নিজেকে কিভাবে জানতে পারি?
আমি একদিন মায়াপুরে, ইসকন মন্দিরে আমার বন্ধু আলোকের সাথে গিয়েছিলাম।
মন্দিরের পবিত্র পরিবেশ এবং ভক্তির সুরভিত বাতাসে মুগ্ধ হয়ে, আমি অনুভব করলাম একটি নতুন অভিজ্ঞতা আসন্ন। আলোক আমাকে মন্দিরের বিভিন্ন দিক পরিচিত করিয়ে দিচ্ছিল, হঠাৎ আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো গেরুয়া বেশধারী, মাথায় চন্দনের তিলক দেওয়া একজন ভদ্রলোক। আলোক আমাকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, “পুলক, এই হলেন ইমতিয়াজ চৌধুরী, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।”
ইমতিয়াজ চৌধুরী শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। গেরুয়া বেশধারী একজন মুসলিম ব্যক্তি!
আমি আলোকের দিকে তাকালাম, আর আলোক হাসিমুখে বললো, “হ্যাঁ, ইমতিয়াজ মুসলিম হলেও সে সনাতন ধর্মের অধ্যয়ন ও অনুশীলনে গভীর আগ্রহী।”
ইমতিয়াজ হাসিমুখে বললো, “ধর্মের মূল বক্তব্য হল আত্মাকে জানার চেষ্টা। সেটি যে ধর্মের মাধ্যমেই হোক না কেন।”
আমি ইমতিয়াজের কথা শুনে তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হলাম।
আমরা তিনজন একটি শান্ত কোণায় বসলাম এবং আলোক আমাকে বললো, “ইমতিয়াজ তোমাকে সনাতন ধর্মীয় পদ্ধতিতে আত্ম-জ্ঞান লাভের উপায়গুলি বলবে।”
ইমতিয়াজ শুরু করলো, “জানোতো পুলক, সনাতন ধর্মে নিজেকে জানার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। প্রথমে আসে ধ্যান, যা মানসিক প্রশান্তি ও আত্ম-জ্ঞান লাভের জন্য অপরিহার্য। ধ্যানের মাধ্যমে আমরা মনকে শান্ত করতে এবং আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারি।”
আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। ইমতিয়াজ বললো, “তারপর আছে যোগ। শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য যোগের কোনো বিকল্প নেই। যোগের মাধ্যমে শরীর ও মনের সমন্বয় সাধন করে আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়।”
ইমতিয়াজ আরও বললো, “তুমি জানো, জ্ঞান যোগের মাধ্যমেও আত্ম-জ্ঞান লাভ করা যায়। এটি প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে আত্মার প্রকৃতি এবং বিশ্বের সত্যকে জানার চেষ্টা করে। আর ভক্তি যোগ হল প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে আত্ম-জ্ঞান অর্জনের পথ। ভগবানের প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধা দ্বারা আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়।”
আমি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম, “আর কী কী পদ্ধতি আছে?”
ইমতিয়াজ বললো, “কর্ম যোগ আছে, যা নিঃস্বার্থ কর্মের মাধ্যমে আত্ম-জ্ঞানের চেষ্টা করে। নিজের কর্তব্য পালন এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করা এর মূলমন্ত্র। এছাড়া গ্রন্থ পাঠ ও শ্রবণও গুরুত্বপূর্ণ। সনাতন ধর্মীয় গ্রন্থগুলি পাঠ ও শ্রবণ করে এবং গুরুদের উপদেশ শুনে আত্ম-জ্ঞান লাভ করা যায়।”
আমি অনুভব করলাম আমার সামনে একটি নতুন জগত খুলে গেছে। ইমতিয়াজের কথা শুনে আমার মন আরও শান্ত ও প্রশান্ত হল। আমি আলোকের দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ জানালাম এই অনন্য অভিজ্ঞতার জন্য।
সেদিন মন্দির থেকে ফেরার পথে আমার মনে নতুন আলোতে ভরে উঠলো। আমি ভাবলাম, “আত্ম-জ্ঞান লাভের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের প্রয়োজন নেই। প্রকৃত জ্ঞান সব ধর্মের উর্ধ্বে।”
এইভাবে, আমি আমার জীবনে নতুন এক পথের সন্ধান পেলাম, যেখানে ধর্মীয় বিভাজন ছাড়াই মানুষে মানুষে একতা এবং আত্মার প্রকৃতির সন্ধান করা যায়।