বিজ্ঞান ও ইসলামি সৃষ্টিতত্ত্ব হাইড্রোজেন, পানি নাকি কলম?
বিজ্ঞান ও ইসলামি সৃষ্টিতত্ত্ব হাইড্রোজেন, পানি নাকি কলম?
আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে আমরা জানি, মহাবিশ্বের সকল পদার্থ মৌলিক পদার্থগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়। স্কুল জীবনে আমরা শিখেছি, মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১০৯ টি। বর্তমান সময়ে মোট ১১৮টি মৌল চিহ্নিত হয়েছে যার মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়। সাধারণত, একটি মৌলের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট বা একই মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে সমান সংখ্যা প্রোটন থাকে (অর্থাৎ, তাদের প্রত্যেকের পারমাণবিক সংখ্যা একই এবং ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন)। তাই, সাধারণভাবে প্রোটন সংখ্যা দ্বারা কোন মৌল চেনা যায়।
তবে, একই মৌলের ভিন্ন নিউট্রন সংখ্যা বিশিষ্ট পরমাণুও রয়েছে, যাদেরকে আইসোটোপ বলে। একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপে একই সংখ্যক প্রোটন থাকে, নিউট্রন সংখ্যা এবং ভর সংখ্যা বা পারমাণবিক ভরে ভিন্নতা থাকে।
সমগ্র মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি,
যেগুলো তৈরি হয়েছে মহাবিষ্ফোরণ বা বৃহৎ সম্প্রসারণের প্রাথমিক পর্যায়ে
। হাইড্রোজেনে একটি প্রোটন থাকায় এটিই সর্বপ্রথম মৌলিক পদার্থ হিসেবে স্বীকৃত। এর অর্থ হচ্ছে, হাইড্রোজেনই প্রথম পদার্থ।
কিন্তু ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। অর্থাৎ মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের সকল পদার্থ সৃষ্টির পূর্বে পানি তৈরি হয়েছে, হাইড্রোজেন তৈরির আগেই পানি বানানোর চিন্তা খুবই অবৈজ্ঞানিক এবং হাস্যকর কথা। কারণ পানি তৈরিতে হাইড্রোজেন প্রয়োজন হয়। হাইড্রোজেনের আগে পানির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। এবং হাইড্রোজেনের সৃষ্টি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সাথে সাথে। কোরআন বা বাইবেলে বা মহাভারতের এই সকল ভুল তথ্য যে আসলে প্রাচীন দার্শনিক থেলিসের দ্বারা প্রভাবিত, তা বুঝতে খুব সমস্যা হয় না।
প্রাচীনকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং যাকে রীতিমত দর্শনের জনক হিসেবেও ধরা হয়, তার নাম থেলিস বা মাইলেটাসের থেলিস। তার জন্ম অনুমানিক ৬২৪–৬২৫ খ্রিস্টপূর্ব মৃত্যু ৫৬৯-৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব সালে। তিনি ছিলেন প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক, এবং তার মতবাদই সারা পৃথিবীতে একসময় সবচাইতে প্রভাবশালী মতবাদ বলে বিবেচিত হতো। তিনি মনে করতেন, “সবকিছুর আদিমতম উপাদান হচ্ছে পানি”[7] । তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী দার্শনিক এবং তার এই মতবাদও অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় পরবর্তী সময়ের প্রায় সকল দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের ওপরই এই মতবাদ প্রভাব বিস্তার করেছে। সেই প্রভাব আমরা দেখতে পাই বাইবেলের মধ্যে, একইসাথে কোরআনের মধ্যেও।