ছয় বছরের দাম্পত্যে কখনো খুব অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটিয়েছি বলে মনে পড়ে না…

অনেকবার এই চিঠি লিখে, মুছে ফেলেছি। মানুষ খারাপ বলবে এই ভেবে! জানিনা আজকেও পাঠাতে পারব কিনা। আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ছয় বছর। কিশোরী বয়সে খুব অল্প দিনের পরিচয়ের পরিণতি। অনেক ভাল ফ্যামিলি, শিক্ষিত পরিবার আর সুদর্শন ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়নি আমার পরিবারও। বিয়ের পর আমি অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। বেশ ভাল একটা চাকরীও করছি। সব দিক থেকেই হিংসা করার মত সুখী একটা জীবন। অথচ আমি সুখী হতে পারছিনা আপু।

আমি জানি সবার আবেগ অনুভূতি এক রকম নয়, তবু সম্মান টুকু তো করা যায়? আমার অনুভূতিরর কোন সম্মান আমি কখনো পাইনি তার কাছ থেকে। আমাদের কিছুই মেলে না, তবুও আমি চেষ্টা করেছি তার মত করে চলার। আমি খুব ভাল রবীন্দ্রসংগীত গাইতাম, স্টেজ শো করতাম। তার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। আমার ভাল লাগার সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি শুধু আমার হাজবেন্ড পছন্দ করে না বলে। আমি পারিবারিক কলহ চাইনি। নিজেকে একটু একটু করে বদলাতে বদলাতে আমি আমার আমিটাকেই হারিয়ে ফেলেছি।

বলতে খুব লজ্জা লাগছে আমার স্বামী আমার প্রতি শারীরিক টানও অনুভব করে না। ছয় বছরে কখনো আমরা খুব অন্তরঙ্গ সুখী কোন মুহূর্ত কাটিয়েছি বলে মনে পড়ে না। আমি মানছি পড়াশুনায় খুব ভাল হতে গিয়ে আমি দাম্পত্য জীবনের উষ্ণ সময় গুলো হারিয়ে ফেলেছি, তবুও শারিরীক সুখটা না হয় নাই পেলাম, ভালবাসা টুকু তো আমি পেতেই পারি! সেখানে কোন প্রাণ নেই। অনেকদিন পর আমি বুঝতে পারি আমার স্বামী পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত। এটা হয়ত কম বেশি সব ছেলেরাই দেখে কিন্তু সে অন্য মেয়েদের প্রতিও দূর্বল! একজন হলে বুঝতাম ভালবাসা, কিন্তু সে একাধিক মেয়েদের একটা ফ্যান্টাসি জগতে আছে এর প্রমাণ আমি যেদিন পাই সেদিন থেকেই আর তাকে ভালবাসতে পারতাম না। সে আমার কাছে আসলে আমার প্রচণ্ড ঘৃনা হত। কিন্তু আমি বলতে পারতাম না।

সে বলেছে সে আর কখনো ওই পথে পা বাড়াবে না, কিন্তু আমি মেনে নিতে পারিনি আপু। শুধু বাইরে থেকে অভিনয় করে যাচ্ছি। বাসায় কাউকে বলতেও পারছিলাম না, কারণ আমার পরিবার ততটা আধুনিক মনের না, এই ব্যাপারটা খুব সহজে গ্রহন করার মত। আমি যখন প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণাময় একটা জীবন পার করছিলাম তখন আমার চেয়ে বেশ বড় একজন মানুষকে আমি পাই আমার কথা গুলো শেয়ার করার। হয়তো অনেক কাল ভালবাসাহীন জীবন কাটানোর পর সামান্য উত্তাপেই আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম তাকে। এই ভুল পথে পা বাড়িয়ে আমি আমার জীবনটাকে আরো দুর্বিষহ করে ফেলেছি।

গত দুই বছরে তিনি কিছুই চাননি আমার কাছে, তাই তাকে মিথ্যে দোষ আমি দিতে পারব না। বরং আমার ভাল লাগা, মন্দ লাগা, অনুভুতি সব কিছুকে প্রচণ্ড সম্মান করেন। আমিও অনেক শ্রদ্ধা করি তাকে। আমি জানি তিনি কখনো তার স্ত্রী সন্তান ফেলে আমাকে গ্রহণ করতে পারবেন না, অথচ আমি সারাজীবন এমন কাউকেই চেয়েছিলাম। আমি তার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারছি না। নাম্বার বদলে ফেলা, যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া সব ভাবেই ট্রাই করেছি। কিন্তু আমি পারি নি আপু। আমি প্রতিদিন চেষ্টা করি আমার হাজবেন্ডকে ভালবাসার, কিন্তু আমি মন থেকে পারি না। তাকে ছেড়ে আসব সেই সাহসও নেই। একটা ডিভোর্সি মেয়ের পরিবারের জন্য সমাজে টিকে থাকা অনেক কষ্টের। আমার বাবা মা সেটা পারবে না। অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হবার কথাও ভাবতে পারি না।

নিজেকে খুব পাপী মনে হয়। আমি এই অন্যায় সম্পর্কটাও মানতে পারছি না, তার কাছ থেকে দূরেও থাকতে পারছি না। নিজের কাছে সারাক্ষণ ছোট হয়ে বেঁচে থাকাটা খুব কষ্টের আপু।

Train Asked on October 31, 2015 in বিয়ে.
Add Comment
1 Answer(s)

    আপনার মানসিক অবস্থাটা আমি একটু অলেও আন্দাজ করতে পারছি। দীর্ঘদিন হতাশায় ভরা একটা জীবন কাটাতে কাটাতে আপনি নিজেও একটা ফ্যান্টাসির জগতে চলে গিয়েছেন। সেই জগত থেকে বের হতে না পেরে এখন হতাশায় মাথা কুটে মরছেন। আপনার বিয়ের কীভাবে হয়েছে, সন্তান আছে কিনা ইত্যাদি লেখেন নি। চিঠি পড়ে মনে হলো, প্রেমের বিয়ে সত্ত্বেও স্বামীকে আপনি আর এখন ভালোবাসে না। যাই হোক, আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু কথা লিখছি। আশা করি আপনার উপকারে লাগবে।

    দেখুন আপু, জীবনে কখনোই দুই নৌকায় পা দেয়া যায় না, দুটি পথে এক সাথে চলা যায় না। যারা চেষ্টা করেন, তাঁদের জীবনটা অন্ধকারে নিক্ষেপিত হয়। পারবো না, সম্ভব না এসব বলতে আসলে কিছু নেই। চাইলে সব সম্ভব। একটা জিনিস মনে রাখবেন, জীবনে কেউ আপনার জন্য কিছু করবে না। নিজের জন্য কিছু করতে হলে সেটা আপনার নিজেকেই করতে হবে। আমরা মেয়েরা এই ভুলটাই তো করি। ধরে নিই যে স্বামী বা প্রেমিক আমাদেরকে জীবনের সব সুখ এনে দেবে। কিন্তু আসলে কি ব্যাপারটা তাই? একদম কিন্তু নয়। সুখী হতে চাইলে সেই সুখে নিজেকে অর্জন করতে হয়। জীবনে আরেকটি কাজ করতে হয়… নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেই দায়টাও নিজেই বহন করতে হয়।

    এই লোকটাকে আমি নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছেন, তার ইচ্ছায় নিজের ভালো লাগা বিসর্জন দিয়েছেন, সে যা বলে সেটাই মাথা পেতে নিয়েছেন। তাহলে সে আপনাকে কেন সম্মান করবে বলুন? কেন গুরুত্ব দেবে আপনাকে। সে তো জানেই যে হুকুম করা মাত্রই আপনি তামিল করবেন। বাড়ির কাজের মেয়েটিকে কিন্তু কেউ সম্মান করে না আপু! যদি চান পরিস্থিতির বদল হোক, তাহলে চেষ্টা করতে হবে আপনাকেই। সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে, সেই অনুযায়ী চলতেও হবে। জীবনে সব চাইলে তো হবে না। ডিভোর্সি মেয়ের জন্য সমাজে টিকে থাকা কষ্টের, এটা ফালতু কথা। আজকালকার যুগে অচল। আপনি তাঁকে ডিভোর্স দেয়ার সাহস রাখেন না, আসলে সত্য সেটাই। যদি সেই সাহস না রাখেন, তাহলে লুকিয়ে পরকীয়ার প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক রাখাও আপনার উচিত হচ্ছে। স্বামী যা যা করে, আপনিও যদি সেটাই করেন… তাহলে আপনার আর স্বামীর মাঝে পার্থক্য কী রইলো আপু? আরেকটি কথা, আপনি যেমন স্বামী কাছ থেকে সুখ না পেয়ে আরেকজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, এমনও কি হতে পারে না যে আপনার কাছ থেকে অপূর্ণতার জন্যই স্বামীও অন্য নারীর দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন?

    আমার মতে আপনার জন্য সবচাইতে উচিত হবে যে মানুষটাকে এত ঘৃণা করেন,তার সংসার ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া। যদি সত্যি সুখী হতেন চান, তাহলে নিজের মত করেই জীবনটা শুরু করতে হবে। অসংখ্য মানুষ এটা করে থাকে, অসম্ভব কিছু নয়। আর যে মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক তার ব্যাপারে একটি চরম সত্য জেনে রাখুন আপু। সেই ভদ্রলোক আপনাকে ভালোবাসে না। সে কেবলই আপনার সাথে সময় কাটাচ্ছে, নিজের একঘেয়ে জীবনে একটু খানি বৈচিত্র্য খুঁজে নিয়েছে আপনার মাঝে। যদি ভালোবাসতেন, তিনি আপনাকে এই জীবন থেকে মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করতেন। সবচাইতে বড় কথা আপু, প্রেম করার সময় প্রেমিকারসব কিছুকেই সুন্দর মনে হয়, সব কিছুকেই সম্মান আর মূল্য দেয়া যায়। স্বামী হবার পর বেশিরভাগ পুরুষেরই চেহারা বদলে যায়। বাস্তবতা অনেক কঠিন আপু। যে লোকের আচরণে মুগ্ধ হয়ে আপনি একটা ফ্যান্টাসির জগতে চলে গেছেন, খোঁজ নিলে দেখবেন যে তার স্ত্রীও হয়তো মনের মাঝে ধুঁকে ধুঁকে আপনার মতই জীবন কাটায়। সেই মহিলার কষ্ট আর বাড়াবেন না আপু। প্লিজ। আপনি তো জানেন স্বামী অন্য নারীর কাছে যাওয়ার বেদনা কতটুকু…

    আপনি আপু নিজের একটি জগত তৈরি করুন। যা ভালো লাগে তাই করুন, শখের কাজ করুন, কোন একটি সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যান। নিজেকে সময় দিন, নিজের যত্ন করুন, বেড়াতে চান, সৌন্দর্য চর্চা করুন। ফেসবুক আর ফোনের মাজে নিজেকে আটকে রাখবেন না। বরং এমন কিছু করুন যেটার জন্য লোকে আপনাকে চিনবে। দেখবেন, যদি সফলতা পান এই হতাশা কেটে যাবে। নিজেকেও তখন যোগ্য মনে হবে। আর সম্ভব হলে কাউন্সিলিং করান ভালো কোথাও। আপনার মানসিক যন্ত্রণা কমবে। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন ঠিকই, কিন্তু নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সময় চলে যায়নি আপু। আপনি মানসিক ভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে গেছেন। নিয়মিত কাউন্সিলিং করালে আপনার আত্ম বিশ্বাস ফিরে আসবে।

    Professor Answered on October 31, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.