ডিপ্রেশন বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?
ডিপ্রেশন বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?
একটি জীবাণুমুক্ত সুঁই নিন।
আঙুলে এমনভাবে খোঁচা দিন যাতে এক ফোঁটা রক্ত বেরিয়ে আসে।
আপনারা কতজন বিনা দ্বিধায় কাজটি করতে পারবেন? এরকম লোক খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন, তাই না? ঠিক আছে, নিজেকে আঘাত করতে না পারা দোষের কিছু নয়।
তবে,
আমি এমন একজনকে চিনতাম যে নিজেকে সুঁই দিয়ে খোঁচাতে পারেনি অথচ, সে একটি বিল্ডিংয়ের উপরের তলা থেকে লাফ দিয়েছিলো।
অর্থাৎ, বিষণ্নতা বাস্তব।
এখন দুটি গল্প শুনুন।
আমি আর একজনকে চিনতাম,
- তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেশ ভালো পদে কর্মরত ছিলেন।
- তার নিজের তৈরি একটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি ছিল।
- একসময় বাবা-মায়ের চাপে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেন ।
- তার পরিবারের সাথে এ নিয়ে মতবিরোধ ও স্ত্রীর সাথে মনমালিন্য ছিল।
- যাহোক কিছুদিন পরে, তিনি একটি সুন্দর বাচ্চা ছেলের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
- এবং
- এরপর চারদিন পরে, আত্মহত্যা করেন।
আমি একটা মেয়েকেও চিনি,
- সে একটি বিশেষ জাতির ছিলো যেখানে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে দেয়া হয় না।
- তার পরিবার থেকে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়া হয়। একসময় বাবা-মা তার পড়ালেখার অর্থ দেয়াও বন্ধ করে দেন।
- তার একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। সে তার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে এবং একদিন ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
- কিন্তু বয়ফ্রেন্ডটি তাকে ফাঁকি দেয়, রাস্তায় তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।
- সে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সাহস পায়নি, কারণ সে ভয় পাচ্ছিল যে তার বাবা-মা হয়তো তাকে মেরেই ফেলবে।
- তার অ্যাকাউন্টে ১৭ হাজার টাকা ছিল, সে টাকা দিয়ে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছিলো।
- সে একবেলা খেয়েই চলত এবং সেটাও আসতো সহপাঠীদের টিফিন থেকে।
- পরবর্তীতে সে একটি প্রাইভেট টিউশনে লেকচারার হিসেবে কাজ শুরু করে এবং তারপর ধীরে ধীরে একটি ঘর ভাড়া করে টিউশনি করা শুরু করে।
- সে পরবর্তী এবং শেষ বছরের জন্যও ৪২ হাজার টাকা কলেজের ফি দিতে সক্ষম হয়।
- সে প্রথম র্যাঙ্কের ছাত্রী ছিলো কিন্তু, আর্থিক কারণে এমবিএ করতে পারেনি।
- তবে সে হাল ছেড়ে দেয়নি এবং দুই বছর পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএতে ভর্তি হয়।
- আজ সে তার স্বামীর সাথে খুব সুখী জীবনযাপন করছে।
একবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি হাল ছেড়ে দিতে চাওনি ?
সে বলল, হ্যাঁ!
ওই সময়ে সে প্রচুর কাঁদতো এবং অনেক রাত নির্ঘুমে চলে গেছে। কিন্তু তার কাছে মাত্র দুটি বিকল্প পথ ছিল-
এক. কাঁদা, ভাগ্যকে দোষারোপ করা এবং অন্ধকার জীবনকে মেনে নেওয়া
অথবা,
দুই. জীবন যুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করা।
সে বলে, সে লড়াই করার চেষ্টা করেছিল এবং এরপরেই জীবনে সফলতা আসতে শুরু করে।
— — — — — — — — — — — — — — — —
আমি মনে করি, জীবন আমাদের দিকে কী নিক্ষেপ করবে তা আমরা নিজেরা ঠিক করে দিতে পারি না তবে, এর দিকে ফিরে দাঁড়াতে হবে কিনা, লড়াই করতে হবে কিনা তা সম্পূর্ণরূপে আমাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে।
তো বিষণ্নতা কি বাস্তব?
হ্যাঁ, সেই লোকটির জন্য সত্য যেখানে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করে
এবং
না, সেই মেয়েটির জন্য সত্য নয় যে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, লড়াই করুন।