জীবনের উদ্দেশ্য কী ?
প্রশ্ন থেকেই যে কথাটা নিশ্চয়তার সাথে বলা যেতে পারে তা হলো— “উদ্দেশ্য” ব্যাপারটা “জীবন”এর সাথে সম্পৃক্ত । আরেকটু সামান্যীকরণ করলে বলা যেতে পারে “উদ্দেশ্য” প্রাণের সাথে সম্পর্কিত । এর কারণটাও বোঝা খুব কঠিন নয় । যে জগৎ প্রাণহীন, সেই জগতে উদ্দেশ্যের প্রয়োজন পড়ে না, কেবল হেতু (cause) থাকলেই যথেষ্ট । ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাতের হেতু উপস্থিত হলেই তারা ঘটে, এর নেপথ্যে কোনো উদ্দেশ্য লক্ষিত হয় না ।
কিন্তু যখন থেকেই প্রাণের আবির্ভাব, তখন থেকেই উদ্দেশ্যেরও আবির্ভাব । কেন? কারণ প্রাণের আবির্ভাবের সাথে-সাথেই চলে আসে সেই প্রাণটির টিকে থাকার প্রশ্ন । আর টিকে থাকতে হলে প্রাণটির এমন একটি পরিবেশ পাওয়া প্রয়োজন যা তার টিকে থাকার জন্য অনুকূল । অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে প্রকৃতি এক্ষেত্রে আর নিরপেক্ষ থাকছে না । প্রাণের সাপেক্ষে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ হয়ে উঠছে হয় “অনুকূল” নয়তো “প্রতিকূল” নয়তো “নিরপেক্ষ” । এর তাৎপর্য কী?
তাৎপর্য এটাই যে প্রাণটিকে টিকতে হলে সেটিকে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল পরিবেশ খুঁজে নিতে হবে আর প্রতিকূল পরিবেশ এড়িয়ে চলতে শিখতে হবে । অথবা আমাদের ভাষায় বললে তাকে নিজের “ভালো” এবং “মন্দ” বুঝতে শিখতে হবে । আর নিজের “ভালো”র দিকে অগ্রসর হওয়া (ও “মন্দের” থেকে দূরে যাওয়া)র প্রবণতা থেকেই চলে আসছে “উদ্দেশ্য” ।
এই অর্থে “উদ্দেশ্য”কে বুঝলে বলতে হয় প্রত্যেক জীবেরই একটা স্বভাবগত উদ্দেশ্য হলো আত্মসংরক্ষণ ও বংশবিস্তার ঘটানো । আমরাও তাঁর ব্যতিক্রম নই । নিজের আত্মসংরক্ষণের তথা বংশবিস্তারের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার অর্থই হল নিজের অস্তিত্ব লোপ পাওয়া ।
কিন্তু আমি জানি এই উত্তর আপনি চাননি । কারণ আপনি (বা যারাই এই প্রশ্ন করেন) তাঁরা কেউই প্রকৃতঅর্থে জীবনের উদ্দেশ্য জানতে চাইছেন না, তাঁরা আসলে জানতে চাইছেন জীবনের তাৎপর্য কী । বেঁচে থাকতে থাকতে নিজের বংশ রক্ষার খাতিরে বংশধর রেখে যেতে হবে—এটা যদি জীবনের উদ্দেশ্য হয়েও থাকে তাতে আমার জীবন কীভাবে সার্থক হচ্ছে?
দুঃখের বিষয়, এই প্রশ্নের কোনো নিরপেক্ষ উত্তর আমার মতে সম্ভব নয় আর তার কারণটাও খুব সহজ । এই দুনিয়ায় আমাদের কারও অভিজ্ঞতা অন্য কারও সাথে হুবহু এক নয় । এক-এক রকমের অভিজ্ঞতায় গড়ে ওঠে এক-এক রকমের দৃষ্টিভঙ্গি । আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারিত হয় জীবনের তাৎপর্যের ধারণা । অর্থাৎ ব্যক্তিভেদে জীবনের তাৎপর্যেরও ভেদ থাকবে । এতে সঠিক বা ভুলের কোনো ব্যাপার নেই ।
অতএব, সিদ্ধান্ত যার-যার নিজের-নিজের ।