নৈতিক প্রকৃতিবাদ কি?
নৈতিক প্রকৃতিবাদের কথা বলার আগে নৈতিক বাস্তববাদ (Moral Realism) নিয়ে দুটো কথা সেরে নেওয়া প্রয়োজন । নৈতিক বাস্তববাদের বক্তব্য অনুযায়ী যা “ভাল” কিংবা “মন্দ” তা চেতনার উপর নির্ভর করে না । অর্থাৎ “ভাল” ও “মন্দ” নৈর্ব্যক্তিক ধারণা, মানুষের উপর নির্ভরশীল নয় । এর পরিণাম হিসেবে বলা যায় যে “চুরি করা মন্দ কাজ” এই বক্তব্যটি “ঘাসের রঙ সবুজ” এর মতই একটি নিরপেক্ষ সত্য, কারণ সবুজ রঙ যে অর্থে ঘাসের ধর্ম, ঠিক সেই অর্থেই “মন্দত্ব” চুরির ধর্ম ।
এবারে প্রশ্ন ওঠে— এই “ভাল” বা “মন্দ” ঠিক কীরকম ধর্ম? অর্থাৎ এদের প্রকৃতি কী?
এই প্রশ্নেরই একটা উত্তর হল নৈতিক প্রকৃতিবাদ (Ethical naturalism), যার বক্তব্য হল “ভাল” এবং “মন্দ” প্রাকৃতিক ধর্ম (natural properties) । আর যেহেতু এরা চেতনা-নিরপেক্ষ, সেহেতু ভাল-মন্দের নৈতিক বিচারের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা “সঠিক” অথবা “ভুল” হওয়া সম্ভব । দার্শনিক পরিভাষায় বললে নৈতিক বিচারসমূহ হল জ্ঞানমূলক বিশ্বাস (কেবলমাত্র আবেগিক প্রতিক্রিয়া নয় ) ।
বেশ, সে নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু ঠিক কোন প্রাকৃতিক ধর্মকে আমরা “ভাল” বা “মন্দ” বলে চিহ্নিত করব? এর একটা উত্তর পাওয়া যায় সুখবাদের (Hedonism) বক্তব্য থেকে; সুখবাদ বলে মানুষ যা কিছুতে সুখ পায় তাই কামনা করে, আর যা কিছুতে কষ্ট পায় তাই থেকে দূরে থাকতে চায় । আর যেহেতু সুখ সবার কাম্য আর কষ্ট কাম্য নয়, অতএব যা কিছুতে সুখ তাই-ই নিশ্চই আমাদের জন্য “ভাল” আর যা কিছুতে কষ্ট তাই-ই “খারাপ” । অর্থাৎ কিনা সুখ = ভাল আর কষ্ট = মন্দ । যেহেতু সুখ আর কষ্ট আমাদের মনের অবস্থাকে নির্দেশ করে, তারা প্রাকৃতিক ধর্ম । সুতরাং ভাল ও মন্দও প্রাকৃতিক ধর্ম ।
একইভাবে সুখবাদী কোনো নৈতিক মতবাদের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় । এমন একটি মতবাদ হল উপযোগবাদ (Utilitarianism), যেখানে ব্যক্তিগত সুখের পরিবর্তে গোষ্ঠীগত সুখকে “ভাল” বলে মনে করা হয় । অর্থাৎ কিনা যে কাজে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের সুখসাধন হবে তাই-ই “ভাল” কাজ ।