দুনিয়াতে বেঁচে থেকে কেমন লাগছে আপনার ?
দুনিয়াতে বেঁচে থেকে কেমন লাগছে আপনার ?
প্রতিটা মুহূর্ত দিব্যি লাগছে। বই, আবৃত্তি, নেটফ্লিক্স, কোর্সেরা, সমসাময়িক ঋদ্ধ পাঠক-লেখক বন্ধুদের সাথে সারাক্ষণ আড্ডা, কর্মক্ষেত্র (বইয়ের রাজ্য বাতিঘর), পরিবার, গ্রন্থকীটের জীবনযাপন সবকিছুই একেকটা সুখের উপাদান। এত সুখ সহ্য হয় না, তাই আকস্মিক দুঃখ আসে। সে ক্ষণস্থায়ী দুঃখের মাঝেও দীর্ঘস্থায়ী সুখ অন্তর্নিহিত থাকে।
এই মুহূর্ত ছাড়া যাবতীয় সবকিছু মূল্যহীন। মূহূর্তে বাঁচি। এইযে এখন লিখছি; এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে! লেখাটা শেষ করে একটা বই সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করে পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখব; তখন বেঁচে থাকব। তারপর বই শেষ করে নেটফ্লিক্সে যখন একটা মুভি দেখব; তখন সর্বোচ্চ সুখে বেঁচে থাকব। তারপর ঘুম।
সকালে আবার বইয়ের রাজ্যে গমন। অসংখ্য বই উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখা। ভালো বইগুলো নিয়ে কনটেন্ট প্ল্যান করা এবং সেগুলো নিয়ে মার্কেটিং করা।
তারপর আরও অসংখ্য বই পড়া। নিজের ইচ্ছেমতো। ফ্লোরের কর্মচারীদের বলব ‘এই বুদ্ধদেবের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধের বইটা নিয়ে আসো তো, দে’জের রণজিৎ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতার বইটা নিয়ে আসো, মুরাকামির ছোটোগল্পের বই ‘ম্যান উইথআউট উইমেন’ বইটা নিয়ে আসো তো।’ এমন আরও অসংখ্য বই। যখন যা ইচ্ছা হয়। এইতো আজ দেবারতি মিত্র নামক একজন লেখিকাকে আবিষ্কার করলাম। তাঁর গদ্য চমৎকার। উঁনি যে প্রিয় বই ‘অক্ষয় মালবেরি’র লেখক মণীন্দ্র গুপ্তের স্ত্রী সেটা তো এতদিন জানাই ছিল না। আমি তো আনন্দে আত্মহারা।
তারপর বিকেলে হয়তো দেশ এর ‘বই সংখ্যা’ পড়ব। সন্ধ্যায় রিডার ডাইজেস্ট, রাতে টাইম ম্যাগাজিন আর বিজনেস ইকোনমিকস ম্যাগাজিন টা একটু পড়ে দেখব।
তাঁরপর রাতে গ্রন্থকীটদের সাথে আড্ডা দিয়ে আবার বাসায় এসে একটা আস্ত বই আর মুভি, হয়তো কিছুক্ষণ একাডেমিক, কিংবা ইচ্ছে হলে ঢাকার রাস্তায় কোনো বোহেমিয়ানকে নিয়ে পদব্রজে ভ্রমণ অথাব পুরান ঢাকা।
এইতো জীবন। জানা জীবনটা উজাড় করে আনন্দ-দুঃখকে সাথে নিয়ে তীব্রভাবে বেঁচে থাকা বিরহে। কল্পনার খেলায় দক্ষ হওয়ার প্রচেষ্টা আর ভাবনাচর্চার ভণিতা করা। বই থেকে মাঝেমধ্যে দূরে থাকা। কল্পনার অলীক জগতে আর ভাবনাচর্চায় বিভোর থেকে ভীব্রভাবে বেঁচে থাকা।
আর কী চাই! পুনর্জন্ম কিংবা পরকাল? —ভাবতে পারি না। কল্পনায় হাস্যকর লাগে। তাই বর্তমানের এই মূহূর্তে গ্রন্থকীটের জীবনটাই আমি বেছে নিয়েছি। যেখানে আনন্দ অসীম। যেখানে দুঃখকে মেলানকোলি লাগে৷ বিরহের স্রোতধারা মধুর লাগে।
ভ্যান গগের কথা মনে পড়ে, যার শেষ কথা ছিল, ‘স্যাডনেস উইল লাস্ট ফরএভার।’ বর্তমান সময়ের আমার একজন পছন্দের লেখক হাসনাত শোয়েব আবার ভ্যান গগের শেষ অমর বাণী নিয়ে একটা আস্ত বই লিখেছেন এবারের বইমেলায়। বইয়ের নামও সেই অমর শেষ দীর্ঘশ্বাস ‘স্যাডনেস উইল লাস্ট ফরএভার।’ বইটা আমার এতটা ভাল লাগছে যে আমি মুহূর্তটা সর্বোচ্চ সুখের সহিত বেঁচে থাকছি। এই যে একটু একটু আমাকে সবাই অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আনন্দ দিচ্ছে তা কি আমি সহ্য করতে পারব! সহ্য করতে পারব না বলেই হয়ত দুঃখ আসবে যা ভবিষ্যত(ভ্রম) মূহূর্তে সুখ হয়ে যাবে।