বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কি কি প্রতারণা হচ্ছে?
বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কি কি প্রতারণা হচ্ছে?
বর্তমানে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন প্রতারণা হচ্ছে,ঠকানো হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। মোবাইলে জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। সম্প্রতি মানবজমিন তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশের সাধারণ মোবাইল ফোন গ্রাহকদের থেকে কিছু অসাধু মোবাইল ব্যবহারকারী বিভিন্ন ভাবে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই প্রতিবেদনেই উঠে আসে বিভিন্ন অর্থ জালিয়াতির চিত্র।
দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মানুষকে ঠকানোর এসব কান্ড নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিরেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে মানব জমিন। প্রতিবেদনে জানায়, “কিছু অসাধু ব্যক্তি বা চক্র গ্রামীণফোন বা বাংলালিংকসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের কলসেন্টারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদেরকে ফোন করে বলে যে, তার ব্যবহৃত নম্বরটি লটারিতে লাকি নম্বর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তিনি ১০ লাখ টাকা এমনকি মোটরসাইকেল বা গাড়ি পুরস্কার বা পুরস্কারের বদলে সমপরিমাণ অর্থ বিজয়ী হিসেবে পাবেন। পরে এটাও বলা হয় যে, ওই পুরস্কার পেতে হলে ট্যাক্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন নম্বরে ফ্লেক্সিলোড বা বিকাশ করতে বলা হয়। এরপর প্রতারকচক্র বিভিন্ন ডায়াল কোড বা নম্বর উল্লেখ করে তাতে ডায়াল করতে বলে। ওই কোডে ডায়াল করলেই গ্রাহকের ফোন নাম্বার লক হয়ে যায় এবং সব তথ্য মুছে যায় ফলে ভিক্টিম গ্রাহকদের আর কিছুই করার থাকেনা।”
এভাবে অনেক গ্রাহক বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে নিঃস্ব হচ্ছেন নিয়মিত। এছাড়াও আরো অনেক ভাবে গ্রাহকদের জালিয়াত চক্র প্রতারিত করছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, অনেক সময় গ্রাহকদের নাম্বারে মিথ্যা ফ্লেক্সি লোড কিংবা বিকাশ হওয়ার ম্যাসেজ পাঠায় প্রতারক চক্র। এর পরে তারা তাৎক্ষনিক গ্রাহকদের ফোন করে বলে যে ভুলে আমার নাম্বারে টাকা ঢুকাতে যেয়ে আপনার নাম্বারে টাকা চলে গেছে। এমন টাকাটা ফেরত পাঠাতে অনুরধ করে তারা। এক্ষেত্রে অনেক গ্রাহক ম্যাসেজ দেখেই টাকা লোড করে দেয়। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। আর এসব কাজ করতে জালিয়াত চক্র ব্যবহার করছে কম্পিউটার সফটওয়্যার।
অন্য দিকে অনেকের ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ভিক্টিম কে ফোন করে বলা হয় আমরা মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি থেকে বলছি। আপনার নাম্বারে বিশেষ নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা গেছে ফলে এই নাম্বার ৩০ মিনিট বন্ধ রাখতে হবে। ভিক্টিম যদি তার নাম্বার বন্ধ রাখেন তবে আগেই তার আত্মীয় স্বজনের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাখা হয়, ওই সব নাম্বারে কল দিয়ে বলা হয় ভিক্টিম সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং কিছু টাকা জরুরী এই নাম্বারে বিকাশ করুন। এতে অনেকেই ভয় পেয়ে তাৎক্ষনিক টাকা পাঠিয়ে দেন।
এছাড়া আরো জানা যায়, অনেক ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র বিশেষ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে অপরিচিত ফোন নম্বর দিয়ে মিস কল করে ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ফোন আশা করে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীরা ওই সব ফোন নম্বরে কল করলেই তার ফোনের ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মোবাইল প্রতারণার প্রতিবেদনে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ” প্রতারক চক্র গভীর রাতে বিভিন্ন নম্বরে ফোন করে বিভিন্ন সূরা বা ওয়াজ শুনিয়ে কথা শুরু করে। প্রতারক চক্র কাউকে কিছু না জানানোর শর্তে প্রথমে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং কথার এক পর্যায়ে তুই অনেক ধন-সম্পদের মালিক হবি, তোর কপালে স্বর্ণের খণ্ড বা টাকার কলস রয়েছে ইত্যাদি কথা বলে। প্রতারকচক্র এ ধরনের বিভিন্ন লোভনীয় কথাবার্তা বলে এক সময় টাকা চায়।’ সম্প্রতি বেশ কিছু জিনের বাদশাকে প্রশাসন আটক করেছে বলে জানা গেছে।
এসব জালিয়াতি ছাড়াও অরো অনেক অভিনব কায়দায় জালিয়াতি চলছে মোবাইল ফোন এবং মোবাইলে মানি ট্রাস্ফার ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। তাই গ্রাহকরা এসব স্পর্শ কাতর সমস্যা সমুহ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন। ভুলেও কেউ আপনাকে কিছু সময়ের জন্য ফোন বন্ধ রাখতে বললে রাখবেন না। এছাড়া কেউ যদি বিকাশ কিংবা ফ্লেক্সি ভুল করে আপনাকে পাঠিয়েছে বলে ফিরতি টাকা চায় আপনি আগে নিজের বেলেন্স চেক করুন।
নিরাপদে থাকুন এবং সচেতনতার জন্য সবার সাথে শেয়ার করুন।