯ শতকে শুরুতে স্পেনের অগাস্টিন কারো, ম্যানুয়াল গিটারেজ এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান গিটার প্রস্তুতকারক গিটারকে বর্তমান রুপ দেন, যা বর্তমানে সকলে ব্যবহার করছে ।
গিটারের প্রকারভেদ :
গিটার একটি বহুল পরিচিত এবং প্রচলিত বাদ্যযন্ত্র। এটি মূলত তারের উপর নির্ভরশীল একটি বাদ্যযন্ত্র। মূলত গিটার তিন প্রকার। যেমনঃ
১) স্প্যানিশ গিটার
২) হাওয়াইয়ান গিটার
৩) বেস গিটার
আবার অনেকের মতে গিটার প্রধাণত ২ প্রকার।
১) স্টীল স্ট্রীং গিটার
২) নাইলন স্টীং গিটার
আবার ফ্ল্যামেনকো গিটার নামের এক জাতের গিটার আছে । এ ছাড়া নানা নামের গিটার রয়েছে কিন্তু সাবমেনুর মত । যেমন স্টীল স্ট্রীং গিটার এর সাব মেনুর মত কিছু গিটার রয়েছে যেমন – রীদম, লিট, বেজ, হাওয়াইন গিটার। তো এই থেকে বোঝা যায় সাব মেনুর মত সাব গিটার রয়েছে নানা প্রকারের।
স্প্যানিশ গিটার একটি ওয়েস্টার্ন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট এবং এটি খুবুই জনপ্রিয় । বাংলাদেশে অনেকে এই গিটার নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও ৭০ দশকে গুরু আজম খান, ও ফকির আলমগীর বাংলা গানের জগতের নতুন ধারা সৃষ্টি করেন পপ ব্যান্ড ।এই থেকে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশে স্প্যানিশ গিটার এর প্রভাব ।
এই স্প্যনিশ গিটারেও ভাগ রয়েছে ।
১) এ্যাকোস্টিক
২) ক্লাসিক্যাল
৩) ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক
গিটারের বিভিন্ন অংশঃ
• হেডস্টক
• টিউনার
• নাট
• ফ্রেটস
• ফ্রেটবোর্ড
• সাউন্ড হোল
• স্ট্রিংস
• পিক গার্ড
• সাউন্ড বোর্ড
• পিক-আপস
• ব্রিজ
• ভলিউম অ্যান্ড টোন কন্ট্রোল
গিটার অনেক ধরনের আছে। দোকানে বেশি ভাগ ক্ষেত্রে স্প্যানিশ গিটার পাওয়া যায়। স্প্যানিশ গিটার একটি ওয়েস্টার্ন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট। তবুও বিশ্বের সকল দেশেই সংগীতের জগতে এই বাদ্যযন্ত্রটির চাহিদা ব্যাপক । আমাদের তরুণ সমাজের সংগীত শ্রোতাদের মধ্যে গিটার শেখার প্রতি চরম একটি আগ্রহ দেখা যায়।
গিটার শেখার কিছু কৌশলঃ
– গিটার শেখার জন্য প্রথমত আপনার দরকার হবে একটি একষ্টিক গিটার। বাজারে বিভিন্ন মানের একষ্টিক গিটার পাওয়া যায়। আপনি ৪০০০-৬০০০ এর মধ্যে একটি ইন্ডিয়ান গিটার দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনার বাজেট যদি একটু কম হয় তাহলে ১৫০০-২৫০০ এর মধ্যে বাংলাদেশী গিটার দিয়েও শুরু করতে পারেন।
– গিটারের নোট বলতে মূলত সুর কে বুঝানো হয় । বাংলায় আমরা যেটাকে সা, রে, গা, মা, পা, ধা , নি দিয়ে সম্বোধন করি , ইংরেজিতে সেটাকে C D E F G A B এভাবে সম্বোধন করা হয়। গিটার যেহেতু একটি বিদেশী বাদ্যযন্ত্র , তাই এর ইংরেজি গ্রামার ব্যাবহার করলেই শিখতে সুবিধা হয়।
– সাইন গুলোর পাশাপাশি নিচের নোট সিরিয়ালটিও মুখস্থ করে নিন। এটি অবশ্যই কাজে লাগবে।
A–A#–B–C–C#–D–D#–E–F–F#–G–G#–A
[B এবং E এর কোন # (শার্প) নোট হয়না]
– টিউনিং হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় গিটারের স্ট্রিং (তার) গুলোকে টাইট করা। যাতে সঠিক সুর টি আসে। টিউনিং ছাড়া গিটার দিয়ে কখন কোন সঠিক সুর তোলা সম্ভব নয়। টিউনিং হলো মিউসিক সেন্স এর ব্যপার। এবার আপনার গিটারের তার গুলোকে হেডস্টক এর টিউনারগুলোকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাউন্ড ঠিক করতে হবে।
– গিটারের ফিঙ্গার বোর্ডের বিভিন্ন ফ্রেটস এ আঙ্গুল রেখে বাজালে কোন সুর (note) টি বাজবে সেটি মনে রাখতে হবে। যখন ফিঙ্গার বোর্ডে কোনরুপ আঙ্গুল না দিয়ে বাজালে তখন ওপেন নোটগুলো বাজবে।
– গিটার শেখার সময় পিক দিয়ে এবং পিক ছাড়া উভয় ভাবে বাজানোর প্রাক্টিস করতে হবে। পিক হচ্ছে ছোট্ট একটি প্লাস্টিকের ত্রিভুজ আকৃতির খণ্ড, যা দিয়ে গিটার বাজানো হয়। প্র্যাকটিসের সময় চিন্তা করতে হবে – কি বাজানো হচ্ছে, কেমন সাউন্ড হচ্ছে এবং তা আপনার পছন্দ হচ্ছে কি না? যখন বিরক্ত লাগবে, তখন হালকা রেস্ট নিয়ে আবার শুরু করতে হবে। ভাল গিটারিস্ট হতে হলে অবশ্যই প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে।
– ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড মিউজিকাল সিস্টেমে ইংলিশ অ্যালফাবেট এর প্রথম সাতটি বর্ণ নোট অথবা সাউন্ড এর পিচ রূপে ব্যবহৃত হয়। বর্ণগুলি হল – A B C D E F G । ঐতিহাসিক কারণে বর্ণ গুলো কীবোর্ড অথবা হারমোনিয়ামে শুরু হয় C থেকে। অর্থাৎ এভাবে- CDEFGABC. তাই বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই গিটারেও এই রুলটি ব্যবহার করা হয়।
গিটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রঃ
গিটার শেখার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। নিচে কয়েকটি একাডেমী এবং সেন্টার এর নাম দেয়া হলঃ
• ছায়ানট
• বুলবুল ললিতকলা একাডেমী
• জার্মান কালচারাল সেন্টার
• রাশিয়ান কালচার সেন্টার
• ধ্রুপদী সঙ্গীত একাডেমী
• চতুরঙ্গ শিল্পকলা একাডেমী
• আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ
• শিল্পকলা একাডেমী
• বাংলাদেশ শিশু একাডেমী