জীবনে সুখী হতে কী কী প্রয়োজন?
জীবনে সুখী হতে কী কী প্রয়োজন?
সুখী কে না হতে চায়? আমরা প্রত্যেকেই যে যার মতো সুখে থাকতে চাই।
চারদিকের এত অশান্তি, এত উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তাকে দূরে সরিয়ে সুখী হওয়া কি সহজ বিষয়? সূত্র মেনে কি আসলে সুখী হওয়া যায়? এমন প্রশ্ন যদি আপনার মাথায় এসে থাকে তবে জেনে রাখুন, সুখী হওয়া মূলত একটি অভ্যাসের বিষয়। এমনি এমনি কারো জীবনে এই আরাধ্য বিষয়টি চলে আসে না। এর মূল চাবিকাঠি রয়েছে আপনার নিজের হাতেই।
আসুন প্রথমেই জেনে নেই সুখের রহস্যটা আসলে কি ?
কয়েকটা প্রশ্ন সম্পর্কে একটু চিন্তা করুন তো!
১। আপনি কি সুখী ?
২। আপনি কি জানেন সুখ কোথায় আছে?
৩। সুখ কি আদৌ আছে নাকি নাই?
৪। মুখে সুখের হাসি কোথা থেকে আসে?
৫। সব হাসিই কি সুখের হাসি?
৬। সুখ পাওয়া যাবে কিভাবে, কখন, কোথায়?
৭। সুখ কি শারীরিক নাকি মানসিক?
৮। সুখের রহস্য কি?
এবার নিজের প্রতি লক্ষ্য করুন কিছু বিষয়-
১। আপনার কি এমন মনে হয়েছে, আপনি কোন কিছুতে স্থির থাকতে পারছেন না?
২। সব কিছুতে অশান্তি মনে হয়, হাতের কাছে সুখ পাওয়ার মত লক্ষ লক্ষ টাকা, আরামদায়ক সব কিছু পেয়েও সুখ পাচ্ছেন না।
৩। আপনি সব কিছু পেয়েও মনে হচ্ছে কি যেন পাইনি।
৪। আমি কোন কিছুতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না।
৫। আবার কখনো কি এমন মনে হয়েছে, যাই দেখছেন, তাই ভালো লাগছে, সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে আর কত সুন্দর কত শান্তি? মনে হচ্ছে মনের মধ্যে একটা স্থিরতা আছে, মোলায়েম মোলায়েম একটা অনুভুতি।
★★★ সুখ ★★★
★ সুখ বা শান্তি হচ্ছে একধরনের মানসিক অনুভুতি বা ইমোশন, এটা ফিল করা যায়। এটা এমন এক ধরনের অনুভুতি, যাতে নিজেকে সব কিছুতে সন্তুষ্ট মনে হবে, আর সব কিছু মিলিয়ে একটা ভালো লাগা কাজ করবে, এবং মনের মধ্যে একটা আনন্দ বিরাজ করবে। তবে সুখ সবার জন্য এক রকম হয় না। এক এক জনের জন্য সুখ এক এক রকম আর এক এক জন একেক ভাবে সুখি হয়ে থাকেন। সুখ একটা মানসিক অনুভুতি, তবে এই মানসিক অনুভুতি পাওয়ার জন্য অনেক সময় শারীরিক সুস্থ্যতারও সম্পর্ক আছে। আবার শুধু মাত্র শারীরিক সুস্থতাই নয় এর পাশাপাশি, তার অর্থনৈতিক, পারিপার্শ্বিক পরিবেশেরও সম্পর্ক রয়েছে।
★ শারীরিক, অর্থনৈতিক, এবং পরিবেশের সুখ এটা সম্পূর্ন নির্ভর করে ব্যক্তির নিজের উপর, তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর, তাই এটা প্রত্যেক মানুষে মানুষে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে মানসিক সুখ পাওয়ার কমন কিছু টিপস আপনি অনুসরন করতে পারেন। মানসিক সুখের একবার সন্ধান পেয়ে গেলে তখন, বাকি গুলোকেও আপনি আপনার এই আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবেন।
১। নিজের মধ্যে স্থিরতা ফিরিয়ে নিয়ে আসুনঃ
সুখ অন্যতম একটি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে দেহ এবং মনের স্থিরতা। স্থির দেহ মনের ব্যক্তিরা অনেক বেশি সুখি হয়ে থাকেন। অস্থিরতা, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা সুখের পথে বাধা হয়ে থাকে। দেহ মন স্থির করার জন্য, আপনি রিলাক্সেশন প্রাকটিস করতে পারে, বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সেশন হয়ে থাকে যেমন, ব্রেদিং রিলাক্সেশন, প্রগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সেশন, এবং ইমেজারি রিলাক্সেশন। রিলাক্সেশন করার জন্য স্থির, শান্ত এবং আরামদায়ক স্থান বেছে নিন।
২। হাসি খুশি থাকুনঃ
নিজেকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। তবে এই হাসি খুশি থাকা আবার জোর করে নয় স্থির ভাবে চেষ্টা করুন। কোন স্থির এবং আরামদায়ক স্থানে বসে চোখ বন্ধ করে নিজেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন, এর পাশাপাশি মুখে হালকা একটু মুচকি হাসি ধরে রাখুন এবং অনুভব করুন। হাসি ধরে রাখার সময় নিজের মধ্যকার সকল চিন্তা ভাবনাগুলোকে মাথা থেকে দূর করে দিন, এবং সব কিছুকে নন জাজমেন্টালি, যা যেভাবে আছে সেভাবে অনুভব করার চেষ্টা করুন স্বর্গীয় সুখ অনুভব হবে।
৩। কোন কিছুকে বিচার না করে বর্তমানে থাকুনঃ
বর্তমানে থাকার একটা অন্যতম পদ্ধতির হচ্ছে মাইন্ডফুলনেস। মাইন্ডফুলনেস হচ্ছে কোন কিছুকে বিচারের দৃষ্টিতে না দেখে যেমন কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এভাবে বিবেচনা না করে বর্তমানে যেটা যেভাবে আছে সেটাকে সেভাবে অনুভব করার চেষ্টা করা। এর ফলে দেখতে পারবেন, আপনি যাই দেখছেন তাই দেখে মনে হবে, আহ কত সুন্দর, পৃথিবীটা কত সুন্দর, মানুষগুলো কত সুন্দর।
৪। নিজের মধ্যকার শিশুটিকে ধরে রাখুনঃ
একটা শিশুর কথা যদি চিন্তা করেন, সে কি করে সে কিন্তু কোন কিছুকে বিচার করে না, তার যা দেখে এবং যাই পায় তাতেই তার ভালো লাগে। শিশুরা সব সময় যেটা যেভাবে আছে সেটাকে সেভাবেই অনুভব করার চেষ্টা করে, তারা যাই দেখে তাই নতুন লাগে এবং সেটাকে এক্সপ্লোর করে।
৫। পূর্বেই প্রত্যাশা না রাখাঃ
আমাদের সমস্যাটা তখনোই হয় যখন আমরা কোন কিছুর প্রত্যাশা করে থাকি কিন্তু কোন না কোন ভাবে প্রত্যাশাগুলো পুরন না হয় তখনই অশান্তি লাগে মনে। কোন কিছুর প্রত্যাশা না করে আপনি যা পেয়েছেন সেখান থেকেই নতুন নতুন কিছু নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর কোন কিছু নেওয়ার পূর্বে সে জ্ঞান হোক বা অন্য কিছু নিজের মধ্যে এমন ভাব রাখুন যেন আপনি এটা নতুন ভাবে দেখছেন, তখন দেখবেন একই বিষয় হলেও আরো নতুন নতুন অনেক কিছু খুঁজে পাবেন, এবং স্বর্গীয় সুখ অনুভব হবে।
৬। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ
এমন তিনটি বিষয়ের কথা লিখুন যেগুলোর জন্য আপনি প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন। এগুলো যাদি খুবই সাধারণ ও গতানুগতিকও হয়ে থাকে তাহলে ভয় পাবেন না, শুধু কাগজের উপরে কিছু লিখে ফেলুন। এভাবে কৃতজ্ঞতা লেখা আপনাকে সবচেয়ে খারাপ দিনটিতেও কিছু না কিছু ভালো বিষয় চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
৭। উদার হোন বা মনের মধ্যে উদার হওয়ার ভঙ্গি করুনঃ
কাউকে সাহায্য করা ছাড়াই এবং কোন প্রকার কারন ছাড়াই ভালো কিছু করার জন্য নিজের মধ্যে একটা সচেতন প্রয়াস বা উদ্যোম তৈরি করুন। আপনি হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে কিভাবে সাধারণ একটু উদার হওয়ার অভিনয় আপনাকে এবং উদারতা গ্রহণকারীকে কতটা ভালোলাগা দিতে পারে।
৮। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুনঃ
শারীরিক ব্যায়ামের বেশ আশ্চার্যজনক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। শারীরিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তির,শক্তি অনেক বেশি থাকে, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি মাত্রায় থাকে, এবং তাদের মধ্যে খুব দ্রুত সাফল্য পাওয়ার অনুভুতি থাকে। শারীরিক ব্যায়াম, ঘুমের সমস্যা দুর করে, মস্তিষ্কের বিকাশকে উদ্দিপিত করে, এবং এটি বিষন্নতা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। আপনার কাছে যদি জগিং করা, এবং ওজন তোলা অনেক বেশি কঠিন মনে হয়, একদম ভয় পাবেন না কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটা দিয়ে শুরু করুন অথবা ধীরে ধীরে বাইক চালানো দিয়ে শুরু করুন।
৯। ধ্যান/মেডিটেশন করুনঃ
গবেষনায় পাওয়া গেছে যে,ধ্যান বা মেডিটেশন করলে উদ্বিগ্নতা কমায় এবং অধিকতর ইতিবাচত অনুভুতি প্রদান করে। যে ব্যক্তি নিয়মিত ধ্যান করেন, দীর্ঘস্থায়ী সুখ লাভের জন্য তাদের ব্রেইন স্থায়ীভাবে পুনর্গঠিত হয়ে থাকে।
১০। ইতিবাচক ডায়রি লেখাঃ
কিছু সময় নিয়ে আপনার জীবনের কোন ইতিবাচক ঘটনা আপনার ডায়রিতে লিখুন। আপনার বন্ধুদের সাথে কোন হাস্যরসাত্বক এবং আন্দদায়ক দিন সম্পর্কে লিখুন, কোন ভালো সিনেমা, অথবা কোন কাজ যেটি আপনি অনেক বেশি উপভোগ করেছিলেন সেগুলো সম্পর্কে লিখুন। এভাবে ইতিবাচক ডায়রি লেখা আপনার যেকোন বিষয়ে ইতিবাচক ফোকাস এর অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করবে।
১১। সম্পর্ক গড়ে তুলুনঃ
বেশ শক্তপোক্ত সামাজিক যোগাযোগ এবং এর চিন্তা আমাদের মেজাজের উপরে অন্যতম শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। যারা তাদের বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর জন্য অনেক বেশি নিবেদিত থাকেন দেখা যায় যে তারা অনেক বেশি সুখে থাকেন। আপনার ভালোবাসার মানুষটার সাথে যদি আপনার প্রতিদিন দেখা না হয় তাহলে আপনি অন্তত তাকে একবার ভিডিও কল অথবা মোবাইলো কল দিয়ে কথা বলতে পারেন। এর ফলে যদি মনে হয় যে আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না তাহলে সময় ম্যানেজ করুন এবং সেই সময়টা শুধুমাত্র তাকেই দিন।
১১। নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিনঃ
আপনি যদি মনে কোন ভাবেই কোন কিছুতে শান্তি পাচ্ছেন না তখন আপনি চাইলে কোন প্রফেশনাল ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে সাইকোথেরাপি নিতে পারেন। নিয়মিত সাইকোথেরাপি নিলে, মানসিক শান্তি ফিরে পাওয়া যায়।