জীবনে ব্যর্থতা না থাকলে আপনি কী করতেন?
জীবনে ব্যর্থতা না থাকলে আপনি কী করতেন?
সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না। ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেণিতে উঠবো। হুট করে বাসা থেকে বলা হলো ক্যাডেট কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে, ইয়া মোটা একটা বইও কিনে দিলো। পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে লাগলাম, বইয়ে লাগানো ক্যাডেট কলেজের কিছু ছবি দেখে লোভে পড়ে গেলাম বলতে গেলে। মাত্র একমাসের প্রস্তুতিতে সফলতার মুখ দেখলাম না শেষমেশ।
ছাত্রজীবনের প্রথম ব্যর্থতা, মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়েছিল। জীবনে ব্যর্থতা বলে কিছু না থাকলে হয়তো ক্যাডেট কলেজে পড়তাম। ওখানকার পড়ার মাধ্যম ইংরেজি হওয়াতে ইংরেজি ভীতি একেবারেই থাকতো না এখনকার মতো। শরীর ফিট থাকতো, হয়তো এতোদিনে সেনাবাহিনীর অফিসার হয়ে যেতাম।
পরের ধাক্কাটা খেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়ে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার অনেক শখ ছিল। প্রথম পর্যায়ে বাড়িতে পছন্দের কথাটা বোঝাতে ব্যর্থ হলাম। প্রেশারে পড়ে ডাক্তারির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং এর আশা জিইয়ে রাখতে টুকটাক পদার্থ, রসায়ন, গণিতও দেখে যেতাম। দুই নৌকাতে পা দিতে গিয়ে পিছলে পড়লাম
ফলাফল!! আবারো ব্যর্থ। ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা না থাকলে আজ ডাক্তারি অথবা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া শেষ করতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু পড়ার সুযোগ পেলাম সেখানেও সিদ্ধান্ত নিতে চরম ভুল করলাম।
ফলস্বরূপ, সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়ে সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়ে অনার্স শেষ করতে হয়েছে। ব্যর্থতার প্রসঙ্গ না আসলে হয়তো পছন্দের কোন একটা বিষয়ে অনার্স করতে পারতাম।
এবার একতা ফালতু কথায় আসি। ঠিক কয়টা ক্রাশ খেয়েছি হিসেব নেই, চার পাঁচটা তো হবেই। কলেজে পড়ার সময় এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে সাইকেল চালাতে গিয়ে অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটিয়েছি।
কাউকেই কখনো বলা হয়নি ব্যর্থ হবার ভয়ে। এসব ভালো কি খারাপ পরের হিসেব, অন্তত জীবনের একটা অংশ মিসিং। ব্যর্থতার প্রসঙ্গ না থাকলে আমারও একটা ইয়ে থাকতো নিশ্চয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার মাস খানেক পর থেকেই টিউশন শুরু। জীববিজ্ঞানের ছাত্র হবার পরও পদার্থ, রসায়ন, গণিত পড়াতাম। বছর দুই ভালোই চলল। হুট করেই আসলো বাঁধা
পুরানো টিউশন শেষ হবার পর নতুন খুঁজতে গিয়ে পড়লাম বিপদে। সাক্ষাতে গিয়ে আলোচনার সময় পঠিত বিষয় জানতেই বাদ পড়ে যেতাম। বাধ্য হয়ে, টিউশন পাবার জন্যই জীববিজ্ঞানের খুঁটিনাটি শিখতে হলো।
ব্যর্থতা না থাকলে আজও হয়তো ভালোলাগা বিষয়গুলো নিয়ে ছেলেপুলের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে পারতাম। চর্চার অভাবে এখন তো সব গিলে খেয়ে বসে আছি।
ছোটবেলাতে স্বপ্ন দেখতাম ক্রিকেটার হয়ে গেছি, তাও আবার এক্কেবারে অলরাউন্ডার। শোবার পর যখন ঘুম আসতো না, ভাবতে থাকতাম খেলছি। আহ! অসাধারণ।
ব্যর্থতার হিসেব নিকেশ না কষতে হলে হয়তো হয়তো ক্রিকেটার হয়ে যেতাম।
অনার্স শেষ করে মোটামুটি বেকার জীবনযাপন করছি। সরকারী চাকরির চেষ্টা চলছে আরকি। দুইটা পরীক্ষা দিয়ে পুরো ব্যর্থ।
ব্যর্থতা না থাকলে প্রথম পরীক্ষাতেই ভালো একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যেত।
ব্যর্থতা না থাকলে কি হতে পারতো তা বেশ গোলমেলে। অবশ্যই একটা জুতসই চাকরির ব্যবস্থা হতো, অর্থনৈতিক গোলযোগ থাকতো না। কাজকর্মের ফাঁক ফোঁকরে দুই একটা শখ আহ্লাদ পূরণ করতে পারতাম। মাঝেমধ্যেই দূরে কোথাও ঘুরতে চলে যেতাম, ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে বসে যেতাম পোকামাকড়ের ঘরবসতির ছবি তুলতে, রাতের বেলা টেলিস্কোপ নিয়ে চাঁদ তারা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেত। চকলেট আর গেমসে বুদ হয়ে থাকতাম।