নেত্রকোণা বিরিশিরি যেতে চাই, কীভাবে যাব?

    নেত্রকোণা বিরিশিরি সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। খুব সুন্দর একটি ঘোরার জায়গা নাকি। কিন্তু জায়গাটিতে আসলে কি কি আছে? আর যাবই বা কীভাবে?

    Doctor Asked on February 27, 2015 in ভ্রমণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      চলো না ঘুরে আসি অজানাতে… মানুষের এই আহ্বান চিরন্তন। প্রতিনিয়ত এই কৃত্রিমতার ভুবনে থাকতে থাকতে একধরনের একঘেয়েমি চলে আসে। এই একঘেয়েমি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের চেষ্টা সবসময় চলতেই থাকে। একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা বড় উপায় হচ্ছে ভ্রমন। ঘুরে বেড়ানোর মত মজার কাজ হয়তো পৃথিবীতে আর নেই। খোলামেলা যে কোন জায়গা মানুষের মনকে অনেকটা প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

      কর্মজীবনের সকল ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সূর্যস্নানে বের হতে পারেন আপনিও। অনেক স্কুল বা কলেজে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বা কয়েকদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে আপনার আদরের সোনাওনণির স্কুলেও। গ্রীষ্মের এই ছুটিতে কি মেয়েকে নাচের স্কুলে বা আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিবেন নাকি তাদের নিয়ে ঘুরতে যাবেন নিজ দেশের একটি অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভুমিতে।

      হ্যাঁ,আপনিও সপরিবারের বা বন্ধুদের সাথে যেতে পারেন বিরিশিরি’র সৌন্দর্য দেখতে। বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি গ্রাম। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এছাড়াও দেখার মত জায়গা রয়েছে রানীখং গির্জা, কমলা রানী দীঘি,এবং সোমেশ্বরী নদী। সেন্টমার্টিন্স এর গভীর নীল পানি, কিংবা জাফলং এর স্বচ্ছ পানির গল্প তো অনেকই শুনেছেন বা দেখেছেন। কিন্তু সবুজ নীলের মিশেলে অদ্ভুত-রঙা হ্রদটার গল্প কি শুনেছেন? বা কখনো দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেন তবে তৈরি হয়ে যান এই গ্রীষ্মে।

      বিরিশিরির পরিবেশ আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা। আগেই বলেছি বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে চীনামাটির পাহাড়, যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদা মাটি পানির রঙটাকে যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন; সেটা কিন্তু না। আপনাকে যেতে হবে আরেকটু দূর বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়ে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে রিক্সা আর ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল।

      বিচিত্র সাংস্কৃতিক আবহাওয়া, কংশ-টেপা-সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গম্ভীর গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় আরো কয়েক গুণ।
      দূরের পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ধরূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য। বিরিশিরিতে আছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমী। আধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।

      তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর আছে এখানে। অপেক্ষাকৃত কোলাহলমুক্ত ছোট্ট একটি বাজার। বিরিশিরিতে পা রাখতেই অন্য রকম এক অনুভূতির পরশ বুলিয়ে যায় সারা গায়। এখনে আছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমি। শান্ত-স্নিগ্ধ, সবুজে ঢাকা ছিমছাম পরিবেশ। পর্যটকদের চাপ বেশী থাকেনা। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই পাহাড়ী-গারো, হাজং। এখানকার পাহাড়ী বা পাহাড়ীদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল এই কালচারাল একাডেমী। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এটি পরিচালিত হয়। খ্যাতিমান কবি, লেখক রফিক আজাদ দীর্ঘদিন এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাহাড়ীদের সাংস্কৃতিক পরিচয় পাওয়া যাবে একাডেমীর জাদুঘরে। দুটি লাইব্রেরী আছে বেশ সমৃদ্ধ। পাহাড়ীদের ওপর লেখা সব বইপত্র, জার্নাল এখানে রক্ষিত। এখান থেকেও একটি সাময়িকী নিয়মিত বের হয়।

      যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর।

      এরপর এসে পৌছাবেন বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমি সহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড় জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি।কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটি ও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাব নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল জল যেন আপনার সমস্ত অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এসব হ্রদের পানিতে চোখ পড়তেই দেখবেন আসার সব কষ্টগুলো নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরুপ নীলের উৎস সমেশ্বরী নদী। যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কথায় অসাধারণ!

      এছাড়াও দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চুড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।

      বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানী দীঘি। এই কমলা রারী দীঘি সাগর দীঘি নামেও পরিচিত। দীঘিটি পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

      নিরিবিলি কোলাহলবিহীন ছিমছাম শান্ত পরিবেশ মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না। এছাড়া দু’চোখ যেদিকে যাবে দেখবেন শুধুই পাহাড়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই ভারতে।

      কীভাবে যাবেন- 
      ঢাকা থেকে যেতে চাইলে আপনাকে মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে বিরিশিরি কিংবা দুর্গাপুরের বাসে উঠতে হবে।বিরিশিরি বাসস্ট্যান্ডই বাসের শেষ গন্তব্য। ঢাকা থেকে সময় প্রায় চার ঘন্টা লাগে।

      কোথায় থাকবেন-
      বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির নিজস্ব রেস্ট হাউস ও জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, ওয়াইএমসিএ নামক প্রতিষ্ঠানের গেস্ট হাউস আছে। এছাড়া উপজেলা সদরে বিভিন্ন হোটেল রয়েছে।

      এছাড়া দেখুন :

      পরিব্রাজকের চোখে: নীল জল আর সাদা মাটির দেশ সুসং দুর্গাপুর : ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ডে যখন পৌঁছলাম তখন শেষ বিকেলের আলোটুকু প্রায় নিভে এসেছে। আকাশ ভরে আছে কালো মেঘে, মনে হচ্ছে আবারো ঝুম বৃষ্টি নামবে। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা সমানে হেঁকে চলেছে- ‘শম্ভুগঞ্জ’, ‘শম্ভুগঞ্জ’। সামনেই শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। নিচে ব্রহ্মপুত্র নদ।

      শম্ভুগঞ্জ!
      -নাম টা বুলেটের মতো কানে গেঁথে গেছে। খুব পরিচিত, খুব কাছের মনে হচ্ছে। কোথায় শুনেছি আগে? স্মৃতি রিওয়াইন্ড করলাম। হ্যাঁ, বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে এই নামটি বহুভাবে এসেছে। হুমায়ুন আহমেদ আর তসলিমা নাসরিনের লেখায় বারংবার উঠে এসেছে ‘শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ’ এর কথা- ব্রীজের নিচের ব্রহ্মপুত্র নদের কথা। এই ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এঁকেছেন বহু বিখ্যাত ছবি। ময়মনসিংহ শহরেই আছে শিল্পাচার্যের একটি সংগ্রহশালা- সেই সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে ১৯৩৩ সালে আঁকা তাঁর বিখ্যাত দুটি চিত্রকর্ম- ‘শম্ভুগঞ্জ ঘাট’ এবং ‘ শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ’।

      Professor Answered on February 27, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.