জুম্মার দিন এর বিশেষত্ব কি?
জুম্মার দিন এর বিশেষত্ব কি?
Add Comment
জুম্মার দিনের বিশেষত্ব অনেক বেশি। এই দিনে প্রথম মানুষ হযরত আদম(আ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে বেহেশতে স্থান দেয়া হয়েছে, এই দিনেই তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং সপ্তাহের সাতটি দিনের মাঝে শুক্রবারই সে দিন যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শুক্রবার দু’আ কবুলেরও দিন,তবে দুয়ায় নিষিদ্ধ কিছু চাওয়া যাবে না। এই দিনেই সংঘটিত হবে কিয়ামত। আল্লাহ শুক্রবারকে অন্যান্য দিনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ(স) দিনটির এরকম আরো কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা(রা) এবং হুযাইফা(রা) থেকে বর্ণিত : রাসুলুল্লাহ(স) বলেন : “আমাদের পূর্বে যারা এসেছিলেন আল্লাহ তাদেরকে শুক্রবার থেকে দূরে রেখেছিলেন। ইহুদীদের ছিল শনিবার এবং খ্রিস্টানদের ছিল রবিবার। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে শুক্রবারের ব্যাপারে জ্ঞান দিলেন। তাই শুক্রবার, শনিবার, রবিবার যেভাবে ক্রমানুসারে আসে, হাশরের দিনেও তারা আমাদের অনুসরণ করবে। আমরা এই পৃথিবীর সর্বশেষ উম্মত কিন্তু হাশরেরে দিন আমরা সবার অগ্রে থাকব এবং আমাদের বিচার কার্যও অন্য সবার পূর্বে হবে।” (মুসলিম) আউস ইবন আউস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম শুক্রবার। এই দিনে আদম (আ)কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই দিনেই তিনি মারা যান, এই দিনেই শিঙ্গায় ফু (কেয়ামত) হবে এবং সকল সৃষ্টিকূল ধ্বংশ হয়ে যাবে । কাজেই বেশি করে আমার নামে দরুদ পেশ কর এই দিনে, কারণ তোমাদের পেশকৃত দরুদ আমার কাছে দেখানো হবে।” তারা বললেন ,”ইয়া রাসুলুল্লাহ(স) যখন আপনি ধূলার সাথে মিশে যাবেন তখন কিভাবে আমাদের দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে ?” প্রিয় নবীজী রাসুলুল্লাহ মুহাম্মদ(স) জবাবে বলেন, “আল্লাহ মাটিকে নিষেধ করেছেন নবীদের দেহ ভক্ষণ না করতে, তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক” (আবু দাউদ, সুনান আবু দাউদ ৪/২৭৩)। আবু লুবাবাহ ইবন আল-মুনধির হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, “শুক্রবার সব দিনের সেরা,এবং আল্লাহর কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ।ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতরের চেয়েও এই দিন আল্লাহর কাছে মহান।” এই দিন আল্লাহ আদম(আ) কে সৃষ্টি করেন, এই দিনেই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, এই দিনেই তিনি মারা যান, এই দিনে এমন একটি সময় আছে যখন কেউ আল্লাহর কাছে যা চায় , আল্লাহ তাকে তাই দেন, যতক্ষণ না হারাম কিছু চাওয়া হয়, এই দিনেই হবে কেয়ামত। এমন কোন ফেরেশতা নেই, নেই কোন আসমান, নেই কোন যমীন, নেই কোন পর্বত আর নেই কোন সাগর যে কিনা শুক্রবারের দিনটিকে ভয় করে না। ” (ইবন মাজাহ : ১০৮৪). বুখারী ও মুসলিম হতে বর্ণিত আছে, শুক্রবারের দিনটিতে এমন একটি নিদৃষ্ট সময় আছে যখন আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে যাই চাই না কেন আল্লাহ তা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না এমন কিছু চাওয়া হয় যা ইসলামে নিষিদ্ধ। এখানে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স) জুমার দিনের ফযিলত সম্পর্কে বলেন, ” শুক্রবারে এমন একটি ক্ষণ আছে যখন একজন মুসলিম, সে নামাজ আদায় করেছে এবং দুয়া করেছে, সেই দুয়া কবুল করা হয়ে থাকে”. তিনি(স) তাঁর হাতের দ্বারা ইশারা করে বোঝান যে, তা খুব অল্প একটি সময় । (বুখারি ও মুসলিম).শুক্রবারের আরেকটি ফযিলত হল জুমার নামায।এর গুরুত্ব এতই অধিক যে , পবিত্র কুরআনে আল-জুমুয়াহ নামে একটি পূর্ণ সুরা রয়েছে । আল্লাহ তায়ালা কুরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর । এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ ।” (আল-জুমুয়াহ ৬২:৯). এটি এমন একটি দিন যেদিন আল্লাহ তায়ালা, পরম করুণাময় আমাদের সগীরা (ছোট) গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন, শুধুমাত্র ঐ দিনেরই নয় বরং পুরো সপ্তাহের এবং সাথে অতিরিক্ত আরো তিন দিনের। সহীহ মুসলিমের হাদীসটি বর্ণিত হল : আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(স) বলেন, যদি কেউ যথাযথভাবে ওযু (পবিত্রতা অর্জন) করল, এরপর জুমার নামাযে আসলো, মনোযোগের সাথে খুতবা শুনলো এবং নীরবতা পালন করে, তার ঐ শুক্রবার এবং পরবর্তী শুক্রবারের মধ্যবর্তী সকল ছোটোখাট গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, সাথে অতিরিক্ত আরো তিনটি দিনেরও,…… ” (মুসলিম)। জুমআর আজান হওয়ার পর নামাজের প্রস্তুতি ব্যতীত সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। (সংগৃহীত)