জীবন এর মানে কি? আমার কাছে মনে হয় বেঁচে থাকা
জীবন এর মানে কি? আমার কাছে মনে হয় বেঁচে থাকা
জীবনের মানে কি?” এই প্রশ্নটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি করা দশটি প্রশ্নের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। মানুষ জন্মগতভাবে কোন না কোন সময় জীবনের অর্থ নিয়ে সংশয়ী হয়।
“
What is the meaning of life? প্রশ্নের উত্তর হতে পারে,"Whatever you want it to be."
এবার বলি, আপনার জীবনের মানে কি সেটা আপনি আপনার মতো করে জানেন অন্যরা তাদের মতো। আপনার কাছে মনে হয় বেঁচে থাকাটাই জীবন। আসলে জীবনের শাব্দিক অর্থ বেঁচে থাকাই, মরে গেলে সেটাকে তো জীবন বলে না। আইনস্টাইন মনে করতেন, মৃত্যুই শেষ নয়, বরং এটি একটি ইল্যুশন মাত্র। আমরা ছোটবেলা থেকে মৃত্যুকে শেষ মনে করে বড় হয়েছি তাই আমাদের মনে হয় যে মৃত্যুই বুঝি সবকিছুর ইতি। কিন্তু না, মানুষের জন্ম যেভাবে এই ইউনিভার্সের অংশ, এই ইউনিভার্সের উপাদানে মানব শরীর তৈরী, ঠিক তেমনই মৃত্যুর পরও সে এই ইউনিভার্সের অংশ হবে। মাঝখানে শুধু কিছু সময়কে আমরা বাস্তবতা বলে ভুল করি, নিজেদের মত করে চিন্তা করতে শিখি। হয়ত এটাই বাস্তবতা নয়। Biocentrism আইডিয়ার জনক রবার্ট ল্যাঞ্জা এর একটা চমৎকার লেখা আছে এখানে পড়তে পারেন…
এই যে, বেঁচে থাকা সেটা জন্মগ্রহণ নামক একটা প্রকৃয়ার মাধ্যমে শুরু হয় আর মৃত্যু নামক ভিন্ন আরেকটা প্রকৃয়ার মাধ্যমে অবসান হয়। মানুষ জন্মের সময় যেমন একা আসে অসহায়ের বেশে, তেমনি মৃত্যুর সময়ও খুব একা হয়ে পৃথিবী ছাড়ে। তখন তার ধন সম্পদের পাহাড় থাকলেও তা কোনো কাজে আসে না। মানুষ বিবস্ত্র পৃথিবীতে আসে আর বিবস্ত্র হয়েই যেত, যদি না সাদা কাফনটা না দেয়া হতো। মানুষের জন্মের পর গোসল যেমন অন্যের হাতে হয়, তেমনি মৃত্যুর পর তার শেষ গোসলটাও অন্যরা দেয়। তাহলে কীসের এত বাহাদুরি, অহঙ্কার, মারামারি, হানাহানি আর বেঈমানী করার প্রয়োজন পড়ে মানুষকে? অথচ ক্ষণস্থায়ী এই জীবনটা হতে পারে কতই না সুন্দর অর্থবহ!
তাহলে জীবনে অর্থ কী দাঁড়াল? আসছি একা আর যাব একাই। কেউ কারও স্মৃতিতেও একসময় না-ই হয়ে যাব, তাহলে কী দরকার এই দুনিয়ার প্রতি লোভ করে? জীবনের অর্থ হবে যেহেতু নির্দিষ্ট একটি সময়সীমায় আমরা বেঁচে থাকব আর কখন তা শেষ হবে হুট করে জানিও না। তখন জীবনকে ভালো কাজকর্মে, ন্যায়ের পথে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অসহায়ের পাশে প্রতিবিম্ব হয়ে দাঁড়ানোর নামই হলো জীবন।
এবার আসি ঈশ্বর প্রসঙ্গে- হীরক রাজার কথাই বলি , “যতো বেশী জানে , ততো কম মানে “। এই জন্য আমরা অনেকেই ধর্মকে বেশী মানি, পাপী তাপী বান্দা আমরা। ধর্ম ছাড়া গতি কোথায় ! galapogos tortoise বাঁচে ২০০ বছর , আর এত জেনে আপনি কি ২০০ বছর বাঁচবেন?
যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ করে যতই প্রমাণ করেন না কেন , ঈশ্বরবিহীন অস্তিত্ব, জীবনে কোন না কোন সময় উচ্চারণ করেছেন ‘নিয়তি’। এইখানে সমস্ত লজিক ফেল । ক্ষমতা নিজের হাতে থাকলে তো ,এতো ভালো ডাক্তার হয়ে , নিজেকে অমর করতে পারতেন , কিন্তু ঈশ্বরের হাতে ওইখানে ধুতির কিছু অংশ সাত পাকে বাঁধা। হৃদয়ের ওই যায়গাটায় ঈশ্বরের বসবাস। সুতরাং আপনার বিশ্বাস যদি ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত থাকে তবে মৃত্যুর পর আপনাকে জীবনের হিসেব প্রদান করতে হবে কড়ায়গণ্ডায়। তাই সাধু সাবধান।
মুদ্দা কথা হলো, আমরা মানুষ বিবেক দিয়ে চললে ধীরে ধীরে পাপ মোচন হবেই হবে। স্রষ্টাও ক্ষমা করবেন তার সৃষ্টির অনুতাপ সত্যিকার দেখলে। তিনি তো সবার মনের ভেতরের বাইরের সব খবর জানেন এবং রাখেন সর্বদা। তাহলে ভয় কী। আমরাতো তাঁর কাছেই ফিরব ফের। তাই পবিত্র হয়ে ফিরতে হবে তাঁর কাছে আত্মার বিশুদ্ধতায়। জীবনের শেষদিনটি যেন প্রিয়জনের সান্নিধ্য নিয়ে মরা যায়, তাই হওয়া উচিত জীবনের চরম উপজীব্য। অর্থবিত্ত, সুনাম আর গাড়ি-বাড়ি মৃত্যুর সময় অহেতুক মনে হবে কেবল রক্ত মাংসের মানুষের ভালোবাসার ভালোলাগার অনুভূতির স্পর্শ তখন পরম শান্তি দেবে। আসুন সবার মাঝে নিঃস্বার্থ, নির্লোভ আর মোহহীন ভালোবাসা ও মায়া ছড়াই।