ছয় মাসের মধ্যে কিভাবে নিজের উন্নতি করতে পারব?

    Train Asked on December 17, 2023 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      ঘোষনাঃ লেখক নিম্নোক্ত কার্যাবলীর মাধ্যমে ছয় মাসের মধ্যে নিজের উন্নতি সাধন করতে পেরেছিলেন। ৬ মাসের ব্যবধানে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুন রুপে দেখতে পেয়েছিলেন। শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হতাশা কাটিয়ে মনকে সতেজ এবং ইতিবাচক করতে পেরেছিলেন। সংক্ষেপে বললে, তিনি আগের যে কোন সময়ের তুলনায় নিজেকে অধিক সুস্থ, যৌন আবেদনময়ী এবং আত্মবিশ্বাসী বোধ করেছিলেন। এই উপদেশ গুলো মেনে চললে যে কেহ নিশ্চিত উপকৃত হবেন।

      ১. নিয়মিতভাবে ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। এটি দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর একটি।

      ভোরের উপযুক্ত ব্যবহার করা নিশ্চিত করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করতে হবে। এব্যাপারে সাহায্য লাগলে ‘মিরাকল মর্নিং’ নামে বইটি পড়তে পারেন, এটি আপনাকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করবে।

      ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমি এই ৪টি কাজ করিঃ

      • যোগ ব্যায়ামঃ সকালের রুটির মোতাবেক আমি প্রতিদিন ভোরে যোগ ব্যায়ামের ১৫টি সূর্য নমস্কার করি।
      • ধ্যানঃ ১০ মিনিটের জন্য কথা না বলে বা ধ্যানমগ্ন থাকি।
      • সংকল্প পাঠঃ নিজের জন্য ঠিক করা প্রতিজ্ঞা গুলো এক টুকরো কাগজে লিখে রেখে আমি প্রতিদিন সকালে সেটা একবার পড়ি।
      • শারীরিক ব্যায়ামঃ আমি সপ্তাহে ৫ দিন জিমে ভারী ব্যায়াম করি। আপনারা চাইলে দৌড়ানো, সাতার কাটা, হাঁটা বা জগিং এর মধ্যে নিজের জন্য উপযোগী ও সুবিধাজনক যে কোনটি বেচে নিতে পারেন। আমি জিম করে মজা পাই। সোজা কথা যেভাবে যাই করি শরীরকে নাড়াতে-চড়াতে হবে।

      ২. মুখের যত্ন নিনঃ

      মুখের যত্ন নিনঃ দিনে ২বার ব্রাশ করুন, একবার করে ফ্লস করুন। আপনি অবাক হবেন কি পরিমাণ খাবার প্রতিদিন আমাদের দাতের কোনায় আটকে থাকে তা দেখলে। এগুলোকে সেখানে জমতে ও পচতে দিবেন না। সর্বশেষবার নিয়মিত দাত পরিষ্কারের জন্য আমি যখন ডেন্টিষ্টের কাছে গেলাম তিনি আমার দাত পরীক্ষা করে ‘পরিস্কারের প্রয়োজন নেই’ মর্মে রিপোর্ট দিয়ে আমাকে বিদায় দিয়ে দিলেন।

      ৩. প্রর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ ঘুম থেকে উঠা মাত্রই বাসি মুখে খালি পেটে আধা লিটার পানি পান করুন এবং সারা দিনে মোট ৩ লিটার পানি খাওয়া নিশ্চিত করুন। এজন্য বারবার বাথরুমে যাওয়া লাগবে কিন্তু এটা কোন ব্যাপার না।

      ৪. গরম পানিঃ লেবুর রস বা আপেল সিডার ভিনেগার মেশানো একগ্লাস গরম পানি দিয়ে দিন শুরু করুন। এটি আমাদের শরীরের মেটাবলিজম এর উন্নতি করে এবং আমাদের হজম প্রক্রিয়ার উপকার করে।

      ৫. স্বাস্থকর খাবার খানঃ

      আপনি কি খাচ্ছেন বা ‍মুখে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে সতর্ক ও মনোযোগী হন। ভাজা পোড়া এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। গভীর তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে পোড়ানো বা বেক করা খাবার খান। আপনার খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি, তরি-তরকারী ও ফলমূল যোগ করুন। দীর্ঘ মেয়াদে শরীর ঠিক রাখতে হলে আমাদেরকে ডায়েটের শর্টকাট পদ্ধতি পরিহার করতে হবে। শরীর ও মনকে স্বাস্থকর খাবারের জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে। কম খেয়ে নয় বরং সঠিক খাবার খেয়ে বাচতে হবে।

      ৬. এলকোহল এবং চিনিযুক্ত কোমল পানীয় বাদ দিতে হবে।

      আপনি হয়তো পড়ছেন আর হাসছেন, এগুলো না খেলে বেঁচে থেকে কি লাভ! এগুলো ছাড়া পার্টি জমবে কিভাবে! সামাজিকতার কারণে যদি খেতেই হয় তাহলে ভদ্রতার খাতিরে যত কম খেয়ে সারা যায় সেটেুকুই খান।

      ৭. ৩০ সেকেন্ডের ঠান্ডা পানির গোসল।

      গোসল করতে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারলে ভাল কিন্তু আপনি যদি গরম পানিতে গোসল করে অভ্যস্ত হন তাহলে গোসল শেষে ৩০ সেকেন্ডের জন্য শরীরে ঠান্ডা পানি ঢালুন এতে আমাদের শরীর শক্তি লাভ করে।

      ৮. চিনি খাওয়া বন্ধ করুনঃ

      সাদা ভাত, লবন, চিনি এগুলো হচ্ছে নীরব ঘাতক। চিনি কোন পুষ্টিগুণ নেই। আবার পড়ুন। চিনি কোন পুষ্টিগুণ নেই। এটি এক ধরনের আসক্তি । ইন্টারনেটে ঘাটলে এসংক্রান্ত অনেক তথ্য আপনারা পাবেন। উৎসব বা কোন উপলক্ষে মিষ্টি খেতে পারেন কিন্তু নিয়মিত খাওয়া বাদ দিতে হবে।

      ৯. ধুমপান ছেড়ে দিনঃ

      এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না । সারা পৃথিবী এ সম্পর্কে জানে। এ বদ অভ্যাস আপনার থেকে থাকলে এখন আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা।

      ১০. যাতায়াতের সময়ের স্বদব্যবহার ব্যবহার করুনঃ

      গাড়ি চালানোর সময়কে বা গাড়িতে চড়ার সময়কে ব্যবহার করতে হবে। গাড়িতে বসেই আপনার পছন্দের গান, আবৃত্তি বা বক্তৃতা শুনতে পারেন। গাড়ীতে বা ব্যাগে বই বা অন্য কোন পড়ার সামগ্রী রাখুন এবং গাড়ীতে পড়ার অভ্যাস গড়ুন। আমার এক প্রিয় মানুষ বলেছেন “তোমার গাড়ীকে চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর কর”।

      ১১. কৃতঞ্জতা প্রকাশ বা ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস গড়ুন।

      এটা আপনার মনকে শান্তি দিবে। আমার ক্ষেত্রে এটি খুব ভাল ভাবে কাজ করেছে। এটি আমার তালিকার ২য় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস গড়লে আপনার মানসিকতায় ইতিবাচব পরিবর্তন আসবে এবং আপনি নিজেকে অনেক সুখি অনুভব করবেন।

      ১২. কোন সমস্যা না থাকরেও বছরে একবার শরীরের একটি মেডিক্যাল চেক করুন। এটি খুব জরুরী পূর্ব সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ।

      ১৩. নিজের চিন্তা ভাবনাগুলোকে লিখে রাখুনঃ

      প্রতিদিন অল্প করে হলেও নিজের ভাবনাগুলোকে লেখার অভ্যাস করুন। পুরোনো লেখা গুলো পড়ার মজা অনেক তার সাথে সময়ের আর্বতনে আপনার পরিবর্তন গুলো আপনি নিজেই মূল্যায়ন করতে পারবেন। আপনার আজ’কে আগামীর দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করতে এর থেকে ভাল মাধ্যম আর নেই। কাগজের ডায়েরীর পরিবর্তে আজকাল মোবাইলে অনেক ভাল এপস পাওয়া যায় ডায়েরী লেখার জন্য।

      ১৪. টিভি দেখা বাদ দিয়ে বই পড়ুন।

      একবার ভাবুন টিভিতে পর্বের পর পর্ব সিরিয়াল, টক শো ইত্যাদি দেখে আজ পর্যন্ত আপনার ফায়দাটা কি হয়েছে। নিজের আগ্রহ ও পছন্দ অনুসারে বাছাই করে কয়েকটি প্রোগ্রাম দেখুন। অন্য সময়ে টিভি দেখতে বসলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, যা দেখছি তা কি আদৌ দেখার প্রয়োজন আছে, নাকি এই সময়ে এর বদলে একটা বই পড়লে ভাল হতো? আমি বলতে চাচ্ছি অহেতুক টিভি দেখা বন্ধ করে টিভি দেখার জন্য সময় নিদৃষ্ট করে নিন। বসে বসে টিভির রিমোট টেপার চেয়ে পরিবারের সদস্যদের সময় দিন বা বই পড়ুন। চিন্তা করুন দৈনিক আধা ঘন্টা সময় টিভি দেখা কমিয়ে বই পড়লে বছরে আপনি কতগুলো বই পড়ার সুযোগ পাবেন।

      ১৫. নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন।

      খুবই সহজ। লক্ষ্য আপনার পথ ঠিক করে দেয়। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে নিজের করণীয় সমূহের একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন। এটি আপনাকে ভবিষ্যতের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিবে এবং আপনি আপনার অগ্রগতি জানতে পারবেন। নিজেকে নিয়মিত পর্যালোচনা করতে থাকুন এবং অর্জিত হয়েছে এমন লক্ষ্যগুলো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন লক্ষ্য স্থির করুন। অর্জিত হওয়া লক্ষ্যগুলো আপনাকে নতুন কিছু করতে সাহস যোগাবে।

      ১৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।

      অনেকের জন্য হয়তো দৈনিক ৫-৬ ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট কিন্তু আমার নিজের কথা বলি, আমার ৭ ঘন্টার ঘুম লাগে। ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে সতেজতা প্রদান করে এবং নতুন একটা দিন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দেয়। ঘুমের ব্যাপারে আমি কখনো ছাড় দিতে রাজী নই।

      ১৭. ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবার আগে মোবাইলের সব নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন এবং ফোন সাইলেন্ট রেখে ঘুমান। ভাল হয় ঘুমানোর সময় মোবাইল দূরে কোথাও রেখে যেমন ড্রয়ারে ঘুমান এতে আপনার ঘুম ভাল হবে। সবচেয়ে ভাল হয় স্যোশাল মিডিয়ার সব আইডি বন্ধ করে দিন।

      ১৮. দীর্ঘমেয়াদে নিজের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এব্যাপারে অবহেলা করা যাবে না। কম্পাউন্ডিং ইন্টারেস্ট সম্পর্কে জানা না থাকলে আজই কিছু সময় বের করে এ ব্যাপারে পড়াশোনা করে নিন । শুধু একারণে, একটা ধন্যবাদ কয়েক বছর পরে আপনার নিকট আমার পাওনা হয়ে থাকবে।

      ১৯. চিন্তা করুন, নিজেকে জানুন, স্বপ্ন দেখুন, কল্পনা বিলাসী হোন।

      আপনি কেমন তা জানি না কিন্তু আমার নিজের এ ব্যাপারগুলো খুব ভাল লাগে। এগুলো আমাকে প্রেরণা যোগায়, মন ভাল রাখে।

      ২০. হাসুন প্রাণ খুলে, অন্যের প্রতি দয়াবান এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হোন।

      ৬ মাস উপরোক্ত নিয়মে জীবনযাপন করার পর আমার জীবনে আসা পরিবর্তন গুলোর তালিকাঃ

      ১. সতের কেজি ওজন কমিয়েছি।

      ২. মানসিকভাবে আমি এখন অনেক শান্ত ও পরিচ্ছন্ন অনুভব করি।

      ৩. আমার শরীর আগের তুলনায় সুস্থ ও শক্তিশালী।

      ৪. ধুমপান ছেড়ে দেওয়া এবং খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনার কারণে আমি অনেক উদ্যেমী বোধ করি।

      ৫. সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারছি।

      ৬. আগের চেয়ে আত্ম-বিশ্বাসী অনুভব করছি।

      আশাকরি এগুলো আপনার কাজে লাগবে।

      শেষ কথা ‘আমি যেহেতু এগুলো করতে পেরেছি নিশ্চিতভাবে যে কেউ এগুলো করতে পারবে’।

      Professor Answered on December 17, 2023.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.