বাংলাদেশের মানুষের (বিশেষত পুরুষ) মাঝে একটা বাতিক দেখা যায় আর তা হলো ধূমপান। শুধু বদভ্যাস বা আসক্তি নয়, এটাকে বাতিকই বলা যায় কারন জিনিসটা ক্ষতিকর জেনেও অনেকে এর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। অনেকের মনে আবার এই ধারনাটাও আছে যে ধূমপান করার ফলে তাদেরকে “স্মার্ট” দেখায়। আচ্ছা, ধূমপান করে শরীরের বারোটা বাজানোর মাধ্যমে যদি স্মার্ট হতে হয় তবে সেই স্মার্টনেসের কোনও মূল্য আছে? আমরা সবাই ব্যাপারটা জানি, কিন্তু তারপরেও ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমতে তো দেখা যাচ্ছে না! ধূমপান ছেড়ে দিলে যে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে সেটা তো আমরা জানি।আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ধূমপায়ীদের চাইতে অধূমপায়ীরা গড়ে ১৪ বছর বেশি বাঁচেন। কিন্তু ঠিক কি প্রক্রিয়ায় এই উপকারটা হয়? আসুন দেখে নেই ধূমপান না করে থাকলে কি উপকার হতে পারে। কে জানে, এই উপকারের তালিকা দেখলে হয়ত আপনি এখনই ধূমপান ছেড়ে দেবেন!
২০ মিনিট পর
হ্যাঁ, একটা সিগারেট খাবার পর বিশ মিনিট পার হলেই আপনার শরীরের অবস্থা ভালো হতে থাকে। হৃদয়ের ওপর ধূমপানের প্রভাব ভয়ঙ্কর। সিগারেট খাবার বিশ মিনিট পরে হৃদস্পন্দন স্থিতিশীল হতে শুরু করে।
ধূমপান না করে ২ ঘণ্টা
ধূমপান না করে ২ ঘণ্টা পার করলে হৃদস্পন্দনের গতি এবং রক্তের চাপ উভয়েই স্বাভাবিক হয়ে আসে। শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হতে শুরু করে। ফলে আপনার হাত-পায়ের আঙ্গুলের ডগা রক্ত চলাচলের ফলে উষ্ণ হয়ে ওঠে।
ধূমপান ছেড়ে দেবার ১২ ঘণ্টা পরে
ধূমপানের ফলে শরীরে খুব ক্ষতিকর একটা গ্যাস জমে যায়, আর তা হল কার্বন মনোক্সাইড। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এই গ্যাস। ধূমপান ছাড়া ১২ ঘণ্টা থাকতে পারলে শরীরে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কমে আসতে থাকে এবং রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
ধূমপান ছাড়া ২৪ ঘণ্টা (পুরো একদিন)
অন্যদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হার্ট আট্যাকের ঝুঁকি থাকে ৭০ শতাংশ বেশি। কিন্তু জানেন কি, মাত্র এক দিন ধূমপান ছাড়া কাটালেই আপনার হার্ট আট্যাকের ঝুকির মাত্রা কমে আসতে শুরু করবে?
ধূমপান ছাড়া ২ দিন
ধূমপানের আরও একটা লুকানো অপকারিতা আছে যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। সেটা হলো, স্বাদ এবং গন্ধ বুঝতে পারার ক্ষমতা কমে যাওয়া। খাবারের স্বাদ, ফুলের গন্ধ নেবার ক্ষমতা তাদের ভোঁতা হয়ে যায়। ধূমপান ছাড়া দুই দিন অতিবাহিত করার ফলে স্নায়ুর কার্যকারিতার পুনরায় আগের মতো ভালো হতে শুরু করে, ফলে এসব ইন্দ্রিয় আবারো সক্রিয় হতে শুরু করে। ধূমপায়ীরা আবারো খাবারের ভালো স্বাদ এবং সুগন্ধ পেতে শুরু করেন।
ধূমপান ছাড়া ৩ দিন
এই কয়েকদিন আপনার শরীরের অবস্থার উন্নতিই হয়েছে, এবার খারাপ লাগতে পারে। কারন ধূমপানের ফলে শরীর নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। ৩ দিনের মাথায় শরীরে থাকা নিকোটিন দূর হয়ে যায় ফলে এর অভাবে শরীরে দেখা যায় উইথড্রয়াল সিনড্রোম। মাথাব্যাথা, বমি ভাব, পেশীতে টান লাগা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ধূমপান ছেড়ে দেবার তিন সপ্তাহ পরে
ধূমপানের ফলে যে ক্ষতি হয়েছিল আপনার শরীরে তা থেকে কোষগুলো ধীরে ধীরে সেরে উঠতে শুরু করে। ব্যায়াম করার সময় আগের মতো ক্লান্ত লাগবে না আপনার। রক্ত চলাচল এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। আর এ সময়ে উইথড্রয়াল সিনড্রোমগুলোও চলে যায়।
ধূমপান ছেড়ে দেবার ১-৯ মাস
ধূমপানের ফলে আপনার বেচারা ফুসফুস যে ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করবে। ধূমপায়ীদের বেশিরভাগ সময়ে কাশি এবং কফ হবার যে সমস্যা তা কমে যাবে।
ধূমপান থেকে দূরে এক বছর
শরীরের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবার সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে ৫০ শতাংশ।
ধূমপান ছাড়া পাঁচ বছর
যে মানুষটি কখনোই ধূমপান করেনি, তার মতই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন আপনি। এ সময়ে স্ট্রোকের আশঙ্কাও কমে যায়।
ধূমপান ছাড়ার ১০ বছর পর
এ পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কমে যাবে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া মুখ, গলা, ইসোফ্যাগাস, মুত্রথলি, কিডনি এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও কমে যায়।
১৫ বছর পর
ধূমপানের ফলে হৃদপিণ্ডের যে সব রোগ বা জটিলতার সৃষ্টি হয় সেসবের ঝুঁকি থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকবেন আপনি।