ধর্ষন এবং ধর্ষনের সাজা কি?
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারায় ধর্ষন এবং ধর্ষন জনিত কারনে মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদির সাজা সম্পর্কে আলচনা করা হয়েছে। অত্র ধারায় একজন অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছাড়া ও অর্থ দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে ধর্ষন একটি সামাজিক ব্যাধি। একজন নারী বা শিশু ধর্ষিতা হবার পর আদালতে বিচার প্রার্থনা করলে বহুলাংশে নাজেহাল হয়ে থাকে। তার যৌন জীবনের বিবরণ আদালতে ব্যাক্ত করতে বাধ্য করা হয়। তদুপরি গোটা সমাজ তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিকভাবে ধর্ষিতাকে চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়না। ফলে মেডিকেল রিপোর্ট সটিকভাবে পাওয়া যায়না। ধর্ষনের মত জঘন্য কাজ সহজে ঘটানো যায় কিন্তু এটা প্রমান করা খুবই কটিন বিষয়। বিচারকালে ধর্ষিতা তার যৌন সম্পর্কের অতীত ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে সংকোচবোধ করে। কিন্তু জেরা তাকে নিস্তার দেয়না।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ ধারায় ধর্ষনের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত সংজ্ঞানুসারে যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বত্সরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বত্সরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
ধর্ষন একটি অপরাধ অপরাধ মূলক যৌনসঙ্গম। দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষনের উপাদান সমূহ বিস্তারিতভাবে বর্নিত আছে। এই ধারামতে যদি কোন পুরুষ নিম্নোক্ত পাঁচটি বিষয়ের কোন একটি এবং যে কোন অবস্থায় কোন স্ত্রীলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করে, টা হলে সে ধর্ষন করেছে বলে গণ্য হবে।
প্রথমতঃ স্ত্রীলোকটির ইচ্ছার বিরুব্ধে।
দ্বিতীয়তঃ স্ত্রীলোকটির সম্মতি ব্যাতিত।
তৃতীয়তঃ স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই,যে ক্ষেত্রে মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে স্ত্রীলোকটির সম্মতি আদায় করা হলে।
চতুর্থঃ স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই যে ক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে স্ত্রীলোকটির স্বামী নয় এবং পুরুষটি এও জানে যে স্ত্রীলোকটি তাকে এমন একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সাথে সে আইনগত ভাবে বিবাহিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করে।
পঞ্চমতঃ স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমে বা সম্মতি ছাড়া,যদি স্ত্রীলোকটির বয়স ১৪ বছরের কম হয়।
ব্যাখ্যাঃ ধর্ষনের অপরাধের ক্ষেত্রে অতি অল্প অনুপ্রবেশ করা হলেও যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে।
ব্যতিক্রমঃ কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীর সাথে যৌনসংগম ধর্ষন বলে গণ্য হবেনা, যদি স্ত্রী ১৩ বছরের কম বয়স্ক না হয়।
নারী ধর্ষন বলতে নারীর বিনা অনুমতিতে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনসংগম করাকে বুজায়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলতে প্রত্যক্ষ আগ্রহের অভাব বুজায়। নিদ্রিত অবস্থায় বা নেশা গ্রস্থ করে বা জড়বুদ্দি সম্পন্ন কোন নারীর সাথে যৌন মিলিত হলে এটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলন বুজাবে। সম্মতি ছাড়া বলতে স্বাধীন ভাবে অনুমতি না দেওয়া বুজায়। একজন পতিতা বা বেশ্যা নারী ও ধর্ষিত হতে পারে। তবে তা জোরাল সাক্ষী দ্বারা প্রমানিত হতে হবে। তার একার সাক্ষী যথেষ্ট হবে না।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে সাজাসমুহঃ
৯(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষন করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।