পরিচ্ছন্ন ঘর দিতে পারে মানসিক স্বস্তি

    পরিচ্ছন্ন ঘর দিতে পারে মানসিক স্বস্তি

    Doctor Asked on January 29, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      অলসতা, শখের কাজগুলোতে অনিহা, নিরাশা, মনকষ্ট ইত্যাদিকে হতাশাগ্রস্ততার উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ।

      তবে রান্নাঘরের ‘সিংক’য়ে ময়লা বাসন ফেলে রাখা, ধোয়া কিংবা আধোয়া পোশাক এলোমেলো ছড়িয়ে রাখা, প্রয়োজন নেই তারপরও বাক্স, মোড়ক, ব্যাগ ইত্যাদি ঘরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা শুধুই অগোছালো স্বভাব নয়, হতাশারও পরিচয় বহন করে।

      এর সঙ্গে যখন প্রচণ্ড মানসিক চাপ, অস্বস্তি, অবসাদ চোখে পড়ে, তখন আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

      যুক্তরাষ্ট্রের মনরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি বই ব্যবহার করেন যার নাম ‘ডিএসএম-ফাইভ’।

      ‘আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন’ প্রকাশিত এই বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, যে কোনো কাজের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া হতাশাগ্রস্ততার ইঙ্গিত। ঘরের খুটিনাটি কাজ, ব্যায়াম, জীবিকা নির্বাহর কাজ, সামাজিকতা রক্ষা ইত্যাদি সবই এর অন্তর্ভুক্ত।”

      ‘ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকো’র ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় মানসিক হতাশা ও অগোছালো ঘরের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান গবেষকরা।

      হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের ‘ক্লিনিকাল হেল্থ সাইকোলজিস্ট’ ও ‘সায়কায়াট্রি’র প্রশিক্ষক ড. নাটালিয়া ক্রিস্টিন ডাটিলো বলেন, “অগোছালো ঘরের পেছনে দায়ী ‘কর্টিসল’ হরমোন যা মানসিক চাপ বাড়ায়। তবে এখানে ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’ এমন একটা ব্যাপার আছে। এক হতে পারে মানুষ যখন মানসিক চাপে থাকেন তখন তাদের ঘর গুছিয়ে রাখার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। আবার এমনও হতে পারে যে ঘর অগোছালো দেখেই মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। ঠিক কোনটা ঘটে সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।”

      সামান্য অনুসঙ্গ দিয়েই জীবনকে গুছিয়ে নেওয়া পরামর্শ দিয়ে বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিরা গিল, বইটির নাম ‘মিনিমালিস্টা’।

      অগোছালো ঘর নিয়ে শিরা গিল বলেন, “শুধু মন মানসিকতা নয়, দৈনন্দিন জীবনের উপরেও সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে অগোছালো ঘর। সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। অগোছালো ঘরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে ফেলে আর্থিক দিক থেকেও বিপদে পড়তে পারেন। আবার একই কাজের জন্য একাধিক অনুসঙ্গ কিনে পয়সা নষ্ট হওয়াও সাধারণ ঘটনা। বিশৃঙ্খল ঘর জীবনে কোনটা বেশি প্রয়োজন সেটা চিহ্নিত করতেও বিশৃঙ্খলা বাঁধাতে পারে।”

      পরিচ্ছন্ন ও গোছানো ঘরের উপকারিতা

      গিল বলেন, “ঘর গোছানো হলে মনটা ফুরফুরে অনুভব করবেন। জীবনের লাগাম নিজের হাতে আছে সেই সন্তুষ্টি পাবেন। ফলে জীবনযাত্রার মান ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তবে ঘর গোছানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো শারীরিকভাবে খুব বেশি পরিশ্রমের না হলে তাতে আগ্রহ সৃষ্টি করা বেশ কঠিন। পৃথিবীর সকল আলসেমি যেন এখানেই।”

      “ঘুম থেকে উঠে পরিপাটি করে বিছানা গোছানোকে অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ মনে হয়। গোসল করবেন, না-কি নাস্তা বানানো জন্য চুলা জ্বালাবেন সেটাও যেন বিশাল এক সিদ্ধান্ত। তবে শেষ পর্যন্ত যে কাজটাই করুন না কেনো, তার মানসিক তৃপ্তিটাও দারুণ।”

      ড. ডাটিলো বলেন, “ঘর গোছানো সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কাজের গুরুত্ব বন্টন করতে হয়, প্রয়োজন হয় ধৈর্য্য। কোন কাজটা কীভাবে করছেন তা থেকে নিজের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানতে পারবেন। আর ঘর পরিচ্ছন্ন রাখার পেছনে যতটুকু খাটনি হল, পুরোটাই দিন শেষ নিজেকেই মূল্যায়ন করার সমতুল্য। পরিচ্ছন্ন ঘরটা দেখে মানসিক স্বস্তি ও আত্মতৃপ্তি অনুভব করবেন।”

      শুরু করাটাই জটিল

      মানসিক চাপে থাকুন আর না থাকুন, গোছানোর কথা চিন্তা করলে কোনটা দিয়ে শুরু করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েই মানসিক চাপে পড়ে যেতে পারেন।

      ড. ডাটিলো বলেন, “খুব সামান্য কিছু দিয়ে শুরু করা উচিত। সেটা হতে পারে আলমারির একটা তাক গোছানো, ওয়ারড্রবের একটা ড্রয়ার গোছানো। কয়েক দিন সময় নিয়ে আলমারি কিংবা ওয়ারড্রবটাই গোছান। এখানে সময়সীমা বেঁধে নিতে পারেন। ১৫ মিনিটে একটা ড্রয়ার গোছাবেন আজকে। ব্যস আজকের জন্য শেষ। এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারলেও মানসিক শান্তি অনুভব করতে পারবেন। ক্রমেই দেখবেন আপনার গতি বাড়ছে, আগ্রহ বাড়ছে।”

      তৈরি করুন সাধারণ নিয়ম

      গোছানো মানে হল, যে জিনিসটা যেখানে থাকা উচিত সেখানেই রাখা। এখন ঘরের চাবিটা আজ টেবিলের ওপর তো কাল ওয়ারড্রবের ওপর, পরশু ব্যাগের মধ্যে- এভাবে রাখলে তা গোছানো হল না। ফলে বাইরে যাওয়া সময় চাবি খুঁজে না পাওয়া কিংবা তা না নিয়ে ঘরের তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

      গিল বলছেন, “প্রায়ই যে জিনিসগুলো হারিয়ে ফেলেন সেগুলোর তালিকা সাজান মনের মধ্যে। চাবি, চশমা, মানিব্যাগ, চার্জার ইত্যাদি এমন কয়েকটি জিনিস। এবার প্রতিটির জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করুন এবং প্রতিদিন সেখানেই রাখুন।”

      আত্মতৃপ্তির চাষ

      “প্রতিদিনের কাজে আনন্দ থাকাটা জরুরি”, বলছেন ড. ডাটিলো।

      “যখন যে কাজটা করবেন, তখন সেই কাজেই পরিপূর্ণ মনযোগ দিতে হবে। বাসন ধোয়ার মতো প্রাত্যহিক আর বিরক্তিকর কাজের মাঝেও আনন্দ খুঁজে নিতে হবে। তা যদি করতে পারেন তবেই অভ্যাসটা রপ্ত করা সহজ হবে। কারণ কাজটায় আনন্দ পেলেই তা আবার করার সম্ভাবনা বাড়বে।”

      নিজেকেই প্রশ্ন করুন

      ঘরে কী থাকবে আর কী ফেলে দেবেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। ‘থাক না, যদি কাজে লাগে’ এমনটা ভেবেই অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ঘর ভরে যায়।

      এক্ষেত্রে ড. ডাটিলো’র পরামর্শ, “কোনো জিনিস ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, এই জিনিসটা কি আমার বর্তমান জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই? যে পরিবেশে আমি থাকতে চাই, সেই পরিবেশে কি সেটা উপযোগী? কারও জন্য কি জিনিসটা উপকারী হতে পারে? এটা ঘরে না থাকলে কি আমি আরেকটা কিনতাম? এটা না থাকলে কি কোনো সমস্যা হবে? এই প্রশ্নগুলো উত্তরই আপনাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেবে। তারপর আপনার কাজ হবে শুধু মায়া ত্যাগ করা।”

      নিজের পিঠ চাপড়ান

      একটি কাজ শত বাধার পরও শেষ করার আনন্দে পুলকিত হতে দ্বিধা করবেন না। গোছানো পর ঘরটা ঘুরে দেখুন। আলমারি, ওয়ারড্রব, আলনা ইত্যাদিতে চোখ বুলিয়ে দেখুন, পরিপাটি করে ভাজ করা কাপড়গুলো আপনাকে বিজয়ের উচ্ছাস যোগাবেই।

      Professor Answered on January 29, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.