জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থপর হওয়া উচিত? কেন?
জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থপর হওয়া উচিত? কেন?
আমি আজকাল একটু বেশি নেতিবাচক কথা বলে ফেলছি বোধহয়। আমার কাছে যে প্রশ্নগুলো আসছে সেগুলোর ইতিবাচক দিক আছে হয়তো কিন্তু কোনো কারণে মন বড় বিদ্রোহ করে উঠছে। সব ব্যাপারের ইতিবাচক দিক খুঁজে লিখে দিলেই জীবন সুন্দর হয়না। নেতিবাচক দিকটা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি কিন্তু বাদ দিতে পারিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওটাই ভয়াল রূপ ধারণ করে সামনে এসে দাঁড়ায়। যেমন এই প্রশ্নের উত্তরে আমি নীতিবাক্য শুনিয়ে দিতে পারি, যে —
“স্বার্থপরতা অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় বহন করে, স্বার্থপরতা ত্যাগ করা উচিত, স্বার্থপর মানুষ জীবনেও সুখী হতে পারেন না, স্বার্থপরতা চরম ক্ষতিকর, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। “
কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন। এই নীতিকথা মেনে চলতে গেলে জীবনের প্রতিটি পদে ঠোক্কর খেতে খেতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাবে।তাই কঠোর বাস্তবটাই দেখানোর চেষ্টা করলাম।
বর্তমান যুগে আমার মতে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বার্থপর হওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ কিছু বিষয় উল্লেখ করলাম।
- পড়াশোনার ক্ষেত্রে: অনেকসময় বন্ধুর উপকার করতে গিয়ে নিজের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভান্ডার মেলে ধরেন অনেকে।এরপর দেখা যায় নিজে পিছিয়ে পড়েছেন বন্ধু উপকৃত হয়েছেন। আগে নিজের সময়মত নিজেকে সম্পূর্ন তৈরি করে নিয়ে বন্ধুকে সাহায্য করা উচিত।
- উন্নতির ক্ষেত্রে: যে কোনো উন্নতির ক্ষেত্রে স্বার্থপর হতেই হবে। নাহলে নিজে পিছিয়ে থাকার দলে থেকে যেতে হবে।
- লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে: নিজের লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে অতি অবশ্যই স্বার্থপর হতে হবে।জীবনে কিছু লক্ষ্য স্থির করতে হয়। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজের ও নিজের পরিবার পরিজনের মঙ্গলের জন্য স্বার্থপরতা দোষের নয় কখনোই।
- পেশার ক্ষেত্রে: কর্মজীবনে আগে নিজের স্বার্থ দেখে পরে অন্যের ভালো করা উচিত।চাকুরিজীবী প্রত্যেকে এই কথার সারমর্ম বোঝেন। যারা এখনো কর্মজীবনে প্রবেশ করেন নি, তাঁরা আগে থেকে সতর্ক থাকা উচিত।
- সম্পর্কের ক্ষেত্রে: যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থরক্ষা করা উচিত। নাহলে চরম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আজকের যুগে নিজেকে নিঃশেষ করে যারা সম্পর্কের দাম দেন, সমাজ তাঁদের “বোকা” বলে অভিহিত করেন।কঠোর বাস্তব হল — ” প্রতিটি সম্পর্ক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে, স্বার্থহীন সম্পর্ক হয়না”। তাই আগে নিজের স্বার্থ রক্ষা করে তারপর সম্পর্ককে দাম দিতে হয়। তবেই জীবনে সুখী হওয়া যায়। নাহলে ওই “বোকা” হয়ে থাকতে হয়।এই কথাটা আমি ঠেকে ও ঠকে শিখেছি। সম্পর্ককে দাম দিতে গিয়ে নিজে নিঃশেষিত। প্রতিদানে অন্যপক্ষের বেইমানি ও স্বার্থপরতা ছাড়া অন্য কিছুই পাইনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আজকের শিক্ষা।
- প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে: জীবনের যে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা, তা সে পরীক্ষা হোক, খেলাধুলা হোক বা অন্য যে কোনো বিষয়েই হোক না কেন স্বার্থপর হতেই হয়।
- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে: নিজের অর্থনৈতিক অবস্থাকে উন্নত করার জন্য একটু স্বার্থপর হওয়া ভালো। নিজের ও নিজের পরিবারের ক্ষতি করে অন্যের কাছে দানশীল হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
স্বার্থপর কেন হতে হয়? কারণ আগে নিজে ভালো থাকা দরকার। তবেই হয়ত আমরা অন্যকে ভালো রাখতে পারি। নিজের কথা ভাবা কোনো অন্যায় নয়। বরং বর্তমান যুগে সেটাই কাম্য, সেটাই করা উচিত। নাহলে মানসিক বিপর্যয়, একাকীত্ব, শূন্যতা এই সবের সম্মুখীন হতে হয়। স্বার্থপর না হলে আজকের যুগে দুহাত শূন্যই রয়ে যায়। শূন্য হাতে অন্যেরও উপকার করা যায় না। নিজের জীবনকে, নিজেকে দাম দেওয়ার মধ্যে কোনো অপরাধ নেই। আগে নিজের জীবনে শান্তি আসা দরকার। তারপরে অন্যের শান্তি দেখা উচিত। নিজেকে ভালোবাসলে তবেই হয়ত অন্যকে ভালোবাসা সম্ভব। অন্যকে না ভালোবাসলেও ক্ষতি নেই, অন্ততঃ নিজে থেকে যাওয়ার ভয় তো থাকবে না। তাই আগে নিজের স্বার্থ দেখে তারপর অন্য কিছু ভাবাই উচিত।