চেয়ারে বসে নামায পড়ার হুকুম কি?
চেয়ারে বসে নামায পড়ার হুকুম কি?
চেয়ারে বসে
নামায আদায়ের কয়েকটি বিধান নিচে তুলে ধরা হল-
১. কিয়াম, রুকু ও সিজদা- নামাযের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়; যা নামাযের রুকন বা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। কেউ
যদি এই রুকনগুলো সঠিকভাবে আদায় করতে সক্ষম
হওয়া সত্ত্বেও অবহেলা করে ছেড়ে দেয় বা চেয়ারে
বসে ইশারায় নামায আদায় করে, তার নামায আদায়
হবে না। আর কেউ যদি কোন রুকন প্রকৃতপক্ষেই আদায়
করতে সক্ষম না হয় বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে সে মাযুর
সাব্যস্ত হয়, তাহলে সে এ রুকনটি ইশারার মাধ্যমে
আদায় করে নিবে। এতে তার নামায পরিপূর্ণ বলে গণ্য
হবে এবং সে পূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। ( দ্র.
রদ্দুল মুহতার; ১/৪৪২)।
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাযি.) বলেন-
ﻛﺎﻧﺖ ﺑﻲ ﺑﻮﺍﺳﻴﺮ ﻓﺴﺄﻟﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﻓﻘﺎﻝ ﺻﻞ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺴﺘﻄﻊ ﻓﻘﺎﻋﺪﺍ ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺴﺘﻄﻊ ﻓﻌﻠﻰ ﺟﻨﺐ
(সহীহ বুখারী; হাদীস নং- ১১১৭)
২. সুতরাং কেউ যদি দাঁড়াতে সক্ষম না হয়, কিন্তু
মাটিতে বসে সিজদা করতে সক্ষম, তাহলে তাকে
মাটিতে বসে সিজদা করে নামায আদায় করতে হবে।
চেয়ারে বসে ইশারা করে রুকু সিজদা করলে তার
নামায আদায় হবে না।
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাহ.) বলেন-
ﻭﻻﻳﺼﺢ ﺍﻹﻳﻤﺎﺀ ﺑﻬﻤﺎ – ( ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻭﺍﻟﺴﺠﻮﺩ) – ﻣﻊ ﺍﻟﻘﺪﺭﺓ ﻋﻠﻴﻬﻤﺎ،
ﺑﻞ ﺷﺮﻃﻪ ﺗﻌﺬﺭﻫﻤﺎ۔
( রদ্দুল মুহতার ২/৯৯, এইচ. এম. সাঈদ)।
৩. তবে যে ব্যক্তি দাঁড়াতেও সক্ষম না এবং
জায়নামাযে বসে সিজদা করতেও সক্ষম না, চেয়ার
বা নীচে বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা করা ছাড়া
তার উপায় নেই, এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিধান হল,
যথাসম্ভব জায়নামাযে বসেই ইশারা করার চেষ্টা
করবে। এটাই উত্তম। কারণ বৈঠকে অধিক বিনয় প্রকাশ
পায় এবং বৈঠক সিজদার নিকটবর্তী অবস্থান। তবে
কেউ যদি নীচে বসতে সক্ষম না হয়, কিংবা এতে তার
অধিক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তির জন্যে চেয়ারে বসে
ইশারায় নামায আদায় করতে কোন বাধা নেই।
নিঃসন্দেহে তার নামায বিশুদ্ধ ভাবে আদায় হয়ে
যাবে।
ইমাম আল মারগীনানী (রাহ.) বলেন- ﻭﺍﻷﻓﻀﻞ ﻫﻮ ﺍﻹﻳﻤﺎﺀ
ﻗﺎﻋﺪﺍ ، ﻷﻧﻪ ﺃﺷﺒﻪ ﺑﺎﻟﺴﺠﻮﺩ (আল-হিদায়া- ১/১৬২)।
হযরত ইবনে আবী লায়লা (রাহ.) রর্ণনা করেন- ﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ
ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻘﺎﻋﺪ ﻳﻘﻌﺪ ﻛﻴﻒ ﺷﺎﺀ (মুসান্নাফু ইবনি আবী
শায়বা ৬/৬৬, হাদীস নং- ৮৮৭৩)।
ইমাম সারাখসী (রাহ.) বলেন-
ﻭﺍﻟﻤﺼﻠﻰ ﻗﺎﻋﺪﺍ ﺗﻄﻮﻋﺎ ﺃﻭ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﺑﻌﺬﺭ ﻳﺘﺮﺑﻊ ﻭﻳﻘﻌﺪ ﻛﻴﻒ ﺷﺎﺀ ﻣﻦ
ﻏﻴﺮ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﻣﺤﺘﺒﻴﺎ ﻭﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﻣﺘﺮﺑﻌﺎ ﻷﻧﻪ ﻟﻤﺎ ﺟﺎﺯ ﻟﻪ ﺗﺮﻙ
ﺃﺻﻼﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﺘﺮﻙ ﺻﻔﺔ ﺍﻟﻘﻌﻮﺩ ﺃﻭﻟﻰ. (ﺟـ 1 ﺻـ 902 )
৪. যে ব্যক্তি দাঁড়াতে এবং বসতে সক্ষম কিন্তু
সিজদা করতে সক্ষম না, সিজদা তাকে ইশারায় করতে
হয়। এমন ব্যক্তির জন্য কিয়ামের ফরয আদায়ের
লক্ষ্যে দাঁড়ানো আবশ্যক, না বসে নামায পড়লেও
নামায আদায় হবে? এতে দু‘টি মত রয়েছে।আমাদের
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হল, তার জন্য
দাঁড়ানো আবশ্যক নয়; বসে পড়লেও তার নামায আদায়
হয়ে যাবে।তবে অনেকের অভিমত হচ্ছে, যতটুকু সম্ভব
দাঁড়িয়ে কিয়ামের ফরয আদায় করতে হবে। তারপর
সম্ভব হলে রুকু করবে।তারপর তার জন্য দুটি পন্থা
রয়েছে, যে কোন একটি অবলম্বন করতে পারবে। এক.
বসে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করা। ইহা উত্তম।
দুই. দাঁড়িয়ে ইশারার মাধ্যমে সিজদা আদায় করা।
তখন সিজদার জন্য মাথাকে রুকুর চেয়ে একটু বেশী
নিচু করবে।
ইমাম আইনী (রাহ.) উল্লেখ কারন-
ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﻌﻔﺮ ﺍﻟﻄﺤﺎﻭﻱ : ﻭﻟﻮ ﻗﺪﺭ ﻋﻠﻰ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻭﻟﻮ ﻗﺪﺭ ﺁﻳﺔ
ﺃﻭ ﺗﻜﺒﻴﺮﺓ ﻳﻘﻮﻡ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﺇﻥ ﻋﺠﺰ ﻋﻦ ﺫﻟﻚ ﻗﻌﺪ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻞ
ﺫﻟﻚ ﺧﻔﺘﺄﻥ ﺗﻔﺴﺪ ﺻﻼﺗﻪ، ﻫﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻟﻤﺬﻫﺐ، ﻭﻻ ﻳﺮﻭﻯ ﻋﻦ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ
ﺧﻼﻓﻪ، ﻭﻛﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﻋﺠﺰ ﻋﻦ ﺍﻟﻘﻌﻮﺩ ﻭﻗﺪﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺗﻜﺎﺀ ﺃﻭ ﺍﻻﺳﺘﻨﺎﺩ ﺇﻟﻰ
ﺇﻧﺴﺎﻥ ﺃﻭ ﺣﺎﺋﻄﺄﻭ ﻭﺳﺎﺩﺓ ﻻ ﻳﺠﺰﺋﻪ ﺇﻻ ﻛﺬﻟﻚ. ﻭﻟﻮ ﺍﺳﺘﻠﻘﻰ ﻻ ﻳﺠﺰﺋﻪ
(আল বেনায়া- ২/৬৩৫, মাকতাবা নাঈমিয়া)।
উভয় মতানুসারে বসার ক্ষেত্রে জায়নামায বা নীচে
বসা আবশ্যক, নাকি চেয়ারে বসতে পারবে? এ
বিধানটি তিন নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে। (দ্র. রদ্দুল
মুহতার- ২/৯৮, ইলাউস সুনান; ৭/১৯৮ দারুল কুতুবিল
ইলমিয়্যা)।
৫. এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কে সক্ষম, কে অক্ষম,
কে মাজুর বা কতটুক মাজুর এবং কে মাজুর না, সে
বিষয়টি নির্ণয় করা। এ ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত কথা
হচ্ছে, বয়স্ক এবং প্রকাশ্যে রোগে আক্রান্ত
ব্যক্তিরা নিজেদের অপারগতা সম্পর্কে অনেকটা
নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যদি এ সংক্রান্ত
মাসআলা তাদের জানা থাকে। তবে এমন অভিজ্ঞ
ব্যক্তি খুবই কম রয়েছেন।তাই উত্তম পন্থা হচ্ছে,
নিজে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ মুফতি
সাহেবদের শরণাপন্ন হয়ে জেনে নেয়া।
আর যারা বাহ্যিকভাবে সুস্থ, কিন্তু বিশেষ রোগের
কারণে বিশেষজ্ঞ বিশ্বস্ত ডাক্তার তাদেরকে রুকু
সিজদা করতে নিষেধ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও
মাজুরের হুকুম প্রযোজ্য হবে। তবে তাদের জন্যও উচিত
হবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বিজ্ঞ মুফতিদের
শরণাপন্ন হওয়া।
৬. আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যারা সঠিক
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চেয়ারে বসে নামায পড়ার
অনুমতি পেয়েছেন বা চেয়ার ব্যতীত যাদের কোন
বিকল্প নেই, তারা মসজিদে গিয়ে চেয়ারে বসে
নামায পড়বেন, নাকি মসজিদের শোভা নষ্ট হবে এই
অজুহাতে মসজিদ ছেড়ে ঘরে নামায আদায় করবেন?
এ ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিতে সঠিক মত হল, তারা
মসজিদে গিয়েই জামাতে শরীক হয়ে নামায আদায়
করবেন, যদিও তারা চেয়ার ব্যবহার করতে বাধ্য।
কারণ, ফরয নামায আদায় করার আসল রূপই হচ্ছে,
মসজিদে গিয়ে সবাই মিলে জামাত করে নামায
আদায় করা। সম্মিলিতভাবে বন্দেগী করা ও দাসত্ব
প্রকাশ করা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয়। তাই
মসজিদের জামাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিষয়ে
একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদীস রয়েছে। যেমন-
ﻭَﺍﺭْﻛَﻌﻮﺍ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺮَّﺍﻛِﻌِﻴﻦَ (সূরা বাকারা: ৪৩) ﻭَﺗَﻘَﻠُّﺒَﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺎﺟِﺪِﻳﻦَ
( সূরা শুআরা- ২১৯)।
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻭﺍﻟﺬﻱ
ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻟﻘﺪ ﻫﻤﻤﺖ ﺃﻥ ﺁﻣﺮ ﺑﺤﻄﺐ، ﻓﻴﺤﻄﺐ، ﺛﻢ ﺁﻣﺮ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ،
ﻓﻴﺆﺫﻥ ﻟﻬﺎ،ﺛﻢ ﺁﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻓﻴﺆﻡ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﺛﻢ ﺃﺧﺎﻟﻒ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﺎﻝ، ﻓﺄﺣﺮﻕ
ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺑﻴﻮﺗﻬﻢ، ﻭﺍﻟﺬﻱ ﻧﻔﺴﻲ ﺑﻴﺪﻩ ﻟﻮ ﻳﻌﻠﻢ ﺃﺣﺪﻫﻢ، ﺃﻧﻪ ﻳﺠﺪ ﻋﺮﻗﺎ
ﺳﻤﻴﻨﺎ، ﺃﻭ ﻣﺮﻣﺎﺗﻴﻨﺤﺴﻨﺘﻴﻦ، ﻟﺸﻬﺪ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ (সহীহ বুখারী :
হাদীস নং-৬৪৪)
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ، ﻗﺎﻝ : ﺃﺗﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺟﻞ ﺃﻋﻤﻰ،
ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﺇﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻟﻲ ﻗﺎﺋﺪ ﻳﻘﻮﺩﻧﻲ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ، ﻓﺴﺄﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻬﺼﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﺮﺧﺺ ﻟﻪ، ﻓﻴﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ،
ﻓﺮﺧﺺ ﻟﻪ، ﻓﻠﻤﺎ ﻭﻟﻰ، ﺩﻋﺎﻩ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻫﻞ ﺗﺴﻤﻊ ﺍﻟﻨﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ؟ ﻗﺎﻝ :
ﻧﻌﻢ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺟﺐ
(সহীহ মুসলিম : হাদীস নং- ৬৫৩)
তাই যারা জামাতে উপস্থিত হতে পারে, তাদের জন্য
এর বিকল্প নেই। কেননা মসজিদের নামাযে যে প্রাণ
থাকে, ঘরের নামাযে সেটা থাকে না। তাছাড়া এ
ধরণের বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ রোগীর কষ্ট করে জামাতে
উপস্থিত হওয়া, অন্যদেরকে মসজিদে গিয়ে জামাতে
শরীক হতে উৎসাহী করবে এবং গাফেল লোকদের
মসজিদমুখী হতে প্রেরণা যোগাবে। তাই এমন
লোকদের মসজিদের জামাতে উপস্থিতি আল্লাহ
তাআলা, ফেরেশতা ও সকল সৃষ্টির কাছে পছন্দনীয়।
তবে যারা আন্তরিকতার সাথে এ ধরনের লোকদের
মসজিদে গিয়ে চেয়ারে বসে নামায পড়ার ব্যাপারে
প্রশ্ন করেন তাদের আলোচনা থেকে বোঝা যায়,
তাদের অপছন্দের উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে,
বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য। যা থেকে নিষেধ করা
হয়েছে।
এর উত্তরে বলব, অপারগতা ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
সাদৃশ্য অবৈধতার কারণ নয়। অর্থাৎ- মানুষ যা করতে
বাধ্য, যা না হলে মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হবে,
এমন বিষয়ে সাদৃশ্যের বিধান প্রযোজ্য নয়। কারণ এ
সকল বিষয় কারো সাদৃশ্য গ্রহণের জন্য করা হয় না,
বরং প্রয়োজনে করা হয়। তাই এগুলোকে সাদৃশ্যের
কারণে হারাম বলা যাবে না। তাছাড়া মূল রহস্য বা
কারণ না বুঝে শুধু সাদৃশ্য দেখেই যদি ঢালাওভাবে
সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়গুলিকে হারাম বলে দেওয়া হয়,
তাহলে খাওয়া-দাওয়াসহ জীবন ধারণের অনেক
মৌলিক বিষয়ও তার আওতায় চলে আসবে। কারণ, এসব
বিষয় মৌলিকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এ সব হারাম হয়ে
গেলে মানব জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই যে সকল
বিষয় আবশ্যক, প্রয়োজনীয় ও উপকারী নয় বা যে সকল
মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পথ ও পন্থা একাধিক
হতে পারে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ রূপরেখা
বর্জন করে সাদৃশ্যহীন পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ করা
হয়। আল্লামা ইবনে নুজাইম (রাহ.) বলেন-
ﻭ (ﻳﻜﻔّﺮ ) ﺑﻮﺿﻊ ﻗﻠﻨﺴﻮﺓ ﺍﻟﻤﺠﻮﺳﻲ ﻋﻠﻰ ﺭﺃﺳﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺇﻻ
ﻟﻀﺮﻭﺭﺓ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﺤﺮ ﺃﻭ ﺍﻟﺒﺮﺩ، ﻭﺑِﺸﺪّ ﺍﻟﺰﻧﺎﺭ ﻓﻲ ﻭﺳﻄﻪ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻓﻌﻞ ﺫﻟﻚ
ﺧﺪﻳﻌﺔﻓﻲ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﻭﻃﻠﻴﻌﺔ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ (আল-বাহরুর রায়েক
৫/২০৮)
হযরত থানভী (রাহ.) বলেন-
ﻛﻔﺎﺭ ﻛﯽ ﻭﺿﻊ ﺑﻼ ﺿﺮﻭﺭﺕ ﻗﻮﻳﮧ ﺣﺴﻴﮧ ﻛﺪﻓﻊ ﺍﻟﺤﺮ ﻭﺍﻟﺒﺮﺩ ﻳﺎ
ﺷﺮﻋﻴﮧ ﻛﺨﺪﻉ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﻭﺍﻟﺘﺠﺴﺲ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺍﻓﻌﺎﻝ ﻛﻔﺮ ﺳﮯ ﮨﮯ
(বাওয়াদিরুন নাওয়াদের- ৪৫৪)।
পূর্বের আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, নামাযে
চেয়ার শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে
পারবে। আর এটি তখন শরীয়তের দৃষ্টিতে ওজরের
অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব, চেয়ারের এই বৈধ ও
প্রয়োজনীয় ব্যবহারকে শুধু সাদৃশ্যের অজুহাতে অবৈধ
বলা যাবে না।
তবে যারা প্রয়োজন ছাড়া নামাযে চেয়ার ব্যবহার
করে জেনে না-জেনে এটাকে ফ্যাশনে পরিনত করতে
চলেছেন, তাদেরকে এ থেকে বিরত রাখার জন্য এ
বিষয়ে সঠিক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ইমাম ও
খতীব সাহেবগণ যদি এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা তুলে
ধরে সময়ে সময়ে আলোচনা করেন, তাহলে চেয়ারের
অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার আশা করি, বন্ধ হয়ে যাবে। আর
যারা প্রয়োজনে ব্যবহার করেন, তারাও মসজিদে
এসে জামাতে শরীক হয়ে আল্লাহর বন্দেগী করার
সুযোগ লাভ করবেন।