বরফ পানিতে ভাসে কেন?
বরফ পানিতে ভাসে কেন?
বরফ পানিতে ভাসে এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু কেন ভাসে এটা জানি না। খেয়াল করে দেখবেন যত বড় বরফের চাকা হোক না কেন, পানিতে ডুবে যাবে না। বরফের পাহাড় পর্যন্ত পানিতে ভেসে থাকে। গ্রিক বৈজ্ঞানিক আর্কিমেডিস প্রথম জানতে পারেন পানিতে একটা বস্তু কি করে ভাসে। এর নিয়মটা হলো, একটা বস্তু পানিতে ফেললে তার ওপর দুটো পরস্পর বিরুদ্ধ শক্তি কাজ করে। একটি হলো বস্তুটির নিজের ওজন তাকে তলিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। অন্যদিকে পানি তাকে ধাক্কা দিয়ে উপরের দিকে ঠেলতে থাকে। এখন বস্তুটির ওজন যদি পানির চাপের সমান হয় বা হালকা হয়, তাহলে তা ভেসে থাকবে, ডুববে না। পানির চাপের সমান হওয়া মানে হলো, কত ওজনের পানি বস্তুটির পানিতে পড়ার পর সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দিচ্ছে। আর যদি বস্তুটির ওজন ওই স্থানচ্যুত পানির ওজনের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে সেটা টুপ করে ডুবে যাবে। তাহলে কথা হলো, একটি বস্তুর ওজনের পানি যদি সরে গিয়ে জায়গা করে দেয় তাহলে বস্তুটি ভেসে থাকবে। এক টুকরা কাঠ যে পানিতে ভেসে থাকে তার কারণ হলো তার নিজের ওজন যে পরিমাণ পানি সরে গেছে তার ওজনের চেয়ে কম। এক টুকরা কাঠের ওজন যে পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত হচ্ছে তার ওজনের ঠিক অর্ধেক। তাই তার অর্ধেক থাকে পানির তলায় আর বাকি অর্ধেক থাকে পানির উপরে। ঠিক একই নিয়মে এক টুকরা কর্কের ওজন স্থানচ্যুত পানির ওজনের মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ, তাই কর্কটির এক-পঞ্চমাংশ জলে ডুবে থাকে। এ নিয়মটি বুঝতে পারলেই বোঝা যাবে যে বরফ জলে ভাসে কেন। সাধারণ নিয়মে কোনো তরল বস্তুর শক্ত বা ঘন হয়ে ওঠার মানে হলো তার অণু-কণাদের খুব কাছাকাছি চলে আসা। এর ফলে বস্তুটির আয়তন যায় কমে, মানে ঘনত্ব বেড়ে যায়। সোজা কথায় একটি বস্তু জমে কঠিন হলে তার ওজন তরল অবস্থার চেয়ে বেশি হয়। তবে পানি হলো এমন এক মজার তরল পদার্থ যে, জমে বরফ হওয়ার পর আকারে ছোট না হয়ে বরং আরো ছড়িয়ে পড়ে। পানির তুলনায় বরফের আয়তন আকারে আরো বেড়ে ওজন দাঁড়ায় পানির ওজনের ১০ ভাগের ৯ ভাগ। তাহলে ৯ লিটার পানি জমিয়ে বরফ করলে তার আয়তন ১০ লিটারের মতো হবে। আমরা জানি যে, লিটার পানির ওজনের মাপ নয়, এটা হলো আয়তনের মাপ। তাহলে বরফের আয়তন বেড়ে যাওয়ায় এর ঘনত্ব দাঁড়াচ্ছে পানির ঘনত্বের ১০ ভাগের ৯ ভাগ মাত্র, যার মানে হলো এর ওজন পানির চেয়ে হাল্কা। এ জন্যই বরফের নয়-দশমাংশ পানিতে তলিয়ে থাকে আর ভাসে এক-দশমাংশ। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বরফের যে অংশ পানির তলায় রয়েছে, অর্থাৎ নয়-দশমাংশ, আর তাতে যে পরিমাণ পানি স্থানচ্যুত হচ্ছে তাহলো পুরো বরফের ওজনের সমান। ফলে বরফের এক-দশমাংশ পানিতে ভেসে থাকছে। ভেসে থাকার এই নিয়মকে বলা হয় আর্কিমিডিসের তত্ত্ব। এ থেকে বোঝা যায়, বিরাট হিমপাহাড়ের বেশিরভাগ অংশ কেন পানিতে ডুবে থাকলেও তার এক-দশমাংশ পানির উপর ভেসে থাকে। খুব ঠাণ্ডা এলাকায় অনেক সময় কলের পানির পাইপ ফেটে যায়। তার কারণ হলো পানি জমে বরফ হওয়ায় তার আয়তন পাইপের আয়তন অপেক্ষায় বেশি হয়। আর তার চাপেই পাইপ ফাটে। ফিনল্যান্ডে পাহাড় ভাঙার কাজে এ নীতি কাজে লাগানো হয়। পাথরের মাঝে একটু খালি জায়গা পেলে সে জায়গায় পানি ভরে রাখা হয়। তারপর যখন বরফ জমার দিন আসে তখন পানির আয়তন বেড়ে প্রচণ্ড চাপ পড়ে চারপাশের পাথরের উপর তা ফাটিয়ে দেয়।