ডার্ক ইন্টারনেট বা ডিপওয়েব কী ?

ডার্ক ইন্টারনেট বা ডিপওয়েব কী ?
Add Comment
1 Answer(s)

    ডার্ক ইন্টারনেট হচ্ছে ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ। দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে, তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি রয়েছে অদৃশ্য ওয়েবে। এর খোঁজ পায় না প্রচলিত ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনগুলো। মহাবিশ্বের ব্ল্যাকহোল রহস্যের আদলে ইন্টারনেটও ডার্ক ওয়েব রহস্যে আচ্ছন্ন। ভার্চুয়াল জগতে তথ্যভাণ্ডার হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টারনেট। ইন্টারনেট যেন তথ্যের মহাসমুদ্র। প্রয়োজনীয় শব্দ লিখে সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান করলেই পাওয়া যাবে অসংখ্য উত্তর। আর জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে রয়েছে গুগল, ইয়াহু, বিং, এওএল প্রভৃতি। ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে দিতে গুগল আজ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এসব সার্চ ইঞ্জিন ভার্চুয়াল বিশ্বের কতভাগ তথ্য অনুসন্ধান করে দিতে পারে। উত্তর হচ্ছে, মাত্র ১০ ভাগ! তাহলে বাকি ৯০ ভাগ ডাটা কোথায়? ভার্চুয়াল ডাটার এই বৃহত্তর অংশটি লুকিয়ে আছে ডার্কওয়েব বা ব্ল্যাকওয়েব বা ডিপওয়েব নামক এক অদৃশ্য ওয়েবে। মহাবিশ্বের ব্ল্যাকহোল রহস্যের ন্যায় ইন্টারনেটও অদৃশ ওয়েব রহস্যে আক্রান্ত। এক জরিপে জানা গেছে, দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে, তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি সংরক্ষিত আছে অদৃশ্য ওয়েবে। প্রকৃতপক্ষে এই অদৃশ্য ওয়েব হলো মহাসাগর পরিমাণ আর দৃশ্যমান ইন্টারনেট হলো মহাসাগরে ভেসে থাকা এক টুকরো বরফের সমান!।

    ডিপওয়েব কী :

    ডিপওয়েব হলো ইন্টারনেটের একটা অংশ, যা সার্চ ইঞ্জিনে যুক্ত করা হয়নি। সার্চ ইঞ্জিনগুলো সাধারণত ভার্চুয়াল রোবট তথা ক্রলার দিয়ে ডাটা সংগ্রহ করে থাকে। এই ক্রলারগুলো ওয়েবসাইটের এইচটিএমএল ট্যাগ দেখে ওয়েবসাইটগুলোকে লিপিবদ্ধ করে। এছাড়া কিছু কিছু সাইট কর্তৃপক্ষ তাদের তথ্য যোগ করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে অনুরোধ পাঠায়। তবে সাইট কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের ডাটা সার্চ ইঞ্জিনের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রাখতে পারেন। এজন্য সংশ্লিষ্টরা রোবট এক্সিকিউশন প্রটোকল ব্যবহার করেন। কিছু সাইট আছে ডায়নামিক অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে এ ধরনের সাইটের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এছাড়া সার্চ ইঞ্জিনগুলো টেক্সট বাদে অন্য ফরম্যাটে থাকা [যেমন ফ্ল্যাশ ফরম্যাট] ওয়েবপেজ খুঁজে পায় না। ম্যাকফির নিরাপত্তা গবেষক কেজায়া মিউনজ ডার্কওয়েব সম্বন্ধে বলেছেন, ডিপওয়েব বা ডার্কওয়েব অনেক তথ্য নিয়ে তৈরি, যা প্রযুক্তিগত কারণের জন্য সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা আপডেট করা যায় না। ডিপওয়েব ১৯৯৪ সালে শুরু হয় এবং তখন এটি হিডেন ওয়েব হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০১ সালে এর নাম ডিপওয়েব বা ডার্কওয়েব রাখা হয়। ডার্কওয়েবে সাধারণত গোপনে কর্মকাণ্ড চালানো হয়। সামরিক বাহিনী, বিপ্লবী, হ্যাকার, এমনকিই রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও ডার্কওয়েব ব্যবহার করে। এখানে গোয়েন্দারা খুব গোপনে নিজেদের ভেতর তথ্য আদান-প্রদান করতে অথবা চুরি যাওয়া তথ্য ফিরে পেতে দর কষাকষি করতেও দেখা যায়। বিশ্বের অনেক দেশই ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি রয়েছে। এজন্য ভিন্ন মতাবলম্বীরা প্রায়ই ডার্কওয়েবের আশ্রয় নেয়।

    কীভাবে কাজ সম্পাদন করে :

    টর বা টিওআর [দ্য অনিয়ন রাউটার] হলো ডার্ক বা ডিপওয়েবে যাওয়ার প্রধান ওয়েব পোর্টাল। এটি ব্যবহারকারীর তথ্যকে এনক্রিপ্ট [গোপন সংকেত] করে এবং একটি স্বেচ্ছাসেবক সার্ভারের মাধ্যমে সারাবিশ্বের নেটওয়ার্কে পাঠায়। এ পদ্ধতিতে পাঠানো তথ্য অন্যের পক্ষে উদ্ধার করা অসম্ভব। টর যে কোনো পিসিতে ব্যবহার করা যায়। ম্যাক, এমনকি আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোনের যে কোনো মোবাইল ডিভাইস দিয়েই টর ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এখানে দৃশ্যমান ওয়েবের মতো কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না, কারণ এখানে গুগলের মতো কোনো সার্চ ইঞ্জিন নেই, যেটি মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু খুঁজে দেবে। এর পরিবর্তে এটি উইকি এবং বিবিএসের মতো এগ্রিগেটেট লিংক রয়েছে, যা ডিপওয়েবের লোকেশন দেখাবে। এসব সাইটের ঠিকানাও এমন যে মনে রাখাও ভীষণ কঠিন। বিশেষ কিছু জ্ঞান [যেমন প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, প্রক্সি] না থাকলে এ নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা যায় না। এ অংশের আরেকটি বিশেষত্ব হলো – এরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সাইটগুলোর মতো টপ লেভেল ডোমেইন [যেমন ডট কম] ব্যবহার না করে ‘শেইডো টপ লেভেল ডোমেইন’ ব্যবহার করে, যা কি-না মূল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওয়ার্কের অধীনে থাকে। এ ধরনের ডোমেইনের ভেতর আছে বিটনেট, অনিয়ন, ফ্রিনেট প্রভৃতি। ডার্কওয়েবের ডোমেইনগুলো ডট কমের পরিবর্তে ডট অনিয়ন হয়। ডার্কওয়েবের লিঙ্কগুলো উদ্ভট হওয়ায় এখানে উল্লেখযোগ্য সময় কাটালে কোন লিংক থেকে কোন লিংকের পেজ আসবে, তা আর মনে রাখা সম্ভব হবে না।

    ডিপওয়েবে যা পাওয়া যাবে :

    কপিরাইটের আওতায় থাকা কোনো বইয়ের সর্বশেষ সংস্করণ, গান, সিনেমা, শিশু পর্নোগ্রাফি, মাদকসহ নিষিদ্ধ পণ্যের পসরা এবং বাণিজ্যের ভার্চুয়াল অভয়ারণ্য এই ডার্কওয়েব। কিছু সাইট আছে, যেখানে কট্টরপন্থি গ্রুপগুলো শিক্ষা দিচ্ছে, কীভাবে গোলা-বারুদ বানাতে হয়? কিছু সাইটে তো রেডিমেড অস্ত্রই বিক্রি হয়! একে ৪৭ থেকে শুরু করে রকেট লঞ্চার, মর্টারের মতো অস্ত্রও কিনতে পাওয়া যায় এখানে। আরব-বসন্তের সময় বিপ্লবীরা এই ডার্কওয়েবেই যোগাযোগ রক্ষা করেছে। এছাড়া অস্ত্র পাচার, ভাড়াটে হত্যাকারী, সন্ত্রাসবাদীদের জন্য ডার্কওয়েব হয়ে উঠেছে অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এর মধ্যে ‘সিল্করোড’ দারুণ জনপ্রিয়। ফোর্বসের হিসাবে, সিল্করোডে গত বছর ২২ মিলিয়ন ডলারের বিকিকিনি হয়েছিল। এখানে মাইক্রোসফট, অ্যাপেলের পণ্য এখানে ৮০ ভাগ পর্যন্ত ডিসকাউন্টে পাওয়া যায়। ডার্কওয়েবে ডাটা স্থানান্তরের সময় কেউ যদি চুরি করতে সক্ষমও হয়, তার পক্ষে এটা বের করা সম্ভব হবে না যে, এটার প্রেরক কিংবা প্রাপকই বা কে। এ ধরনের দুর্বোধ্য সিস্টেমের কারণেই এসব নেটওয়ার্ক সব সময়ই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। গত মাসে সিল্ক রোডের উদ্ভাবক, রস উলব্রিচ্যাট এফবিআই কর্তৃক গ্রেফতার হয়। কিন্তু এফবিআই সিল্ক রোড নষ্ট করে দিলেও ডার্কওয়েবের কিছুই করতে পারেনি। তবে সিল্ক রোড ২.০ খোলার প্রস্তুতি চলছে। ডিপওয়েবের সর্বাধিক লেনদেন সাধারণত বিটকয়েনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক বিটকয়েন হলো নয় ডলার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ। বিটকয়েন নামক এই ডিজিটাল মুদ্রা দিয়ে সব কেনা যায়। কিন্তু সব ডিপওয়েব আবার খারাপ না। যেমন উইকিলিকস সাইটটি জনগণের সামনে আসার আগে ডিপওয়েবেই ছিল। এমনকি এখনও কেউ যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উইকিলিকসে প্রকাশ করতে চায়, তাহলে তা ডিপওয়েব বা ডার্কওয়েবের মাধ্যমেই করা সম্ভব। মোট কথা, এটি এমনই এক অন্ধকার জগৎ, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে কয়েকবার ভেবে নিতে হবে।

    Professor Answered on July 26, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.