বিতর্কে দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনি কি করতে বলবেন?
বিতর্কে দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনি কি করতে বলবেন?
ভারতীয় দর্শনে বিতর্কের তিন রকম পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে, যথা বাদ, জল্প ও বিতন্ডা । “বাদ”কে বর্ণনা করা হয়েছে দু’জন সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির মধ্যে সৎ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হিসেবে, যার মূল লক্ষ্য হল সত্যের প্রতিষ্ঠা । “বাদ” শব্দের অর্থ তত্ত্ব বা মতবাদ । বাদে নিযুক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের একজন কোনো একটি তত্ত্ব কিংবা মতের সমর্থনে যুক্তি দেন (এই ব্যক্তিকে বলা হয় “বাদী”) আর অপর ব্যক্তি সেই তত্ত্ব/মতের বিপক্ষে প্রতি-যুক্তি দেন (এই ব্যক্তিকে বলা হয় “প্রতিবাদী”) ।
তবে শুধুমাত্র একপক্ষের মত খণ্ডনই যথেষ্ট নয়, বাদে বিপক্ষকেও নিজের বিপরীত মতকে যুক্তির সাহায্যে প্রতিষ্ঠা করতে হয় । এই প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হতে হবে উপযুক্ত প্রমাণ ও সঠিক যুক্তি, যাতে করে যে সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যাক না কেন তা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করবে । অর্থাৎ বাদে নিজের জিত হওয়াটা লক্ষ্য নয় । আদর্শমতে, বাদে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদ্বয়ের একে-অপরের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকবে এবং উভয়েই উন্মুক্ত মনে অপরপক্ষের যুক্তির যথার্থতা বিশ্লেষণ করবে ।
সংক্ষেপে এই হল বাদ; জল্প আর বিতন্ডা তাহলে কী? বাদের ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল সত্যের প্রতিষ্ঠা, জল্পের ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হল নিজের জিত । কারণ জল্পে প্রতিপক্ষের কেউই “সত্যে” আগ্রহী নয়, তাঁরা উভয়েই নিশ্চিত যে তাঁদের নিজস্ব মতই শ্রেষ্ঠ । জল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য হল অপরপক্ষর মতকে যেনতেনপ্রকারণে সম্পূর্ণ ভুল প্রতিপন্ন করা । বলা বাহুল্য, জল্পের মাধ্যমে বিতর্ক প্রায়শই কুৎসিত রূপ ধারণ করে এবং প্রতিপক্ষের মনোভাব শত্রুতাপূর্ণ হয় ।
বাকি রইলো বিতন্ডা; বিতর্ক পদ্ধতির মধ্যে একে সবচেয়ে নিকৃষ্ট গণ্য করা হয়; কারণ জল্পের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষর অন্ততঃ নিজস্ব একটা মত থাকে কিন্তু বিতন্ডার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের এমন কোনো মতও থাকে না । তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হয় অপরপক্ষের মতকে খণ্ডন করা ও তাকে খেলো করা । বর্তমানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় “ট্রোলিং” ।
বিতর্কে দক্ষতা অর্জনের প্রশ্ন এলে প্রথমেই এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার যে আপনি কোন পন্থা অবলম্বন করছেন । সেইসাথে অনুধাবন করা দরকার যে বিপক্ষই বা কোন পন্থা নিচ্ছে । দুইপক্ষই যদি বাদ পন্থা নিতে আগ্রহী থাকে তবেই গঠনমূলক বিতর্ক সম্ভব । নইলে নয় । তবে কোনোরকম মধ্যস্থতা ব্যতীত বাদের নিয়ম মেনে বিতর্ক করা দক্ষ বিতার্কিকদের জন্যও কঠিন, সাধারণ মানুষের কথা ছেড়েই দিলাম ।
আর যাই হোক, কোরা বা অনুরূপ সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কে দক্ষ হওয়ার সুযোগ সম্ভবত নেই । তবে জল্প বা বিতন্ডার নমুনা চাইলে এর চেয়ে ভালো জায়গা পাবেন না ।