ডায়বেটিস রোগ কেন হয়?

ডায়বেটিস রোগ কেন হয়?
Add Comment
1 Answer(s)

    ডায়বেটিস হলো রক্তের উচ্চ গ্লুকোজ জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা। তেল ছাড়া রেলগাড়ি নামের যন্ত্রটি চলে না। মানবদেহ এক ধরনের যন্ত্র। আর এই যন্ত্রের তেল হচ্ছে গ্লুকোজ নামের একটি পদার্থ। রেলগাড়ির তেল জ্বালাতে যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন, তেমনি আমাদের দেহের গ্লুকোজকে কাজে লাগাতে হলে ইনসুলিন নামের একটি পদার্থের প্রয়োজন। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্ত থেকে গ্লুকোজের কণাগুলোকে টেনে এনে দেহের কোষে দেওয়া। এই ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয় থেকে। যখন অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দেহ ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারে তখনই রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর এর ফলে দেহে তৈরি হয় নানা অসামঞ্জস্য। এর নাম ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ।

    ডায়াবেটিস রোগী যে খাদ্য গ্রহন করছে তা থেকে তৈরি হচ্ছে গ্লুকোজ। আর এই গ্লুকোজের সবটুকু তার দেহে ব্যবহার হচ্ছে না, অর্থাৎ তার রক্তে মিশে থাকছে অতিরিক্ত গ্লুকোজ । এতে করে তার রক্ত হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘন। এই ঘন রক্ত চিকন চিকন রক্তনালীর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এবং তা আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিচ্ছে রক্ত চলাচলের পথ। আর যে পথে রক্ত পৌঁছাবে না সে পথে কোনো অক্সিজেনও পৌঁছায় না। ফলে অক্সিজেনের অভাবে শরীরের ভিতরকার কোষ বাঁচতে পারে না। তার মানে কতগুলো টিস্যুর নির্ঘাৎ মৃত্যু। এমন করে অঙ্গহানির পথে এগোবে শরীর যন্ত্র। অতিরিক্ত গ্লুকোজ মেশা ঘন রক্ত ছাকতে গিয়ে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, একে একে সব অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে অসম্ভব দ্রুতগতিতে।

    ডায়বেটিস যে শুধু বয়স্ক ব্যাক্তিদের হয় তা নয়। শিশুদেরও হতে পারে ডায়বেটিস।ইদানীংকালে শারীরিক কর্মকাণ্ড (খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদি) কমে যাওয়ার কারণে অনেক অল্পবয়সী শিশু-কিশোরদেরও ডায়বেটিস হচ্ছে। সুষম খাদ্য এবং ব্যায়াম চর্চার অভাবে ডায়বেটিস এ আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে ১৫ হাজারের বেশি শিশু ডায়বেটিস বা বহুমুত্র রোগে ভুগছে। ডায়বেটিসে আক্রান্ত একজন বয়সী ব্যক্তির মধ্যে যে ধরণের উপসর্গ দেখা দেয় তার সবই শিশুরোগীদের মধ্যেও দেখা দেয়।

    ডায়বেটিস এর প্রকারভেদঃ
    ডায়বেটিস ২ রকম।
    টাইপ ১ ডায়বেটিস খুব দ্রুত উপসর্গ দেখায় এবং খুব দ্রুত ডেভেলপ করে, সাধারণত সপ্তাহ দুই-তিনেকের মধ্যে। উপসর্গগুলো তাড়াতাড়ি চলেও যায় যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়।

    টাইপ ২ ডায়বেটিস খুব ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, কয়েক বছর ধরে। কেবলমাত্র নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করানোর মাধ্যমেই তা ধরা পড়া সম্ভব। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলে উপসর্গগুলো দূর করা সম্ভব।

    উপসর্গঃ
    প্রধান উপসর্গসমূহের মধ্যে যেগুলো সাধারণত দেখা যায়ঃ
    – ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, বিশেষ করে রাতে।
    – ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া।
    – খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া।
    – হঠাৎ করে দ্রুতহারে ওজন হ্রাস পাওয়া।
    – যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশান দেখা দেয়া।
    – শরীরের কোথাও কেটে ছিড়ে গেলে, খুব আস্তে ধীরে ক্ষত শুকানো।
    – ঝাপসা দৃষ্টি।

    ডায়বেটিস হবার সম্ভবনা কাদের বেশীঃ
    যাদের বংশে ডায়বেটিস রোগ আছে তাদের টাইপ ১ ডায়বেটিস হবার সম্ভবনা বেশী। এছাড়া টাইপ ২ ডায়বেটিস হবার সম্ভবনা বেশী হয় বয়সের সাথে – বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়বেটিসের সম্ভবনা বেশী হয়।

    ক. এশিয়ান এবং আফ্রিকানদের ডায়বেটিসের সম্ভবনা বেশী।
    খ. একজন মা যখন বেশী ওজনের সন্তান গর্ভে ধারন করেন তখন তার ডায়বেটিসের
    সম্ভবনা বেশী
    গ. ওজন বেশী যেমন পুরুষের কোমড়ের মাপ ৩৫ ইন্চির বেশী এবং মহিলাদের ৪০ ইন্চির
    বেশী হলে ডায়বেটিসের সম্ভবনা বেশী দেখা যায়।
    ঘ. অলস জীবনযাপন করলে ডায়বেটিসের সম্ভবনা বেশী থাকে।

    প্রতিরোধঃ
    কিছু কিছু নিয়ম পালন করলে ডায়বেটিস থেকে সাবধানে থাকা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র কয়েকটি সহজ উপায় চর্চা করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায় ৮০ শতাংশ।
    ১.স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াঃ অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড (বার্গার, স্যান্ডউইচ, পিজা, শর্মা, চিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাইজ ইত্যাদি), কোমল পানীয় এবং চকলেটসহ যেকোনো মিষ্টি খাবারেই ডায়বেটিসের ঝুঁকি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এগুলো থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন এবং তাদের এসব খেতে নিরুৎসাহিত করুন, সহজ ভাষায় এর অপকারিতা বর্ণনা করুন। ঘরের খাবার খাওয়ার অভ্যেস করুন। এবং প্রতিদিনের খাবারের চার্টে প্রচুর ফল ও শাকসবজি রাখুন। প্রতিদিন নির্দ্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

    ২.নিজে নিয়ম করে দিনে অন্তত ২০ মিনিট ব্যায়াম করুন, সাথে আপনার সন্তানকেও বলুন আপনার সাথে যোগ দিতে। আপনার উৎসাহই পারে তাদের সুস্থ রাখতে।

    ৩.স্বাভাবিক দেহ ওজন বজায় রাখা(বি এম আই ১৮.৫- ২৪.৯ এর মধ্যে রাখা)। স্বাভাবিক ওজনের পুরুষের ৭০ শতাংশ ঝুকি কম থাকে এবং স্বাভাবিক ওজনের নারীদের ডায়াবেটিস হওয়ার অশঙ্কা ৭৮ শতাংশ কম।

    ৪. ধূমপান করে থাকলে বর্জন করুন এবং মদ্যপান পরিহার করুন।

    ৫.বাসায় একটি ডায়বেটিস পরিমাপের যন্ত্র কিনে নিতে পারেন, যাকে ইংরেজিতে বলে গ্লুকোমিটার। ইদানীং বাজারে সস্তায় এগুলো পাওয়া যায়। নিয়ম করে, মাসে অন্তত একবার পরিবারের সবার ডায়বেটিস পরীক্ষা করুন।

    অনেক ডায়বেটিস রোগীকেই দেখা যায় নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন নিতে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে অবশ্যই ইনসুলিন নেবেন না! পুণরায় বলছি, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে অবশ্যই ইনসুলিন নেবেন না!যাদের ইতোমধ্যে ডায়বেটিস আছে, এবং যারা প্রেস্ক্রাইবড ইনসুলিন নিচ্ছেন, তারা দীর্ঘসময় ধরে খালি পেটে থাকবেন না। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ খুব বেশি কমে যাওয়া) হয়ে যেতে পারে যার ফলাফল খুব একটা সুখকর নয়।এই গাইডলাইনগুলো মেনে চললে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বেশ ফলপ্রসূ হয়।

    ভয়াবহতাঃ
    ডায়াবেটিস স্বাস্থ্যের একটি বড় সমস্যা। কেউ কেউ একে অন্যান্য সকল মারাত্মক রোগের জননী বলে। কাঠের সাথে ঘুণের যে সর্ম্পক, শরীরের সাথে ডায়াবেটিসের সে সম্পর্ক। অর্থাৎ কাঠে ঘুণ ধরলে যেমন এর স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাড়াতাড়ি শরীর ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের হার্ট, কিডনী, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিষ্টেম-এ গরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে।অন্যদের তুলনায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির হৃৎরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের আশংকা থাকে ৪ গুণ বেশি।

    ঔষধঃ
    ডায়বেটিসের যেসব পথ্য আছে এর মধ্যে ইনসুলিন এবং কিছু ওষুধ রয়েছে। এদের মূল কাজ রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা। তবে এসব ওষুধ কিছুটা ব্যয় বহুল।

    Professor Answered on August 19, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.