পৃথিবী যদি তার ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে?

পৃথিবী যদি তার ঘূর্ণন বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হবে?
Default Asked on May 18, 2015 in সাধারণ.
Add Comment
1 Answer(s)

    আমরা সবাই এই বিষয়ে জানি যে পৃথিবী প্রতিনিয়ত সূর্যকে প্রদক্ষিষ করে নিজ অক্ষে ঘুরছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়ে জানি না যে পৃথিবী যদি তার এই ঘূর্ণন হঠাৎ বন্ধ করে দেয় তাহলে কী হতে পারে? এক্ষেত্রে আমাদের ওজন বেড়ে যাবে। তবে এটি দুশ্চিন্তার বিষয় না, দুশ্চিন্তার বিষয় অন্য জায়গায়।

    পৃথিবী নিজেকে কেন্দ্র করে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৬৭৫ কিলোমিটার গতিতে পশ্চিম থেকে পুর্ব দিকে ঘুরছে। এই ঘুর্ণন গতিটা আসলে আমাদেরকে দিচ্ছে সময়। আর সেই সময় আমাদেরকে দিচ্ছে জীবনধারণের সকল কিছু। এটা খুবই জটিল বিষয়। এখন আপনি যদি একেবারে বিষুব রেখাতে থাকেন তবে এই ঘুর্ণনের সর্বোচ্চ গতিটা পাবেন যেটা আমরা বাংলাদেশিরা পাই কারণ আমরা বিষুব রেখাতে বাস করি। আবার যদি কোন একটা মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকেন সেটা কমে যেতে থাকবে।

    যা যা ঘটবে :

    ১) প্রথম মুহুর্তেই পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে থাকা সকল কিছু একই সাথে উড়তে শুরু করবে ঠিক পশ্চিম দিকে। সকল কিছু বলতে বিশাল সব বিল্ডিং, রাস্তা ঘাট, কল কারখানা এমনকি পাহাড় পর্বতগুলোও মাটি থেকে উপরে গিয়ে উড়তে শুরু করবে এবং সেই উড়ে যাওয়ার গতি হবে প্রায় ঘন্টায় ১০০০ কিলোমিটার এর মত। কোন কিছুই সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারবে না।

    ২) মানুষ এমনভাবে উড়বে যে গতিতে একটা পিস্তল থেকে বুলেট বের হয়। মানুষ একেবারে কিছুক্ষনের মধ্যে নিশ্চিন্হ হয়ে যাবে। কারণ হঠাৎ করে আপনি যদি ১২০০ ফিট প্রতি সেকেন্ডে ছিটকে গিয়ে উড়তে শুরু করেন তবে আপনার শরীরে প্রতিটি হাড় থেকে মাংস এবং শিরা উপশিরা আলাদা হয়ে যাবে এবং রক্তগুলো নিচে পড়ে না গিয়ে বাতাসে ভাসতে থাকবে। এর কারণ হচ্ছে বাতাসের সাথে আপনার শরীরের ঘর্ষণ।

    ৩) প্রথম কয়েক সেকেন্ডে দুই স্থানে থাকা মানুষ বেঁচে যাবে। প্রথমত বেঁচে যাবে আকাশে প্লেনে উড়তে থাকা এবং একেবারে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে থাকা লোকেরা। কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য্। কারণ পৃথিবীর থেমে যাওয়া কয়েক সেকেন্ড পরেই শুরু হবে ভয়ানক ধুলোর মেঘ জমা। যা শুরু করবে ঝড় এবং প্রচন্ড বজ্রপাতের এবং সেই বজ্রপাতের বিদ্যুতের শক্তি এতটাই বেশি হবে যে বিমানগুলো এক সেকেন্ডের মধ্যে ভস্ম হয়ে যাবে। বজৃপাতের ফলে মারাত্মক বিদ্যুতায়নের সৃষ্টি হবে।

    ৪) মেরু অঞ্চলে যারা থাকবে তারা প্রথমে হয়ত বেঁচে যাবে কিন্তু হঠাৎ করে থেমে যাওয়ার কারণে পৃথিবীতে প্রচন্ড একটা ধাক্কার মতন বাতাসের সৃস্টি হবে। একটা পারমানবিক বোমা বিষ্ফোড়িত হলে হঠাৎ করে যেমন প্রচন্ড শক ওয়েভের সৃস্টি হয় ঠিক তেমনি অসম্ভব ভয়ানক একটা শক ওয়েভের ধাক্কা গিয়ে মেরুগুলোতে দেবে। এতে সেখানে বসবাসকারিরা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। যেটা পারমানবিক বোমার শকওয়েভের ফলে হয়ে থাকে।

    ৫) একটি মহাকাশ যান বা রকেট যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়তে থাকে তখন তার বহিরাবরণে আস্তে আস্তে গরম হতে হতে প্রায় আগুন লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়। কারণ বাতাসে ঘর্ষণ । এ সময়ে বাতাস যদি ১৭০০ কিমি গতিতে প্রতি ঘন্টায় বইতে শুরু করে তবে পুরো পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ এবং সমুদ্রসহ সবকিছুতে আগুন লেগে যাবে। এত ভয়ানক আগুন লাগবে যে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাওয়া শুরু করবে। এই আগুনের জ্বালানি হচ্ছে অক্সিজেন।

    ৬) এই ভয়ানক আগুন সমৃদ্ধ বাতাস মোটামুটি পৃথিবীর ভুত্বকে থাকা বাকি সবকিছু যা উপরে যাওয়ার সময় গোরা হিসাবে রয়ে গিয়েছিল সবকিছুকে পুড়িয়ে নিশ্বেষ করে দেবে। এমনকি মাটির ভিতরে গেথে থাকা গাছের শিকড়গুলোও পুড়ে যাবে।

    ৭) সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে।

    ৮) সুর্য হঠাৎ করে থেমে যাবে। তার মানে পৃথিবীর একদিকে স্থায়ীভাবে দিন হওয়া শুরু করবে আর এক দিকে স্থায়ীভাবে অন্ধকার হবে। একই স্থানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীর কেন্দ্রে যে প্রচন্ড উত্তপ্ত ধাতব কোরটি আছে যা পুরো পৃথিবীকে একটা আস্ত ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে রেখেছে সেটিও থেমে যাবে। (এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডটি আমাদের ওজন স্তরকে ধরে রেখেছে যেই ওজন স্তর আমাদেরকে সুর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলো থেকে রক্ষা করে) ম্যাগনেটিক ফিল্ড ধংস হয়ে যাওয়ার ফলে ওজন স্তরও থাকবে না আর সূর্য পৃথিবী পৃষ্ঠকে এই সব তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা এতটাই গরম করে ফেলবে যে পৃথিবীর ওই অর্ধেক ভাগে কোন জীবিত মানুষকে সেখানে দাঁড়া করালে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের মাথা পুড়ে গিয়ে মস্তিস্ক গলে যেতে থাকবে।

    ৯) পৃথিবীর বাকি অর্ধেক যেটিতে স্থায়ীভাবে রাত হয়ে গিয়েছিল সেখানে টানা কয়েক মাস রাত চলার পরে পুরোপুরি বরফ হয়ে যাবে।

    Professor Answered on May 18, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.