নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়ি সম্পর্কে জানতে চাই।

ঢাকায় বেড়ানোর জায়গার ইদানিং বেশ ঘাটতি পড়েছে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন জায়গাগুলোও যেন যাওয়ার অনুপযুক্ত হয়েছে। তবে ঢাকার পাশেই নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়ির বেশ নাম শুনেছি। এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি সম্পর্কে কিছু জানাবেন কী? অথবা জায়গাটিতে কীভাবে যেতে হয়?
Supporter Asked on May 21, 2015 in ভ্রমণ.
Add Comment
1 Answer(s)

    ঢাকার কাছেই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ একটি জায়গা নবাবগঞ্জ । যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ জায়গাটিতে খুব অল্প সময়েই পৌছানো যায় ঢাকা থেকে । নবাবগঞ্জের মূল আকর্ষণ হলো এ এলাকার প্রাচীন কিছু জমিদার বাড়ি ।

    ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শহরের মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কলাকোপায় অবস্থিত । নবাবগঞ্জ যেতে হয় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ দিয়ে কেরানীগঞ্জ হয়ে । চারপাশে চিরায়ত সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে চলে যাওয়া যাবে ২০০ বছরের ইতিহাস সংবলিত নবাবগঞ্জে জমিদার ব্রজেন সাহার জমিদার বাড়িতে । যা এখন জজ বাড়ি নামে খ্যাত । জজবাড়ির সামনে রয়েছে খানিকটা বাগান, বিভিন্ন ফল ও ফুল গাছে পরিপূর্ণ ।

    কলাকোপার মূল আকর্ষণে এই জজবাড়ি যা আগে জমিদার ব্রজেন সাহার সময়ে ব্রজ নিকেতন হিসেবে পরিচিত ছিল । পরে আশির দশকে এক বিচারক পরিবার এখানে বসবাস শুরু করলে এটি জজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায় । জজ বাড়ি এখন কলাকোপার প্রাণ । বাড়িটির চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে যে কোন পথিকের পা থমকে যাবে । কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় বাড়িটিকে । প্রচুর গাছ গাছালির সমারোহ, পাখির কিচির মিচির শব্দ আর চিত্রা হরিণের পাল দেখতে দেখতে কখন যে আনেকটা সময় পার হয়ে যাবে টেরও পাওয়া যাবে না ।

    কলাকোপায় রয়েছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান গান্ধী মাঠ । সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজি ১৯৪০ সালে এই মাঠে এসেছিলেন । সেই থেকে এই মাঠের নাম গান্ধী মাঠ । এখান থেকে কিছুদূর এগোলেই আরেকটি প্রাচীন বাড়ি আরএন হাউস । বাড়িটির অন্যতম মালিক রাধানাথ সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে প্রায় আড়াইশ বছর আগে এ বাড়ি তৈরি করেছিলেন । চরিদিকে কক্ষ ঘেরা এ বাড়ির সামনের অংশে ছিল অতিথিশালা, পেছনে অন্দরমহল এবং পাশেই মন্দির । বাড়িটির বয়স প্রায় ২০০ বছর ।

    রাধানাথ সাহার বাড়ি ফেলে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে খেলারামের বিখ্যাত বিগ্রহ মন্দিরটি । জনশ্রুতি রয়েছে খেলারাম দাতা বজরাম ধনীদের ধনদৌলত ডাকাতি করে গরিবদের মাঝে দান করতেন । আরও শোনা যায় একরাতে এই তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল মন্দিরটি মাটি থেকে উপরে উঠে এসেছে । কয়েকটি গম্বুজ বিশিষ্ট কয়েকশ বছরের কুঠিরের ভিতরের পরিবেশ অন্ধকার । এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতির পাড়ে । নদীপথে ধন সম্পদ এসে এ সুড়ঙ্গ পথেই বাড়িতে নিয়ে আসত খেলারাম দাতা । বাড়ির পাশেই বিশাল পুকুর। প্রচলিত আছে যে, মাকে বাঁচাতে খেলারাম দাতা এই পুকুরে নেমেছিলেন । আর উঠে আসেননি ।

    বান্দুরার একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো জমপালা রানীর গির্জা । খ্রিস্টানদের এ উপাসনালয়টি সর্বপ্রথম নির্মিত হয় ১৭৭৭ সালে । পরে ১৮৮৮ ও ২০০২ সালে এর সংস্কার করা হয় । গির্জার পরিবেশ ও নির্মাণশৈলী নজর কাড়ার মতো । পুরো গির্জাটি হলুদ বর্ণের সুন্দর কারুকাজে ভরা । গির্জার সামনেই জমপাল দেবীর নামাঙ্কিত ফলক তার স্মৃতি ধরে রেখেছে । বর্তমানে একজন ফাদার ও একজন ডিকন দ্বারা পরিচালিত হয় এ গির্জার কার্যক্রম । বড়দিন স্টার সানডেতে এখানে বড় উৎসবের আয়োজন থাকে ।

    উল্লিখিত স্থানসহ এখানে দেখার আছে আরও অনেক কিছু । পোদ্দার বাড়ি, কালীবাড়ি, কলাকোপার কাছে সামসাবাদ তাঁতপল্লী, আলানপুর তাঁতপল্লী, জমিদার বাড়ি, জগবন্ধু সাহা হাউস প্রভৃতি । ভগ্ন বিলুপ্তির পথে এসব দালান কোঠা এখনই দেখতে যেতে পারেন । সংরক্ষণের অভাবে কালের আবর্তনে ইতিহাসের মতোই হারিয়ে যাবে এসব কালের সাক্ষী ।

    যাতায়াত : কলাকোপা বান্দুরায় দিনে এসে দিনেই ফেরা যায় । ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার পথ । নিজস্ব পরিবহন থাকলে জায়গাগুলো বেড়ানো সহজ হবে । মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌছে যেতে পারেন । অথবা বাসে করে ঢাকার গুলিস্তান, বাবু মাজার কেরানীগঞ্জ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে । বাংলালিংক, মল্লিক, যমুনা ইত্যাদি পরিবহনে ভাড়া পড়বে মাত্র ৫০ টাকা ।

    Professor Answered on May 21, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.