পৃথিবীর বিখ্যাত প্রেম কোনগুলি?
পৃথিবীর বিখ্যাত প্রেম কোনগুলি?
প্রেম- ভালোবাসা হচ্ছে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। এটি এমন এক শক্তি যা পৃথিবীর সব বাধা বিপত্তিকে জয় করতে পারে। বিশ্বাস, অনুভূতি আর একে অপরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার ফলশ্রুতিতে দু’টি মানুষ এক হয়ে ওঠে। সেই প্রেম-ভালোবাসার শতশত নিদর্শন দুনিয়া জুড়ে মানুষ রেখে গেছে। এমনি কয়েকটি অমর প্রেম কাহিনী হলো:
_লাইলি ও মজনুর অমর প্রেম কাহিনী :
প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বাল্যকাল থেকেই লায়লা এবং কায়েস একে অপরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনু(পাগল) নামে। পরে বেদুঈনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লায়লাকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লায়লার গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লায়লার বাবা কায়েসের সঙ্গে লায়লার বিয়েতে সম্মতি দেন না। লায়লাকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া। স্বর্গে গিয়েও ভালবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি এই কাহিনীকে অমর করে রেখেছে।
_রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট:
নিঃসন্দেহে রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেম কাহিনী। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর কালজয়ী ট্রাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেম কাহিনী।
রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের শত বাঁধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে এবং ভুলবোঝা-বুঝি জনিত কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম! তরুণ এ যুগলের ভালবাসার জন্য মৃত্যুবরণ আজো পৃথিবীর মানুষকে একই আবেগে নাড়া দেয়।
_সেলিম ও আনারকলি:
মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়েন রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন সম্রাটপুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেন নি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। তখন সম্রাট সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেয়া হয়!!
_ শাহজাহান ও মমতাজ:
১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোঘল সম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সম্রাট শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপতের নির্মাণ কাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহ জাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সাম্রাজ্য হারিয়ে বন্ধী জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমহল”।