চিকিৎসকের কাছে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া উচিত?

চিকিৎসকের কাছে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া উচিত?

Add Comment
1 Answer(s)

    সমস্যার তালিকা তৈরী করুন: 
    চিকিৎসকের কাছে যাবার আগে আপনি তাকে কি কি বলতে চান বা তিনি আপনার কাছে কি কি জানতে চাইতে পারেন, তার উত্তরের একটা তালিকা তৈরী করে ফেলুন। যেমন, আপনি হয়তো বুকে ব্যথার জন্য পরামর্শ নিতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক জানতে চাইতে পারেন – ব্যথা কতদিন ধরে হচ্ছে, বুকের ঠিক কোন জায়গাটায় হচ্ছে, কোন সময় বেশী হচ্ছে, কোন সময়টায় শুরু হচ্ছে, কতক্ষণ ধরে ব্যথা থাকছে, এই ব্যথা আপনার জীবনাচরণের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলছে ইত্যাদি। মনে রাখবেন, নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর একটি তালিকা হবে, যত সংক্ষিপ্ত ও কম কথায় গুছানো হয়, ততই ভালো। সমস্যার তালিকা তৈরী করতে গিয়ে অপ্রাসংগিক কথা বা বেশ বড়-সড় প্রবন্ধ লিখে ফেললে চিকিৎসক উল্টো বিরক্ত হতে পারেন।

    পুরনো ব্যবস্থাপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সঙ্গে নিনঃ
    আপনি হয়তো একই সমস্যার জন্য বা ভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী কোন রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন। এখন চিকিৎসকের কাছে যাবার আগে সেসব চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র, গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র প্রভৃতি সঙ্গে নিন। দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক রোগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্রের একটি করে ফটোকপি নিজের কাছে রাখুন। অনেকে পূর্ববর্তী সাক্ষাৎ ও পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল কম্পিউটারে কম্পোজ করে রাখেন। এবং পরবর্তী সাক্ষাতের সময় বা নতুন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় তা প্রিন্ট করে নেন। এতে নতুন তথ্যাদি সংযোজন করাও সুবিধাজনক। অনেকে আবার প্রেসক্রিপশন-পরীক্ষার রিপোর্টের সাথে একই ফাইলে সাজিয়ে রাখেন হাসপাতাল, চিকিৎসক বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন খাতে খরচের বিল! এটি তো অপ্রয়োজনীয় বটেই, উপরন্তু একই সাথে রাখার ফলে প্রয়োজনীয় কাগজটি খুঁজে বের করতেও সমস্যা হয়।

    ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের রোগ সম্পর্কে জেনে রাখুনঃ 
    অনেক রোগের সাথে জেনেটিক কারণ সম্পর্কিত। রোগের ভবিষ্যত ও চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য এ বিষয়টি জানা থাকা জরুরী। প্রায়শই চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করে থাকেন, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিশেষত মা-বাবা-ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা-মামা, চাচা-ফুফুদের কেউ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যান্সার বা মানসিক রোগাক্রান্ত ছিলেন কি না। অসুস্থ হওয়ার আগেই এ তথ্যগুলো বাবা-মা বা নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে জেনে রাখা উচিত।

    শারীরিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিঃ 
    অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। এ ব্যাপারেও পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন। ঢিলেঢালা পোশাক পড়–ন যাতে সহজেই চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। দ্রুত খোলা ও পড়া যায় এমন পোশাক পরে যাওয়াই ভালো। ফুলহাতা বা আঁটোসাটো জামা পড়লে রক্তচাপ মাপার ক্ষেত্রে অনেক সময় অসুবিধা হয়। অনেকেই পান খেয়ে মুখ পরিষ্কার না করেই চিকিৎসকের কক্ষে ঢোকেন বা চিকিৎসকের সামনে বসেই পান চিবুতে থাকেন। এতে চিকিৎসকের যেমন বিরক্তি উৎপাদন করা হয় তেমনি মুখগহ্বর-জিহ্বার পরীক্ষাও ব্যাহত হয়।

    সঙ্গী থাকুক কেউঃ 
    কোন বন্ধু বা আত্মীয়কে সঙ্গে নিন। চিকিৎসকের সাথে কথা বলার সময় ভুলে যাওয়া কোন বিষয় মনে করিয়ে দিতে বা কোন বিষয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালভাবে বুঝে নিতে ঐ বন্ধু বা আত্মীয় সাহায্য করতে পারেন। চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং তার সাথে কথা বলাটাই অনেকের কাছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিষয়। নিকটজনের সঙ্গ সেই উদ্বেগ অনেকখানিই প্রশমিত করে রাখতে পারে। খেয়াল রাখবেন, যাকে সঙ্গে নিচ্ছেন, তিনি যেন আপনার ঘনিষ্ঠ এবং আপনার রোগ সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল থাকেন।

    সত্যবাদী হোন নিজের স্বার্থেইঃ
    হোক তিনি চিকিৎসক – তবুও তো আপনার কাছে একদমই অপরিচিত একজন মানুষ। অপরিচিত কারো কাছে নিঃসঙ্কোচে সকল কথা বলা আসলেই বেশ কঠিন। তবে, মনে রাখবেন আপনার সুষ্ঠু চিকিৎসার স্বার্থেই কোন তথ্য গোপন করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রোগী তার ধূমপান বা মদ পানের বিষয়টি গোপন করে যেতে চান বা বিষয়টি তত গুরুতর নয় বলে দেখাতে চান – বিষয়টি একদমই অনুচিত। চিকিৎসককে আপনি ‘ইমপ্রেস’ করতে যাচ্ছেন না, যাচ্ছেন আপনার সমস্যার সমাধান জানার জন্য। এক্ষেত্রে ‘ডাক্তার কি মনে করবেন’ ভেবে অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরণের কথা গোপন রাখা উচিত নয়। প্রতিদিন যৌন সমস্যায় ভোগা প্রচুর রোগী শুধু মাত্র মাথাব্যথা বা অনির্দিষ্ট ব্যথা বা হাত-পা-গা জ্বালা পোড়ার কথা বলে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের প্রকৃত সমস্যা রয়ে যাচ্ছে আড়ালেই। যদি আগে ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অনিয়ম করে থাকেন, সেটাও স্বীকার করুন; নচেৎ চিকিৎসক পূর্বে সেবন করা ওষুধের ব্যাপারে ভুল ধারণা পাবেন।

    ভাল করে বুঝে নিন পরামর্শঃ 
    আপনার চিকিৎসক আপনাকে কি পরামর্শ দিচ্ছেন, তা ভাল করে শুনে নিন। বুঝতে না পারলে আবার জিজ্ঞাসা করুন। নতুন কোন পরামর্শপত্র দেয়া হলে ওষুধের নাম, কখন কিভাবে খেতে হবে ভাল করে বুঝে নিন। মনে রাখুন, শুধু ওষুধ নয়, চিকিৎসকের পরামর্শমতো জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাসও সুস্থ থাকার জন্য জরুরী।

    রোগ সম্পর্কে জানুনঃ 
    এ যুগে আপনার অসুখ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিকিৎসকই একমাত্র মাধ্যম নন। অনেক ব্যস্ত চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী থাকেন। চিকিৎসকের ব্যস্ততা বেশী হলে তার সহকারীর কাছ থেকে আপনার রোগ সম্পর্কে জেনে নিন। বর্তমানে দেখা যায়, অনেক চিকিৎসক রোগীকে রোগ-সংক্রান্ত তথ্যাবলী সম্বলিত লিফলেট বা ছাপানো কাগজ সরবরাহ করেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও আপনি রোগ সংক্রান্ত তথ্যাবলী জানতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হাজারো তথ্যের ভীড়ে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের পরামর্শমতো এবং নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ব্রাউজ করুন।

    ডাঃ মুনতাসীর মারুফ
    সহকারী রেজিস্টার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট,ঢাকা

    Professor Answered on April 27, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.